ছোটগল্প।।রক্ষাকবচ।। সমাজ বসু
0
জানুয়ারী ২৩, ২০২১
রক্ষাকবচ
সমাজ বসু
এইসময় সারা পৃথিবী ভয়ের পেটে সেঁদিয়ে গেলেও গনেশ বাবুর হুঁশ ফিরল না। সালকিয়া অরবিন্দ রোডের প্রায় পঞ্চাশ বছরের বাসিন্দা, গনেশ ঘোষ। লকডাউনের সাড়ে পাঁচ মাসে ব্যাবসাপত্তর শিকেয় উঠলেও, নিজের চল্লিশ বছরের চিরাচরিত অভ্যাসের সঙ্গ ছাড়তে পারেননি। গনেশ বাবুর বাড়ি থেকে বাঁধাঘাটের দূরত্ব একশ গজের কাছাকাছি। বাঁধাঘাটে গঙ্গার জলে বছরের তিনশচৌষট্টি দিনই তাঁর অবগাহন করা চাই। বছরে একটি দিন গঙ্গাস্নান থেকে তাঁকে বিরত থাকতে হয়। মাঘী পূর্ণিমার দিন। ওইদিন শীতলা মায়ের স্নানযাত্রা। সকাল থেকেই ঘাট বন্ধ করে দেওয়া হয়। হাজার হাজার মানুষের ভীড়ে ওইদিন রাস্তায় পা ফেলাই দায়। সালকিয়া অঞ্চলের সব বাড়িতেই অরন্ধন। গনেশ বাবু সকাল সকাল ঘরেই স্নান সেরে নেন। তারপর ঘন্টার পর ঘন্টা বারান্দায় দাঁড়িয়ে মায়ের স্নানযাত্রার বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা উপভোগ করেন।
সারাবছর গনেশ বাবু,এই এলাকার এক লুঙ্গি পরিহিত উদোম শরীরে গামছায় মোড়া বিশেষ পরিচিত এক স্নানযাত্রী। এই লকডাউনেও ব্যাতিক্রম নেই। শুধু স্নানের সময়টা সকাল নটার পরিবর্তে,বেলা সাড়ে এগারোটা। আর একটা বদল তাঁকে আনতে হয়েছে। পরিবার ও প্রশাসনের চাপে পড়ে মাস্কে মুখ ঢেকেই বেরোচ্ছেন। যদিও গামছায় নাকমুখ ঢেকে স্নানে যাওয়া তাঁর বরাবরের রেওয়াজ। তেমাথার মোড়ে অশোক সিনেমা হল থেকে বাঁধাঘাট যাবার রাস্তার দুপাশে লেপতোষকের অজস্র দোকান। সেইসব দোকান থেকে উড়ে আসা তুলোকণার আত্মরক্ষায় নিজেকে সুরক্ষিত রাখেন তিনি। তার ওপর চব্বিশ নম্বর প্রাইভেট বাসগুমটির নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ।
--- গনেশ বাবু,মাস্কটা ত সুন্দর পরেছেন! স্নানে যাওয়ার পথে এক প্রতিবেশীর প্রশ্ন কিছুটা দূর থেকে উড়ে আসে।
--- আর বলবেন না, ভাইঝির পাগলামি। এন নাইন্টিফাইভ না কি সব বলে একে। এত দামী মাস্ক পরতে বড় গায়ে লাগে। ভীষণ সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত গনেশ বাবুর অকপট স্বীকারোক্তি।
--- আর হিসেবনিকেশে কি হবে? যা ভয়াবহ পরিস্থিতি। তাছাড়া এই মাস্কই ত এখন আমাদের রক্ষাকবচ। তাই রক্ষাকবচ যত শক্তপোক্ত হয়, মঙ্গল।
--- অতশত বুঝিনা। ভাইঝির কথা অমান্য করার সাধ্যি আমার নেই। একরকম জোর করেই পরতে হলো।
সালকিয়ার এই তল্লাটখানা পুরোপুরি ভাবে কন্টেনমেন্ট জোনের আওতায়। তাই নির্জন রাস্তায় নেমে মানুষ দুএকটা পরিচিত মুখ খোঁজে। আর তার পেলেই সময়ের খেয়াল থাকে না।
গামছাটা কোমরে বেঁধে জলে নামার মুহূর্তে কে যেন চেঁচিয়ে উঠল,কাকু মাস্ক পরেই চান করবেন নাকি?
ছেলেটার কথায় লজ্জা পেলেন গনেশ বাবু। সত্যিই ত,মাস্কটা মুখেই রয়ে গেছে। দু কান থেকে খুলে রোজকার জায়গায় রেখে দিলেন। ভাঙাচোরা একটা মাটির ঢিবির ওপর।
দুএকটা ডুব দিতে না দিতেই পাড়ে চোখ চলে গেল গনেশ বাবুর। এই যাহ্,মাস্কটার ওপর কিছু চাপা দেওয়া হলো না! মনে মনেই বললেন। আবার এই ভেবে মনকে স্বান্তনাও দিলেন,আজ হাওয়ার নামগন্ধ নেই। তাই উড়ে যাবার ভয়ও নেই। নিশ্চিন্ত মনে গামছা দিয়ে বুক, পিঠ আর পেট বেশ করে ঘষতে শুরু করলেন। তারপর কানদুটো দু হাতের দুই তর্জনীতে ঢেকে তিন চারটে ডুব দিলেন গনেশ বাবু।
স্নানপর্ব শেষ করে ঘাটের সিঁড়ি ভাঙতে শুরু করলেন। নির্জন পাড়ে পা রেখেই তিনি অবাক। বাকরুদ্ধ। এখানেই তো ছিল! উড়ে গেল কোথায়?
চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিলেন। তারপর যা দেখলেন, সেই দৃশ্য তাঁর দু চোখে সর্ষেফুল ছড়িয়ে দিল। কখন যেন একটা কাক ছোঁ মেরে মাস্কটাকে উড়িয়ে নিয়ে গেছে। আধভেজা শরীরে তিনি চোখ তুললেন। ভেজা শরীর থেকে জল চুঁয়ে মাটিতে শুকোবার আগেই তাঁর মনটা শুকিয়ে গেল। একটার জায়গায় চার পাঁচজন এসে হাজির।
তাদের চোখে অপার বিস্ময়। এই এক টুকরো কাপড় মানুষের কোন্ কাজে লাগে? চার পাঁচজোড়া ঠোঁটের দখলে এন নাইন্টিফাইভ। গনেশ বাবুর রক্ষাকবচ। মানুষের এই সময়ের জিয়নকাঠি নিয়ে কালো কুৎসিত কাকগুলো খেলায় একেবারে উন্মত্ত। কোনদিকেই তাদের হুঁশ নেই। সংক্রমণের কোন ভয়ডর নেই। গনেশ বাবু রাগে একখানা ছোট পাথর ছুড়লেন বটে, কিন্তু সেই পাথরের ছায়াটুকুও পৌঁছল না তাদের কাছে। গায় লাগা দূরের কথা। একদিকে ভাইঝিটিকে মুখ দেখানোর লজ্জা,আর একদিকে মাস্ক ছাড়া বাড়িতে যাবার ভয়। এই দুইয়ের যোগফলে তাঁর মনে হল, এই মুহূর্তে যেন তাঁর বস্ত্রহরণ পালা চলছে। তেমাথার মোড়ে পুলিশের কড়া নজরদারি। গামছায় নাকমুখ ঢেকে কি এ যাত্রায় পার পাওয়া যাবে? দেখতে দেখতে এলাকার আরো অনেকেই ঘিরে ধরেছে তাঁর এক খন্ড মুখোশটাকে। দলের দুজন পান্ডাই হবে,তারা এন নাইন্টিফাইভের দখল নিয়ে লড়াই শুরু করে দিয়েছে। রাতের অন্ধকারে ভেড়ি কিংবা এলাকা নিয়ে লড়াইয়ের কথা তিনি শুনেছেন। কিন্তু এ যে দিনের আলোয় কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ। গায়ের জোর খাটিয়ে দুজন মহাবলী দুদিকে টানতে থাকে। দুজনের ভয়ঙ্কর টানাটানিতে একসময় দু টুকরো হয়ে,গাছ থেকে সটান মাটিতে। আর মাটিতে দুই মূর্তিমান সারমেয় দাঁড়িয়ে। গনেশ বাবু বুঝলেন এবার আর এক পালাবদলের খেলা শুরু হবে।
মনে মনে তিনি ভাবলেন, মানুষ আজ কত অসহায়। কি ভয়ানক আশঙ্কায় তাদের দিন কাটছে। অথচ প্রাণীজগতের কোন হেলদোল নেই। মানুষের রক্ষাকবচ নিয়ে তুচ্ছ প্রাণীদের এই মস্করা ত আর সহ্য হয় না। একরাশ লজ্জা, ঘেন্না আর ব্যথায় ডুবে গেলেন তিনি। ভেজা গামছায় নিজের নাক মুখ ঢেকে ভয়ে ভয়ে কোনরকমে বাড়ির পথে পা বাড়ালেন।
----------------------------------
ছবি ঋণ- ইন্টারনেট
সমাজ বসু।।
৫৬এ, মিলন পার্ক।।ডাক--গড়িয়া
কলকাতা--৭০০০৮৪
ফোন--- ৬২৯১৩৭৭৩৮২.
=========================================================
Better Some Tabs. For You
1.
Samsung Galaxy Tab A 10.1 (10.1 inch, RAM 2GB, ROM 32GB, Wi-Fi-Only), Black
Deal Price: Rs. 12,499.00
Extra 10% direct off on SBI Card (20-23 Jan, 2021)
For Details CLICK HERE
Lenovo Tab M10 HD Tablet (10.1 inch, 2GB, 32GB, Wi-Fi Only) Slate Black
Samsung Galaxy Tab A7 (10.4 inch, RAM 3 GB, ROM 32 GB, Wi-Fi-only), Grey
Deal Price: Rs. 16,999.00
Extra 10% direct off on SBI Card (20-23 Jan, 2021)
For Details CLICK HERE
=======================
========================
Tags