নয়ন তারা
অঞ্জনা গোড়িয়া
নয়নতারার হাতে একগুচ্ছ বেলফুল। একবার নাকে শুকছে আর মালা গাঁথছে। বেল ফুলের মালা। অবশ্য মাথায় দেবে বলে না।
আজ "ও "ফিরছে। তাই। খুব ভালো বাসে বেল ফুলের মালা।
নয়নের অলিখিত স্বামী। সমাজ সংসার এখনো জানে না। আজও কাউকে বলতে পারে নি ও বিবাহিত। মন্দিরে সিঁদুর রাঙিয়ে দিয়েছিল চন্দন ।
কোন উপায় ছিল না যে। সে দিন ই তাকে যেতে হবে বিদেশ। ডাক্তারি পড়তে নয়। চিকিৎসা করাতে। নিজের জন্য নয়। বাকদত্মার জন্য। সত্যি ই খুব অবাক লাগছে । এমন আবার হয় নাকি? এক দিকে বাবার পছন্দ করা মেয়ে। অন্য দিকে ছোট বেলার নয়নতারা। খেলার সাথী মনের সাথী। তাকে যে কথা দিয়েছে জীবন সাথী করবে।
চন্দন বাবার মাথায় হাত রেখে কথা দিয়েছিল বাবার বন্ধুর মেয়ে ময়নার সমস্ত দায়িত্ব নেবে।
মনে মনে অবশ্য বলে ছিল ওর ভালো ছেলের সাথে বিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নেবে।
কিন্তু ময়নার বাবা মারা যাওয়ার পর ময়নাও অসুস্থ হয়ে পড়ল। আর কেউ নেই তার দেখাশোনা করার। তাই চন্দনকেই দায়িত্ব নিতে হলো ময়নাকে সুস্থ করার।
তাই এত দূর পাড়ি ময়নাকে নিয়ে।
ময়না জানে না ব্রেন ক্যান্সার নিজের। অপারেশন করতে হবে।
বাবার পছন্দ করা পাত্রকেই মন দিয়েছে সে। চন্দনের ভাবনা কিন্তু অন্য।
ময়না সুস্থ হলেই সব বুঝিয়ে বলবে।
ময়নার অপারেশন। জানতে আর বাকি থাকল না অপারেশনের কারন।
সেদিন ই ময়না ময়না এক মুঠো সিঁদুর হাতে চন্দনের সামনে। ময়নার জেদ, সিঁদুর পরিয়ে দিলে তবেই অপারেশন রুমে যাবে। আর যদি না ফিরতে পারে, তবু স্বামীর দেওয়া সিঁদুর পরে বিদায় নিতে পারবে ময়না। আকাশ ভেঙে পড়ে চন্দনের মাথায়। ময়নাকে বাঁচাতে হবে। তাই পরিয়ে দিল সিঁদুর।
অপারেশন সফল। দুজনে ফিরছে বিদেশ থেকে।
এ দিকে নয়নতারা অপেক্ষায়। অন্য দিকে ময়না। একমাথা সিঁদুর পরে আসছে।
চন্দন তাকিয়ে দেখে বিমান বন্দরে। কিন্তু কোথাও নেই।
তবে কি সব জেনে ফেলেছে?
বিমান বন্দরে ই দাঁড়িয়ে থাকার কথা ছিল নয়নতারার।
চারিদিকে তাকিয়ে দেখল, তার দেখা পেল না।
বাড়ি ফিরে চারিদিকে তাকাতেই বুঝতে পারল কারোর হাতের ছোঁয়া। বিছানায় বেল ফুলের মালা। ফুলের গন্ধে সারা ঘর ভরে গেছে। চন্দন নয়নের ছোঁয়া সারা ঘরময়। তার দেখা দেখা পেল না।
চন্দন জানতে পারল, নয়নতারা নিজে হাতে ফুলশয্যার খাট সাজিয়েছে। নিজের স্বামীর জন্য। মনের মত করে।
নয়ন তারা এখন এক অনাথ আশ্রমের সেবিকা । চন্দনের দেওয়া সিঁদুর সিঁথি তে লুকিয়ে রেখে ই বাকী জীবন টা কাটিয়ে দিল। মহানন্দে।
-------------
ছবি ঋণ- ইন্টারনেট