পূর্ব কথন
বড়মামার সঙ্গে ধানসিঁড়ি গ্রামের বাজারে বাজার করতে যায় মনন। দেখে গ্রামে সবার সঙ্গে সবার আত্মিক সম্পর্ক। মামার সঙ্গে শিতলের চা দোকানে ঢোকে সে। শিতলের ঘুগনির মনোরম স্বাদও তার বিস্বাদ মনে হয়, যখন সেখানে উপস্থিত গ্রামবাসীরা জয়ের সুইসাইড নিয়ে আলোচনা শুরু করে। এরপর ...
পর্ব -১৭
বাজার করে যখন বাড়ি ফেরে মনন তখন বেলা সাড়ে দশটা। রোদ বেশ চড়া হয়ে গেছে। ভ্যা রিক্ষ থেকে দুটো পেল্লায় ব্যাগভর্তি বাজার, মাছ মাংস উঠোনে নামিয়ে রেখে উবু হয়ে বসে গামছাটা কাঁধ থেকে নামিয়ে ঘাম মোছে। বড়মামী হেলতে দুলতে উঠোনে নেমেই মামাকে বলে - শেতলার দোকানে আড্ডা দিচ্ছিলে নিশ্চয়। ছেলেটাকে ছেড়ে দিতে পারতে। কখন খাবে জলখাবার।
মনন কিছু বলতে যেতেই ঝিনটি মনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে - তোমার ভাগনা কি আর কিছু না খেয়ে এসেছে। আর আমরা এতক্ষন লুচি আলুরদম নিয়ে আগলে বসে আছি।
বড়মামা বলেন - না রে মা, ওকে একাই খাওয়াবো তাই হয় নাকি। সবার জন্য হরেন মোদকের গরম জিলিপি আর পানতুয়া এনেছি।
সবাই মিলে জমিয়ে আড্ডার সাথে জলখাবার পর্ব মেটে। অনেকক্ষণ থেকেই ঝিনটি ইশারা করছিল মননকে। মনন জানে গ্রামে ঘুরতে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে ঝিনটি। অল্পক্ষণের মধ্যেই দুজনে বেরিয়ে পড়ে।
সেই নির্জন আমবাগানে এসে উপস্থিত হয় দুজনে। ঝিনটির খুব প্রিয় জায়গা সেটি। কিন্তু জয়ের অকালমৃত্যুর পর সে আর আসেনি এখানে।
তারা বসেছে বাগানের একদম ভিতরে একটি বড় আমগাছের নীচে ঘাসের উপর। নানা গল্প চলতে থাকে। মনন খুঁটিয়ে জানতে চায় ঝিনটির বাবার মৃত্যর কথা। সব বলে ঝিনটি। বলতে বলতে তীব্র মনখারাপ হয় তার। বাবার মুখটা ভেসে ওঠে তার মনে। খুব অসহায়, অনাথ বোধ করে সে। মননের দিকে জলভরা চোখে চেয়ে সে বলে - আমি খুবই অপয়া মনদা। সেই ছোটবেলায় মাকে হারালাম। বাবা একা হাতে আগলে রাখত আমাদের সেই বাবাও কিনা ... তুমি আর আমার সাথে মিশো না মনদা, তোমার কোন ক্ষতি হোক এ আমি চাই না।
মনন একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে ঝিনটির দিকে। তারপর বলে - অপয়া বলে কিছু হয় না ঝিনটি। আমারও তো বাবা চলে গেল। তোকে আমি ভুলতে পারি না ঝিনটি। দিনে রাতে তোর মুখটা ভেসে ওঠে আমার মনে। সব কাজে ভুল হয়ে যায়। তোকে আমি কি করে ভুলব।
ঝিনটি এই প্রথম মননের মুখখানি দুহাতে তুলে ধরে। তারপর দু গালে দুটি চুমু খেয়ে বলে - তুমি আমার মিষ্টি সোনা মনদা। তুমি পাশে থাকলে আমি সব দুঃখ, সব কষ্টকে হারিয়ে দেব।
আমবাগানের বড় বড় গাছের ফাঁক দিয়ে রোদের কিরণ এসে পড়ে এই কিশোর কিশোরীর উপর। এভাবেই যুগে যুগে রচিত হয় নব নব প্রেমের কাহিনি। শুধু সবার অলক্ষ্যে আড়াল থেকে মৃদু হাসে কেউ একজন, যাঁর ইশারায় সব বদলে যায় এক নিমেষে, এই পৃথিবীতে।
ক্রমশঃ
=========================================================