মিষ্টি প্রেমের গল্প
অঞ্জনা দেব রায়
জলি তোর মুখটা এত মিষ্টি আর ফিগারটা ও দুর্দান্ত ,তাই কলেজের সব হ্যান্ডসাম ছেলেরা তোর সাথে কথা বলার জন্য পাগল । অথচ তুই কারোর দিকেই তাকাস না এমনকি কাউকেই পাত্তাও দিস না । কেন বলতে পারিস ? কলেজের সব বন্ধুরা বলাবলি করে যে তুই এমন একটা মেয়ে শুধু কলেজ আর বাড়ি এই তোর জগৎ । আমাকে কিংবা অন্যদের দেখ সবাই একটু আধটু প্রেম করছি ।তুই অবশ্য এসবের খোঁজ রাখিস না । প্রনয় তো আমার সাথে কথা বলতে পারলে আর আমাকে কিছু খাওয়াতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করে । বুঝলি জলি তাই বলছি কলেজ জীবনে একটা আধটা প্রেম সবাই করে । অথচ , তুই শুধু পড়া , এ ছাড়া যেন তোর কোনো জীবন নেই । কি করে পারিস একটু বলবি ? তবে আমি কিছুদিন ধরে দেখছি ফিজিক্সের যে নতুন প্রফেসার এসেছে উনি ক্লাসের মাঝে মাঝেই তোর দিকে তাকায় বারবার ।আর প্রাকটিকাল ক্লাসের সময় তোকে বোঝানোর জন্য শুধু তোর পাশে ঘুর ঘুর করে । মনে হচ্ছে তোর প্রেমে হাবুডুবু খাছে । আর তোর সেদিকে কোনো খেয়াল নেই । আরে বাবা একটা প্রেম করে দেখ ভাল লাগবে । বাবলির কথায় জলি কোনো গ্রাহ্য না করেই বললো , " আমার প্রেম নিয়ে তোর এখন ভাবার দরকার নেই , এখন তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে বাড়ি চল ।" জলিদের বাড়ি থেকে কলেজ একঘণ্টার পথ । জলি কখনো হেঁটে বাড়ি যায় ,কখনো বাসে বাড়ি যায় । রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাবলি গান ধরল
" শোনো গো দক্ষিণ হাওয়া প্রেম করেছি আমি
লেগেছে চোখেতে নেশা দিক ভুলেছি আমি " ।
জলি বাবলিকে একটা চড় মেরে বলল , " অনেক প্রেমের গান হয়েছে তোর , এবার চল বাবলি মা চিন্তা করবে ।"
কিছুক্ষণ হাঁটার পর বাবলি চলে গেল ওর বাড়ির দিকে । জলি একাই হাটছিল কেননা ওর বাড়িটা একটু দূরে। হঠাৎ ওর সামনে একটা গাড়ি থেকে ফিজিক্সের নতুন প্রফেসার আদিত্য রায় এসে দাঁড়াল। জলি একটু ভয় পেয়ে গেল কিন্তু একটু হেসে এগিয়ে যেতে লাগলো । সঙ্গে সঙ্গে প্রফেসার বলল " আমি তোমায় একটা কথা বলব চলো গাড়িতে ওঠো বাড়িতে ছেড়ে দিচ্ছি । " জলি গাড়িতে উঠতে চায় নি , তখন প্রফেসার আদিত্য রায় বলল, " তোমার বাবাকে অনেক আগে থেকেই আমি চিনি । উনি একজন খুব ভাল শিক্ষক । ভয় নেই উঠে পড় " । জলি আর কোন আপত্তি না করে গাড়িতে উঠে বসে পড়ে । প্রফেসার সেদিন আর কোন কথা বলে নি । জলিকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে বলল 'আজ যাই কথাটা আরেকদিন বলব। '
জলি পরের দিন কলেজে গিয়ে বাবলিকে বললে বাবলি সঙ্গে সঙ্গে প্রেমের গান শুরু করে দিল । সেদিনের পর থেকে ক্লাসে আদিত্য রায় জলির দিকে এমন ভাবে তাকায় তাতে জলি খুব লজ্জবোধ করে । পরদিন জলি ও বাবলি কলেজ থেকে বাড়ি ফিরবে বলে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ছিল । হঠাৎই ওদের সামনে আদিত্য রায়ের গাড়ি এসে দাঁড়ায় । সঙ্গে সঙ্গে বাবলি জলিকে জোরে চিমটি কেটে বলে "দেখেছিস তোর প্রেমে একেবারে হাবুডুবু খাচ্ছে প্রফেসার মশাই ।" প্রফেসার আদিত্য ওদের দুজনকে উঠে আসতে বলল গাড়িতে । বাবলিকে ওর বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে জলিকে সঙ্গে নিয়ে আদিত্য বাড়িতে যাবার সময় বলল , " তোমাকে আমার খুব পচ্ছন্দ , তোমাকে আমি বিয়ে করতে চাই ।" তুমি যদি রাজি থাকো তাহলে বাড়িতে বলবো তোমার বাবা মায়ের সাথে কথা বলবার জন্য । অবশ্য এখনই নয় । তোমার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট হবার পর । " এইভাবে হঠাৎ করে কেউ বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারে বলে জলির জানা ছিল না । কিন্তু প্রফেসার আদিত্য রায়ের আবির্ভাব ওর জীবনে সবকিছুই ওলট পালট করে দিল । এটা ভালবাসা নাকি ভালোলাগা ? জলি দরদর করে ঘামছিল । জলির মনে আজ এক অদ্ভুত ভাললাগা বোধ হচ্ছে । আগে কখনও এরকম হয় নি । তাহলে কি ও নিজেও আদিত্যের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছে ? আদিত্য ওর নরম হাতটা নিজের হাতে নিয়ে ফিসফিস করে বললো , " ভালবাসি তোমাকে । সারা জীবন আমার করে রাখতে চাই । " জলির মুখে কোনো উত্তর নেই , ভালোবাসার স্পর্শে ও তখন বিহ্বল । জলির তখন বাবলির গানের কথাগুলো মনে পড়ছে—
" শোনো গো দক্ষিণ হাওয়া প্রেম করেছি আমি
লেগেছে চোখেতে নেশা দিগ ভুলেছি আমি ।"
-----------------------------
তারিখ -১২/২/২১
ঠিকানা --- ৫৫৩ পি মজুমদার রোড
কলকাতা – ৭৮