Click the image to explore all Offers

গল্প ।। প্রেম, পরকীয়া ও পোক্ত নাইলন দড়ি ।। চন্দন মিত্র




—টেবিলের উপর যে টাকার বান্ডিলটা ছিল সেটা কোথায়? তুমি কি তুলে রেখেছ?

শিবানী সোফায় আধশোয়া অবস্থায় তার দীর্ঘ প্রযত্নলালিত নখগুলিতে নেলপালিশ লাগাচ্ছিল l সে কোনো উত্তরই দিল না l 

—কি হল শিবানী শুনতে পাওনি ? টাকাগুলো কোথায় গেল ? সমরের গলা এবার অনেকটা চড়া l

—টাকাটা আমি তরুণদাকে দিয়েছি।
বামহাতের কড়ে আঙুলের সূচালো নখটিতে যত্ন সহকারে লাল রং লাগাতে লাগাতে শিবানী নির্বিকারভাবে উত্তর দেয় ।

—তুমি তো জানো আজ বাড়িতে বিশ্বকর্মাপূজা । একটু পরে দলে দলে লেবাররা আসবে তাদের হাতে টাকা তুলে দিতে হবে। আর তুমি কিনা অতগুলো টাকা তরুণকে দিয়ে দিলে? 

—অতোগুলো টাকা মানে, মাত্র দেড় লাখ ! 

—মাত্র দেড় লাখ? তুমি যেন রাজার বাড়ির মেয়ে। তা টাকাটা তুমি তরুণকে দিতে গেলে কেন? তুমি জানতে না আজকে লেবার পেমেন্টের দিন।

—তরুণদা একটা নতুন টেন্ডার পেয়েছে অনেক টাকার দরকার। তাছাড়া তরুণদা তো তোমার বন্ধু। তুমিই তো আমাকে তরুণদার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলে ! বিপদের দিনে তাকে আমি সাহায্য করেছি, এতে এত রেগে যাওয়ার কী আছে ?  

—দিয়েছিলাম, ভেবেছিলাম তোমার পড়াশোনার সুবিধা হবে। 

—সুবিধাই হয়েছে।  তরুণদা না-থাকলে আমার মাস্টার ডিগ্রিটাই করা হত না।  ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি করে দেওয়া, হস্টেল দেখে দেওয়া সব তো তরুণদাই করে দিয়েছে।  তরুণদা তোমার মতো একটা আনকালচার্ড স্টুপিড রাজমিস্ত্রি নয়, রীতিমতো পাশ করা ইন্জিনিয়ার।  তুমি তো আমাকে প্রেমের ছলনায় ভুলিয়ে প্রায় শেষ করেই দিয়েছিলে। ভাগ্যিস তরুণদা ছিল। 

—মিথ্যা কথা বোলো না।  তোমাদের পারিবারিক বিপদের দিনে আমি পাশে দাড়াতে চেয়েছিলাম মাত্র। তোমার পড়াশোনার দায়িত্ব যদি এই মূর্খ রাজমিস্ত্রি সেদিন না-নিত তাহলে আজকে তোমার এই বিদ্যার বড়াই কোথায় থাকত? আর মনে করে দ্যাখো ভালোবাসার কথা তুমিই বলেছিলে, আমি নয়।  আমি বরং তোমাকে সেদিন ফিরিয়ে দিয়েছিলাম।  তুমি কাঁদতে কাঁদতে আমার পায়ে আছড়ে পড়ে বলোনি, তোমার জন্য আমি জীবনটাও দিয়ে দিতে পারি ; পড়াশোনা তো সামান্য ব্যাপার! আমি কথা দিচ্ছি পড়াশোনার বিষয়টা কখনো আমাদের সম্পর্কের পথে বাধা হয়ে উঠবে না । সেকথা কি তুমি ভুলে গেলে? আর এখন তুমি তরুণের সঙ্গে আমার তুলনা টানতে শুরু করলে! কী কুক্ষণে যে আমি তরুণের সঙ্গে তোমার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম।  তার পরামর্শেই তুমি হস্টেলে থেকে এম এ পড়ার বায়না ধরলে। অথচ হস্টেলে থাকার কোনো দরকারই ছিল না।  শ্যামলদার মেয়েও তো তোমার সঙ্গে পরীক্ষা দিল। সে তো শুধু পরীক্ষার দিনগুলিতে যেত। এখন আমি সব জানি ওটা হস্টেল ছিল না ছিল হোটেল।  তোমাদের ফস্টিনস্টির খবর আজ আর কারও জানতে বাকি নেই। 

—জেনে যখন ফেলেছ, তখন আর রাখঢাক করে লাভ নেই ! শোনো আমি তরুণদাকে ভালোবাসি।  তরুণদাকে ছাড়া আমি বাঁচব না । এ এক অন্য প্রেম, এর নাম পরকীয়া। এসব বোঝার মতো বুদ্ধি তোমার ঘটে নেই।  আর একটা কথা ভালো করে শুনে রাখো, তরুণদা যখন মনে করবে তখন আমার কাছে আসবে কেউ কিছু করতে পারবে না।  পরকীয়া এখন আইনস্বীকৃত ব্যাপার।

সমর মূর্খ ও মুখচোরা। এতগুলো কথার অভিঘাতে সে আমূল নড়ে ওঠে। টলমল করতে করতে সে প্রতুলের দোকানে পৌছে যায। 

—ভাই আমাকে একগোছা ভালো নাইলন দড়ি দাও।

—দাদা এত সকাল সকাল নাইলন দড়ি দিয়ে কী করবেন? 

—আর বোলো না ভাই, তোমার ভাইপোর জন্যে একটা দোলা কিনেছি ... 

—সমরদা, সুমন তো তোমার শ্বশুরবাড়িতে থাকে। 

—ভাবছি এবার আমার কাছে এনে রাখব ... 

আরও কীসব বিড়বিড় করতে করতে সমর দড়ির দাম মিটিয়ে দেয় । তারপর কী একটা গানের সুর ভাঁজতে ভাঁজতে বাড়ির দিকে এগিয়ে যায়।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.