Click the image to explore all Offers

অণুগল্প ।। দাম্পত্য প্রেম ।। নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত


দাম্পত্য প্রেম 

নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত


প্রাচীন পাকুড় গাছটার গুঁড়িতে বসে আকাশপাতাল ভাবছিলো  কাজল।তাদের জীবনটা যেন যানজটে আটকে পড়া বাস-ট্যাক্সির মতো সহসা থমকে গেছে।এই জট কবে খুলবে সে জানেনা।আজ থেকে এ জেলার প্রায় সব দোকান খুলে যাওয়ার কথা। খুলেছেও অনেকগুলো।সে আশায় ছিল তারাও  তাদের অস্থায়ী দোকান নিয়ে বসতে পারবে।বাজারের কাছে রাস্তার ধার ঘেঁষে ওরা চা ও তেলেভাজা নিয়ে বসে।প্রতিদিন বিকেলে ওরা স্বামী-স্ত্রী মিলে  দোকান চালায়।তেলেভাজাটা বেশ ভালোই বানায় তাপসী। বিক্রিবাটা ভালোই হয়।কাজল প্রধানত চা তৈরি করে।সে দোকান আজ প্রায় দেড়মাস বন্ধ। দোকানটা নিয়ে বসা গেলে আর অন্যের দয়ার দানে দিন গুজরান করতে হত না তাদের। কিন্তু  দোকান বসাতে  গেলে পুলিশ বাঁধা দেয়।ফুটপাতের দোকান নাকি খোলার অনুমতি নেই।লক ডাউন  উঠে না যাওয়া পর্যন্ত দোকান বন্ধই রাখতে হবে তাদের।কথাটা শুনে ডুকরে কেঁদে উঠেছিলো তাপসী। কাজলের চোখও ভিজে উঠেছিল।কিন্তু সে তো পুরুষ মানুষ।অসহায় ক্রোধে মুখ খিস্তি করে সরকারকে এক কিস্তি গালাগাল দিয়ে সে দোকানের  ভার নিয়ে বাড়ির পথ ধরেছিল।
জমানো টাকা কবেই ফুরিয়ে গেছে।সরকারি বেসরকারি  অনুদানে আধপেটা খেয়ে বা না খেয়ে দিন চললেও,রাত কাটতে চায় না।তখন মেয়ের চিন্তা দুই স্বামীস্ত্রীকে পেয়ে বসে।
একটাই সন্তান ওদের।রিংকি। খুব ছোট বেলা থেকেই মেয়েটার লেখাপড়ায় বেশ আগ্রহ।ছেলে নেই তো কী হয়েছে?  মেয়েকেই ওরা ছেলের মতো করে মানুষ করবে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বেশ ভালো ফল করেছে মেয়েটা।
সেই মেয়েই একদিন নার্সিং ট্রেনিংয়ে যাবে বলে বায়না ধরল।ওর সহপাঠিনী আরো কয়েকজন  নাকি  নার্সের ট্রেনিংয়ে  যাচ্ছে। মেয়ের আবদারে ওকে  নার্সিং শিখতে বেঙ্গালুরু যেতে দিতে বাধ্য হয়েছে ওরা। ওদের পাড়ার নারায়ণ বাবুর মেয়েও সেখানে নার্সিং পড়ে।সেই ভরসাতেই  মেয়ের কথায় ওরা মত দিয়েছে।সেখান থেকে তিন-সাড়েতিন বছর পর পাশ করে বেরোলে সরকারি চাকুরি একেবারে পাকা।তার জন্য কোনো নেতাকে ধরাধরি করতে বা খুশি করতে হবেনা।ভবিষ্যতের স্বপ্ন ওদের দু'চোখে রেশমি সুতোয় ঝুলছিল।হঠাৎ এক দুঃস্বপ্ন ---লকডাউন।
 

 

বিকেলে তপন মাস্টারের বাড়িতে টিভির খবর দেখতে গিয়েছিল কাজল।খবর শুনে টলতে টলতে বাড়ি ফিরে মাটির উঁচু বারান্দায় থপ্ করে বসে পড়েছিল সে।
: কী হল ? কী হল তোমার?উদ্বিগ্ন প্রশ্ন তাপসীর। 
: আরো চোদ্দো দিন।মুখেনাকে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে কাজল।
: চোদ্দো দিন! কীসের চোদ্দো দিন?
: লক ডাউন।
:  আরো চোদ্দো দিন! বলে হাঁপাতে হাঁপাতে   বসে পড়ে তাপসীও।ইদানীং তার  শরীরে কীযেন একটা রোগ বাসা বেঁধেছে। সে অল্পতেই হাঁপায়, এমনকি বিনা পরিশ্রমেও।শরীরে ব্যথা ও জ্বরজ্বর ভাব।কিন্তু সে জন্য সে ভাবিত নয়।তার সমস্ত দুশ্চিন্তা কাজলকে ঘিরে।মাত্র দিন দশেক আগে ও পাড়ার শ্যামল শীল গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। লক ডাউনের বাজারে তার সেলুন বন্ধ হয়ে গেছে।অল্প কয়েক দিন আগে পিতৃশ্রাদ্ধ করতে গিয়ে সে একপ্রকার কপর্দকশূন্য হয়ে পড়েছিল।বাজারে কিছু ঋণও হয়েছিল। লক ডাউনে সেলুন বন্ধ থাকায় সে একেবারে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল।কথাটা মনে পড়লেই কাজলের জন্য আশঙ্কায় বুকটা কেঁপে ওঠে তাপসীর।আজ তার  থপ করে বারান্দায় বসে পড়ার মধ্যে  তেমনি একটা অমঙ্গল আশঙ্কা করছিল সে।
সেদিন রাতে পাড়ার ক্লাবের দেয়া চিড়ে গুড় খেয়ে ওরা দুজনই শুয়ে পড়েছিলো।দুশ্চিন্তায় ওদের কারো চোখেই ঘুম আসছিল না।
  ভোরের দিকে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল দুজনেই। কাজলের ঘুম ভাঙতে ভাঙতে বেলা প্রায় ন'টা।তাপসী ঘরে নেই। নিশ্চয়ই শাকপাতা জোগাড় করতে বেরিয়েছে।ভাবল কাজল।সে মুখহাত ধুয়ে ঢকঢক করে একগ্লাস জল খেল।তারপর বারান্দায় বসে তাপসীর অপেক্ষা করতে  লাগল।
এমন সময় ওর সব অনুমান মিথ্যে প্রমাণ করে একটা জিপ এসে দাঁড়াল ওদের বাড়ির সামনে।
ওদের মতো হত দরিদ্রের বাড়িতে জিপ আসায় বেশ অবাকই হয়েছিল কাজল ।জিপে দুজন------একজন সিভিক পুলিশ, অন্যজন স্বাস্থ্যকর্মী।দুজনই কাজলের সামান্য পরিচিত। 
: চলুন দাদা।
:কোথায়?আশঙ্কিত কাজলের প্রশ্ন।
:স্বাস্থ্যকেন্দ্রে,মানে হাসপাতালে।
:কেন?হাসপাতালে কেন?
:আরে,আপনার গিন্নি সেখানে আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন।
:কেন কী হয়েছে তাপসীর?কাজলের আতঙ্কিত প্রশ্ন।
: আরে,চলুন না! গেলেই দেখতে পাবেন।
সকাল থেকে পেটে দানাপানি কিছু পড়ে নি।।অভাবের তাড়নায় বউ কিছু করে বসল কিনা সেই আশঙ্কায় ও শশব্যস্ত হয়ে জিপে গিয়ে বসল।
জিপ এসে যেখানে থামল সেটা কোনো হাসপাতাল নয়।একটা স্কুলবাড়ি।কোয়ারান্টিন সেন্টার। কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই জানালা দিয়ে চোখে পড়লো তাপসী একটা খাটিয়ায় নিশ্চিন্ত বসে আছে। অনুমতি নিয়ে কোয়ারান্টিনে প্রবেশ করলো সে।
: তুমি এখানে!
: হ্যাঁ গো।আমার জ্বর,সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট,  গায়ে ব্যথা শুনেই ডাক্তারবাবু তড়িঘড়ি এখানে পাঠিয়ে দিলেন।আর তোমাকেও চোদ্দো দিন এখানে থাকার হুকুম জারি করে দিলেন।দুহপ্তা দুবেলা পেটপুরে খাওয়ার ব্যবস্থা তো হোলো,কী বল?
কাজল তো হতবাক।
******************************************
Sender :
Nripendranath Mahanta 
Vill. & Post-HEMTABAD 
District -Uttar Dinajpur PIN-733130 
Mobile No.-8918861003
**************************************

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.