বিজ্ঞপ্তি
লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫
নভেম্বর ২১, ২০২৪
" ভূত বারাঙ্গনা "
✍ প্রদীপ দে ~
যাচ্ছিলাম ট্রেনে বেনারস।নিশুতি রাতে টিমটিমে আলোয় বার্থে শুয়ে প্রহর গুনছিলাম - আচমকাই ক্যাচ -ক্যাচ আওয়াজ তুলে বগিটা নড়েচড়ে থেমে গেল। বাইরে থেকে ভেসে এল একটা কলরব!নেমে পড়লাম। শুনলাম এক যুবতী নারী লাইনে কাটা পড়েছে, বিক্ষোভ চলছে। বেশ কয়েকদিন ধরে নাকি এ লাইনে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়ে চলেছে। প্রতিবারেই নাকি মহিলারাই আক্রান্ত।স্টেশন পেরিয়ে রাতকে অবজ্ঞা করে লাইন ধরে এগিয়ে চললাম রেলক্রশিং বরাবর। উদ্দেশ্য রাত্রিযাপনের জন্য হোটেলের সন্ধানে।রেল গেটের সামনেটা অন্ধকারে জমাট বাধা। ভালো করে দেখলে দুজন রক্ষীর দেখা মেলে। এখানে কোন ঝামেলা নেই। প্রশ্ন করার জন্যে এগোতেই এক জটাধারী সাধুর দেখা পেলাম - যে লাইনের পাশেই মলিন কাঁথা বিছিয়ে উপবেশন করে ছিলেন।কৌতূহল চোখে সন্দেহযুক্ত মনে এগিয়ে গেলাম। সাধু বাবাজীর চোখ মুদ্রিত ছিল। উপস্থিতি টের পেয়ে তাকালো -- কেয়া মাংতা বাবু সাব?--- রহেনে কা ঠেক!--- রহেনে কে লিয়ে? আউর শোওনে কে লিয়ে নেহী?--- মতলব?--- লেড়কী লাগেগি? একদম খুব সুরৎ! টাটকা ভি!মাথা ঘুরে গেল কথা শুনে! সাধু বলে কি?রক্ষী বাহিনীরা চলে এল --- এই ইধার কেয়া হো রাহা হ্যায়? ঝামেলা কিউ? ভাগো ইধার সে। নিকালো -নিকালো।সাধু লোটাকম্বল গুটিয়ে উঠে পড়লো। একটা বিরাট ব্যাগ কাঁধে ঝোলালো। আমিও ওর পিছু নিলাম। ও বেশ বুঝতে পারলো। জঙ্গলে প্রবেশের আগে ও আমাকে ইশারায় চলতে বললো --- চল বেটা!আমি থাকতে না পেরে জিজ্ঞাসা করে ফেললাম --- ওহি থলি মে কেয়া হ্যায়?--- লেড়কী! জিন্দা লেড়কী!আমিতো রীতিমতো থ! দুরে কদর্য দেখতে এক শীর্ণকায় লোক এগিয়ে এল। সামনে আসতেই দেখলাম ওর এক চোখ জ্বলজ্বল করছে,আর অন্য চোখ চামড়া ধাকা।সম্ভবত কানা। অন্ধকারেও সব উজ্জ্বল যেন!কানা লোকটি জিজ্ঞাসা করলো --- নয়া লেড়কী মিলা?সাধুর মুখে খুব হাসি --- বহুৎ খুব সুরৎ!আমরা তিনজনে পরপর এগিয়ে চললাম। প্রথমে সাধু পিছনে কানা শীর্ণকায়া ব্যক্তি আর শেষে আমি। ভয়ে ভয়ে চলেছি। কেটে পড়ার ধান্দা! অথচ কৌতূহল ভীষণ ভাবেই আমাকে ঠেলে দিচ্ছে ওদের গতির দিকে।একটা ভাঙা ঘরের সামনে এসে দাঁড়ালো সাধু। টিনের দরজা ঠেলে দিল। ঘর্ঘর শব্দ তুলে দরজা খুলতে লাগলো, অন্ধকার ঘর নিমেষেই এক মায়াবী আলোয় ভরে উঠলো। সাধু ঢুকতেই কানা লোকটি ঢুকলো। আমি বাইরে থেকে আন্দাজ করার চেষ্টায় - ভিতরে রমনী পুরুষের এক মিলিত সুখানুভূতির শব্দ কানে এল। এক পা ভিতরে দিয়েই চমকে উঠলাম --- জীবনেও যা দেখিনি যা ভাবিনি তাই ---- ভিতরে অনেকে গুলো খাটিয়া --- প্রতিটিতেই একটি করে মহিলা আর একটি পুরুষ নগ্ন অবস্থায় মৈথুনরত ---আদিম আনন্দের স্বাদ গ্রহনেই মত্ত --- আমাদের উপস্থিতি ওদেরকে কোন বিচলিত করতে পারলো না।সাধুর ঝুলি থেকে যে মহিলাটি বের হলো, কানা পুরুষটি তাকে খাটিয়ায় নিয়ে যাওয়ার জন্য টানতে লাগলো, আর তখনই আমি চমকে উঠলাম --- দেখলাম সেটা একটা মৃতদেহ, যার মুন্ডুটা নেইআর তাজা রক্তের দাগ তার সারা শরীর জুড়ে।সাধু ডাকলো --- আ বেটা আন্দার আ যা! ফির তুজকো লিয়ে ভি এক লেড়কী মারেংগি।মাথা খুলে গেল --- তার মানে --- ট্রেনে কাটা লাশ!বমি পেল। এক দৌড়ে বাইরে বেড়িয়ে আগাছার জঙ্গল পেড়িয়ে রাস্তায় আসার চেষ্টা করলাম। জনহীন পথে এক নিশুতির কান্না কে ছাপিয়ে তখন এক আদিম সুখের উল্লাস ছড়িয়ে পড়ছে জংগলে। কারা যেন শরীরী কায়দায় সমস্ত দেহ সুখ চেটেপুটে খাচ্ছে। নগ্নতার এক ভয়াল রূপ আনন্দ কে মাপতে চাইছে! বহু প্রতিক্ষিত আকাঙক্ষার যেন পরিসমাপ্তি ঘটছে রতিমিলনের এই তৃপ্তিতে!ভয়ে গলা শুকিয়ে এল, সেই রেলগেটে পৌঁছে। জমাট অন্ধকার যেন খেতে এলো। দূরে একটা ক্ষীণ আলো ক্রমশই বাড়তে থাকলো -- সম্ভবত কোন দূরপাল্লার ট্রেন আসছে -- আওয়াজ হচ্ছে। হঠাৎই চমকে উঠলাম -- দেখি রেললাইনে এক মহিলা বসে আছে। তার পরনের পোশাক এতই ঝলমলে যে অন্ধকারে ও চোখ ঝলসে যায়। ভয়েতে হাত পা আর চলছে না। কিছু করার নেই পিছনে আবার নারী লোলুপদের কান্ড কারখানায় আঁটকে পড়ার ভয়। সামনে যে আবার দূর্ঘটনার আগাম ছবি উপস্থিতি। কি করবো ভাবছি। সামনে কোন রেলরক্ষীদেরও দেখতে পারছি না কেন? ওরা তো এখানেই থাকে! গেলো কোথায়? হাত তুলে ইশারা করতে গেলাম মেয়েটাকে ---সরে যাও! ট্রেন আসছে!চমকে উঠেই হাত নামালাম। দেখি সাধু বাবা আমার সামনে! মুখে হাসি --- আরে বাবুসাব ক্যায়ে চলা আয়া? ডর গিয়া? থোরা রুখিয়ে এই লেড়কী ভি আভি লাশ বনেগা আউর বনেগা স্রিফ আপকে লিয়ে। আপকা ভি এইসা মাফিক একবডি মিলনেকা বহুৎ জরুরী থী। তুরন্ত আপ এই তাজা জানানাকো ভি মিল যায়েগী।ভয়ে আর ঘৃণায় আমার মাথা ঠিক রাখা মুশকিল হয়ে গেল। চকিতেই একটা বড় পাথর তুলতে গেলাম। অন্ধকার কাটাতে পকেট থেকে বার করে গ্যাস লাইটারটা জ্বালাতেই আগুন দপ করে জ্বলে উঠলো --- নিমেষেই সব ফাঁকা হয়ে গেল --- মহিলা আর সাধু কাউকেই দেখতে পেলাম না। সময় নষ্ট না করে প্ল্যাটফর্মের দিকে পা বাড়ালাম।রাতটা ওয়েটিং রুমেই কাটিয়ে দিলাম। বেনারস গামী ট্রেন অনেক আগেই চলে গেছে।পরেরদিন ভোরের আলো ফুঁটতেই বেড়িয়ে পড়লাম। লাইন ধরে গেটের দিকে এগোলাম। কৌতূহল আমাকে টেনে নিয়ে চললো জংগলের ভিতর সেই ঘরে। আলো ভরে গেছিলো। ভয়ে ভয়ে ঘরের দরজায় হাত দিতেই ঘর্ঘর শব্দে খুলে গেল। ভিতরে ভাংগা টিনের আলোয় আলোকিত। জঙ্গলী আগাছায় ভরা। ভালো করে দেখলেই বোঝা যায় এটি একটি মেস ঘর ছিল -- অনেকগুলো পরিত্যক্ত তক্তা বিশিষ্ট। মিনিট খানেক দেখেছি এরই মধ্যে ঘেউঘেউ আওয়াজ তুলে একদল কুকুর ঘরের ভিতর থেকে আমায় তেড়ে এলো। আমি পালাবার পথ পেলাম না। দৌড় লাগালাম। অনেকটা পেরিয়ে এসে পিছু ফিরে দেখি --- তখনও দুটো কুকুর আমার পিছনে তেড়ে আসছে , ঘুরে পড়ে থাকা একটা গাছের মোটা ডাল তুলে আমিও তেড়েপুরে দাঁড়ালাম, ভালো করে দেখলাম--- দুটো কুকুরের মধ্যে একটার গায়ের রং লাল, যার মাথায় লোমগুলো জটাধারী ঝুটির আকার ধারণ করেছে, আর অনটি কালো --- যার একটিই চোখ, অন্য কানা চোখটি চামড়ায় ঢাকা পড়ে ঝুলছে। আমি অবাক চোখে দেখতে থাকলাম, মাথা ঘুরে গেল।-----------------------------------------------------------------
লেখক- প্রদীপ দেবিরাটী আবাসনএল আই জি - ৯এম বি রোডনিমতাকোলকাতা -৭০০০৪৯মোবাইল - ৮১৭২৬৭৬২৬