নারায়ণপুর গ্রামের গরিব স্কুল মাস্টার রাম রতন বসু। তিনি সৎ, সহজ, সরল এবং পরিশ্রমী, প্রচুর কষ্ট করে ছেলে রূপমের আর মেয়ে রুপাকে লেখাপড়া শেখাচ্ছেন। ছেলে অষ্টম ও মেয়ে দশম শ্রেণীতে পড়ে। বাবার আদরের মেয়ে রুপা আজ তার দশম শ্রেণীর ফল প্রকাশ হয়েছে। রুপা লেখাপড়ায় খুব একটা ভালো ছিল না, সেজন্য অসফল হওয়ার কারণে রাম রতন বাবু খুব কষ্ট পায় এবং মেয়েকে প্রচন্ড তিরস্কার করেন। বাবার এত বকাবকি সহ্য করতে না পেরে দুঃখে কষ্টে সে বাইরে বেরিয়ে পড়ে।
সকাল গড়িয়ে সন্ধ্যে নামে রাম রতন বাবুর দুশ্চিন্তা শুরু হয়, তিনি ব্যস্ত হয়ে তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করে - হ্যাঁগো রুপু এলো?
রুপার মা চাপা দেবী উত্তর করে- কই নাতো।
মেয়েটা যে কি করে আর ভালো লাগে না। এরপর তার ছেলের রুপম খেলা ছেড়ে বাড়িতে এলে কৌতুহলী বাবা আবার জিজ্ঞেস করেন- হ্যাঁরে তোর দিদিকে দেখেছিস? রুপম অবাক চোখে বাবার দিকে তাকিয়ে বলে- দিদিতো স্বর্ণালী দির বাড়ি, কেনো এখনো বাড়ি ফেরেনি?
বেশ খানিকক্ষণ সময় কাটানোর পর রাম রতন বাবু ছেলেকে বলে- চল্ তো গিয়ে দেখে আসি। সন্ধ্যেবেলা দুজনে বের হল মেয়েকে খোঁজার উদ্দেশ্যে। রাম রতন বাবু ভেবেছিলেন স্বর্ণালী ও রুপা দুজন দুজনের খুব ভালো বন্ধু। তারা অন্ধকার পথ পেরিয়ে পুকুর পাড় ধরে স্বর্ণালীর বাড়ি পৌঁছালো।
শেফালী গিয়ে তিনি হাক ছাড়ে- এই রুপু রুপু রে......
অমনি স্বর্ণালী র মা দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসে এবং বলে- রুপা এখানে আসেনি। তিনি ঝাঝি মেরে বিড়বিড় করে আরো বলতে থাকে ফেল করা মেয়ের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই, এবং মুখের উপরের দরজা বন্ধ করে দেয়। স্বর্ণালীর মায়ের এইসব কথা রাম রতন বাবুর মনে কষ্ট দেয় এবং তার যন্ত্রণায় বুকটা ফেটে যায়। তিনি নিজের মতো করে এলোমেলো ভাবে হাঁটতে শুরু করে এবং বাড়ি পৌঁছোয়। হতাশাগ্রস্ত রাম রতন বাবু বাইরে সিঁড়িতে বসে স্ত্রীকে বলে _ একটু জল দাও। এবং আবার স্ত্রীকে প্রশ্ন করে- মেয়ে এলো? চাপা দেবী দু চোখে জল টলমল করে, তিনি উত্তর দেন - না।
এভাবে রাত কেটে ভোর হয়ে গেল।
রাম রতন বাবু মেয়েকে নতুন করে খোঁজাখুঁজি শুরু করলেন, কিন্তু পেলেন না। অবশেষে তিনি আইনের সাহায্য নিলেন, অনেক খোঁজার পর রুপাকে স্বর্ণালী ও তার মায়ের সাথে শহরের এক হোটেল থেকে উদ্ধার করলো পুলিশ। পুলিশ অবিলম্বে স্বর্ণালীর মা কাকলি দেবীকে গ্রেফতার করলো। বিভিন্ন কথোপকথন ও জিজ্ঞাসাবাদের পর, কাকলি দেবীর বিভিন্ন অসংলগ্ন কথাবার্তা ধরা পড়ে - তিনি বলেন সেদিন বিকেলে পরীক্ষায় ফেল করার পর রাম রতন বাবু যখন বকাবকি করে তখন রুপা আমাদের বাড়িতে আসে। আর তখনই আমি চক্রান্ত করি হাদী,কেবলা, পাগলি রুপাকে বিক্রি করে দেবো। রাতারাতি আমার মালিক অমিতবাবুর সাথে ষড়যন্ত্র করে ফেলি।স্বর্ণালীর মায়ের এসব কথা শুনে পুলিশ কাউন্সিলর ম্যাডাম গিরি কাকলি দেবীকে সপাটে চড় মারে এবং তাকে সংশোধনাগারে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। কিন্তু স্বর্ণালী যে এত বড় প্রতারক সেকথা রাম রতন বাবুর কল্পনাতেও ছিল না, সেজন্য তিনি অত্যন্ত রেগে গিয়ে স্বর্ণালীর মাকে প্রশ্ন করেন- সেদিন যখন আমরা গিয়েছিলাম তখন আপনি মিথ্যা বলেন কেন? স্বর্ণালী র মা হা হা করে হেসে হেসে বলে- বোকা মলটা রে বেচলে আমার ঘরের লক্ষী আসবে। দু লক্ষ টাকা জীবনে চোখে দেখেছিস বোকা হেউড়ো ইস্কুল মাস্টার। এসব কথা শুনে ম্যাডাম গিরি স্বর্ণালীর মাকে রুলের বাড়ি মারতে থাকে যতক্ষণ না সে নিজের অন্যায় স্বীকার করে, অবশেষে ম্যাডাম গিরি র উদ্দেশ্য সফল হয় এবং স্বর্ণালীর মা কাকলি দেবী হাতজোড় করে অন্যায় স্বীকার করে।বিচারে অমিত বাবু ও কাকলি দেবীর সশ্রম কারাদণ্ড হয়।
রাম রতন বাবু মেয়েকে ফিরে পেয়ে আনন্দে জড়িয়ে ধরে। মেয়েকে আবার নতুন করে শিক্ষার সুযোগ করে দেন উচ্চশিক্ষার জন্য।
----------------------
ছবি ঋণ- ইন্টারনেট