অঞ্জনা দেব রায়
"কিগো মাম মাম পড়তে বসেছে?"হুম্ ম, ওকে ঘরের টেবিলে পড়তে বসিয়ে আমি চা করতে এসেছি,
শোনো না আমার একটা লেখা বাকি আছে আমি দরজা বন্ধ করলাম, আমার ঘরে চা টা দিয়ে যেও কেমন । হ্যাঁ হ্যাঁ তোমার আর কি, নাকে তেল দিয়ে সকাল আটটা অবধি ঘুমোবে, তারপর উঠে দরজা বন্ধ করে লিখতে বসে যাবে।
তারপর নিজের সময় মত একটু খেয়ে ঢ্যাঙ ঢ্যাঙ করে বেরিয়ে পড়বে সাহিত্যচর্চার আড্ডা দিতে । কখনো অনুষ্ঠান করতে সারা দিনের জন্য বেরিয়ে পড়ো, সংসার কি করে চলে তার খোঁজ রেখেছো কোনদিন? শুধু তো কিছু টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়েই কর্তব্য শেষ।
চুপ করে রইলো কিছুক্ষন, তারপর দরজা বন্ধ করে লিখতে বসে গেল। অভিজিৎ কেমন যেন দিনকে দিন নিরস ও প্রেমহীন হয়ে যাচ্ছে। একটু আদর সোহাগের কথা বললেই খেঁকিয়ে ওঠে আজকাল। কিছু বলাও যায় না, সামান্য কিছু দরকারের কথা বলতে গেলেই শুনিয়ে দেয়, এই এখন যাও তো আমার অনেক লেখা বাকি আছে। আমার তিনটে উপন্যাস বেরোবে সামনে বুঝতে পারছ।
ইদানিং অবশ্য মাঝে মধ্যে ঘরের দরজা খুলে এসে মামমাম এর পড়াশোনার খোঁজ নিচ্ছে। আজকাল রান্নার খুত না ধরে মাম মাম এর দিকে নজর দিচ্ছে।
আজকাল মাম মাম ও বই খাতা আনার কথা না বলে বন্ধুর বাড়ি থেকে ঘুরে এসে বাবাকে একটা আইফোন কিনে দিতে বললো। বাবা মাম মাম কে বলল তোমার সামনে বোর্ড পরীক্ষা তুমি মন দিয়ে পড়াশোনা করো, ওসব ফোনের কথা পরে ভাবা যাবে। বাড়িতে যা কিছু হতো অভিজিৎ সব সময় বুলার উপর দোষ চাপিয়ে সরে পড়তো।
টিচার এসে গেছে মাম মাম পড়তে বসে পড়ল।
মাম মাম একটু শান্ত প্রকৃতির, একটু কম কথা বলে, আর কেউ কিছু বললেই সব সময় হাসি লেগে থাকে মুখে। টুকাই, কাকুলি, মিষ্টু অনেক বন্ধু, ফোনে বন্ধুদের সাথে গল্প করতে ভালোবাসে। আর মাম মাম ফোন ধরলেই অভিজিতের খুব রাগ হয় আর বকতে থাকে বুলাকে, বলতে থাকে কেন ফোন কিনে দেওয়া হয়েছে। বুলা বলে এখন পড়াশোনায় নেট থেকে অনেক কিছু জানার আছে। এই নিয়ে বুলাও অভিজিতের সঙ্গে কিছুক্ষণ বাক্য বিনিময় চলে। তবুও রাগ পড়তো না অভিজিতের, কিছুক্ষণ আগুনঝরা চোখে তাকিয়ে থাকত বুলার দিকে, তারপর চলে যায় পড়ার ঘরে।
ঘরের কলিং বেল বেজে উঠলো, সুকুমার খবরের কাগজ দিয়ে গেল, বুলা রান্নাঘরে চলে গেল। বুলার হাতের পাঁঠার মাংসের ঝোল অভিজিতের খুব পছন্দ। অভিজিৎ আগে একটু রসিকতা ও প্রেমের গল্প-টল্প করতো তা বুলার ভালোই লাগতো। কিন্তু এখন শুধু লেখার জগত আর ফোন নিয়ে কাটিয়ে দেয়। ফলে বুলা তার মনের দুঃখ চেপে রেখে নিজের জগৎ খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করে। ফোনের সাথে অনেকটা সময় কাটিয়ে দেয় আর গান করে সময় কাটায়।
মাম মাম এর বান্ধবি চুমকি একটা নতুন ফোন কিনে হোয়াটসঅ্যাপে ফোনের ছবি পাঠিয়ে বলল ওর ফোনটা খুব দামী খুব ভালো ছবি ওঠে আর সাউন্ড ও ভালো। তা দেখে মামমাম মায়ের কাছে বলল এই ফোনটাই কিনতে হবে।
দুদিন পরে অভিজিৎ তার পুরনো ফোনের বদলে একটা নতুন দামি ফোন নিয়ে এলো ঘরে। বুলা বলল এটা কি হলো, অভিজিৎ বলল লেখালেখির জন্য দরকার তাই, পুরনোটা ভালো কাজ করছিল না। গুলা কথা না বাড়িয়ে চলে গেল ঘরে।
পরের দিন সকালবেলা চায়ের টেবিলে বুলা অভিজিৎ কে বলল- আর একমাস পরে মামমাম এর জন্মদিন। জন্মদিন কিভাবে সেলিব্রেট করা হবে?
অভিজিৎ বলল- কত খরচা হবে বলবে আমি দিয়ে দেবো, তোমাদের পছন্দমত আয়োজন করো।
বুলা মাম মাম এর বান্ধবী ও তাদের মা এবং পাশাপাশি বুলার বন্ধুদের ইনভাইট করে জিনিসপত্র কিনতে শুরু করে দিল ।
অবশেষে জন্মদিনে সবাই এসে গেল, গান নাচ হইহুল্লোড় চলল। ভালো ভালো খাবার ও খাওয়া হলো। সবাই প্রচুর গিফট ও দিল। কিন্তু বুলার একটা বান্ধবী মিঠু সব সময় বেশ দামি গিফট দেয়। মিঠু এবার একটা আইফোন গিফট দিয়েছে মাম মামকে। সেটা দেখে মাম মাম নাচছে আর বলছে আমার আশা পূরণ হয়ে গেল। ঠিক সেই সময় অভিজিতের ফোনেও একটা ফোন আসলো। ফোনের অপর প্রান্তের গলা শুনে অভিজিত আনন্দে কোন কথা বলতে পারছে না।
বুলা বলল- কি হয়েছে, কি বলছে ,কে ফোন করেছে?
অভিজিৎ তখন বলল- বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়ার জন্য ওকে এবছর সিলেক্ট করা হয়েছে।
এটাও অভিজিতের অনেক দিনের আশা পূরণের খবর এলো সেই ফোনেই।
বুলার ও খুব আনন্দ হল, আর অভিজিতের পুরস্কার পাওয়ার খবরটা আত্মীয়, বন্ধুবান্ধব সবাইকে ফোন করে জানাতে বসে গেল।
----------------
ছবি ঋণ- ইন্টারনেট