Click the image to explore all Offers

ধারাবাহিক উপন্যাস।। সোনালী দিনের উপাখ্যান পর্ব -১৬--------- দেবব্রত ঘোষ মলয়


 সোনালী দিনের উপাখ্যান পর্ব -১৬

 

-------- দেবব্রত ঘোষ মলয়

 

পূর্ব কথন

গ্রামের কিশোর জয়ের সৎকার পর্ব মেটে গ্রামের শ্মশানে। বিষণ্ণ শ্মশানযাত্রী গ্রামবাসীরা, বিষণ্ণ মনন। কেউই মানতে পারে না এই মেধাবী কিশোরের অকালমৃত্যু। এরপর ...

পর্ব -১৬

ধানসিঁড়ি গ্রামের বাজারটি খুব জমজমাট। স্টেশন থেকে  ঢালু হয়ে নেমে এসেছে পিচের রাস্তা। একদিকে ধানসিঁড়ি নদী, আর তার বালির চড়ায় বড় বড় মহাজনী নৌকা। কাঠের বড় বড় গোলা রাস্তার ধারে। সেই সব গোলায় বড়বড় গাছের গুঁড়ি আসে ওইসব নৌকায়। যেখানে গোলাগুলো শেষ হয়, সেখান থেকেই শুরু বাজার। বাজারে সারি সারি জামাকাপড়, বাসনকোসন, মনিহারি, হার্ডওয়্যার, ওষুধের দোকান সহ রকমারি দোকানের সারি। দোকানগুলোর সামনে এই সকালে মাটিতে চট বা প্লাস্টিক পেতে বসেছে বাজার। হরেক রকমের সবজি, মাছ, মুরগি, ফল বিক্রি হচ্ছে সেখানে। গ্রামের বাজারে সবজি খুব তাজা, ঝকঝকে। পুকুরের রুই, কাতলা, মৃগেল ইত্যাদি  মাছের পাশাপাশি, পুঁটি, কই, মরুলা, গাংধারা সহ নানা প্যাকাল মাছ যেমন শোল, মাগুর, ল্যাটা ইত্যাদি। মনন আজ বড়মামার সঙ্গে বাজারে এসেছে। সে লক্ষ্য করে এখানে বেশির ভাগ মাছই জ্যান্ত, কিন্তু ভেটকি, ইলিশ, পমফ্রেট বা চিতল জাতীয় দামী মাছ খুব একটা নেই তাদের শহরের বাজারের মত। বড়মামা কোচানো ধুতি সামলে উবু হয়ে বসে এক মাঝবয়সী বিক্রেতার কাছে বড় রুই মাছ দেখছিলেন। বিক্রেতার নাম শম্ভু। এখানে সবাই সবাইকে চেনে।
শম্ভু একটা আড়াই তিন কেজি ওজনের বড় রুই দুহাতে ধরে বলে - বড়বাবু এইটা নিয়ে যাও, শীতল দীঘির মাছ, কাল রাত্রেই ধরা হয়েছে। 
মামা গমগম গলায় বলেন - তুই যখন বলছিস শম্ভু, দিয়ে দে ওটাই। ভাগ্নের কাছে গ্রামের নাম খারাপ করিস নে।
শম্ভু হেসে বলে - ডাক্তারবাড়িতে তো আজ মাছ দিচ্ছি না, তা মন দাদাবাবু কবে এলে গো?
মননের গ্রামের এই ব্যাপারটা খুবই ভালো লাগে। এখানে সবাই কেমন আত্মীয়ের মত চেনাজানা আর আন্তরিক। সবাই সবার বাড়ির কথা জানে। অবশ্য মাঝে মাঝে তা বিড়ম্বনারও কারণ হয়, এখানে গ্রাম সমাজকে উপেক্ষা করে প্রচলিত ধারার বিরুদ্ধে করা যে কোন আচরণই নিন্দার বিষয়। সে শম্ভুকে শুধায় - কাকা এখানে পমফ্রেট, ভেটকি, চিতল পাওয়া যায় না?
কাকা হেসে বলে - কি যে বল দাদাবাবু। তোমার মামাদের মত কয়েক ঘর বড় মানুষ থাকে সব গ্রামে। তা বাদে বেশির ভাগ মানুষেরই নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। তবে হ্যাঁ, কেউ দুদিন আগে অর্ডার দিলে আমরা এনে দিতে পারি ও সব মাছ।
মাছ কিনে মামা বলেন - চল মনন, একটু চা খেয়ে নি, তারপর সবজি বাজার করব।  
বাপির ওষুধের পাশেই শিতলের চা দোকান। এখন দোকানের দুটো বেঞ্চিই  বাজার করতে আসা গ্রামের ভদ্রজনে ভর্তি। এখানে চায়ের পাশাপাশি গ্রামের সবার খবর আর দেশের নানা খবরও আদাপ্রদান হয়। এখানে খবর কাগজ আসে দেরিতে, প্রায় সাড়ে নয়টা।
মামাকে দেখেই যা ছাকতে ছাকতে শীতল বলে -মামাবাবু আজ ভাগনাকে নিয়ে এসেছেন। বসুন বসুন এক্ষুনি চা দিচ্ছি।
বড় মামা বলেন আজ কি বানিয়েছো জলখাবারে?
হেসে বলে শীতল- আজ স্পেশাল ঘুগনি আর আলুরদম। 
সুবলকাকা তারিয়ে তারিয়ে চায়ে চুমুক দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন - শেতলা, মামাবাবু আর ভাগ্নেকে ঘুগনি দে, আর আমাকেও একপ্লেট।
ওরা বেঞ্চিতে বসার পরেই শিতলের ইশারায় দোকানের ছেলেটি ঘুগনির প্লেট দিয়ে যায়। সঙ্গে আলুমিনিয়ামের চামচ। বেশ ঝাল ঝাল এখানকার ঘুগনি মননের খুব প্রিয়। 
আজ দোকানের আলোচনার বিষয় রুইদাসের ছেলে জয়ের সুইসাইড। এ সব শুনতে শুনতে ঘুগনির স্বাদ বড় বিস্বাদ মনে হয় মননের।
 
ক্রমশঃ

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.