প্রেমেরগল্প।। রোজ ডে ।। রবীন বসু
নতুন অফিসে আজ জয়েন করল সুবিমল l চাকরি পাওয়া থেকে সে নর্থবেঙ্গলে ছিল l বার বছর পর এই প্রথম কলকাতায় এল ডিপিও হয়ে l ডিস্ট্রিক্ট প্রজেক্ট অফিসার l এর মধ্যে মা মারা গেছেন l বাবা তো চাকরি পাওয়ার আগেই l বদলে গেছে কলকাতা অনেক l বন্ধু যারা ছিল তারা সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে l কত শপিং মল, বাইপাস, অ্যাপ্রোচ রোড, নিউ টাউন, ইকো পার্ক l সময় কত দ্রুত হাঁটছে l শুধু সুবিমল যেন সেই এক জায়গায় দাঁড়িয়ে l চশমা-পরা দুটো চোখ, তাঁতের শাড়ি পরণে সেই লম্বা ছিপছিপে কলেজ জীবনের স্মৃতি। দূরের নক্ষত্র হলেও জ্বল জ্বল করছে এখনও l
নিজের চেম্বারে ঢুকতে গিয়ে সুবিমল দেখে আগের নেমপ্লেটটা এখনও সরানো হয়নি l মিসেস স্বাতী নন্দী l আগের ডিপিও l কিন্তু নাম পদবী সবই তো এক । ভাবল, এতে অবাক হবার কী আছে! পৃথিবীতে কত মানুষ, কত সব পদবী, মিলে তো যেতেই পারে !
তখন সবে কলকাতার পার্কস্ট্রিটে আর্চিজ গ্যালারি হয়েছে l কলেজে কলেজে ছেলেমেয়েদের মধ্যে ভ্যালেনটাইন ডে চালু হয়েছে l আর তার আগে এসেছে রোজ প্রপোজ চকোলেট টেডি প্রমিস কিস হাগ ডে l এতগুলো স্তর পেরিয়ে তবে ভ্যালেনটাইন ডে l বন্ধুরা তাতাল l যদি মনে ধরে তো বলে ফ্যাল্। এই সুযোগ, গোলাপ দিয়ে শুরু কর্ l
নিউ মার্কেট থেকে টকটকে লাল গোলাপ কেনা হল l আর্চিজ গ্যালারি থেকে কার্ড l সাহস সঞ্চয় করে হোস্টেল গেটে যাওয়াও হল, কিন্তু দেওয়া আর হল না l অসুস্থ হয়ে স্বাতী তখন বাড়ি চলে গেছে।
সুবিমল চেম্বারে ঢুকে দেখে, বড় গোল টেবিলটার উপর একটা লাল গোলাপের তাজা বোকে l পাশে স্টিকার "হ্যাপি রোজ ডে" l মিস নন্দী ঢুকলেন চেম্বারে l সুবিমল দেখল, সেই তাঁতের শাড়ি, চশমা-পরা চোখ, রোজ ডে-র গোলাপ যাকে দিতে পারেনি, সেই মেয়ে l তারই অপেক্ষার স্বাতী l
--বসুন মিঃ বসাক, এবার আপনাকে চার্জ বোঝাই। কাল তো আমাকে নর্থবেঙ্গলের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিতে হবে l
—সে তো হবে l কিন্তু এই গোলাপ, রোজ ডে এসব কার জন্য স্বাতী?
হাসছে স্বাতী l —যদি বলি, আপনার জন্য l সেদিন তো গিয়েও দিতে পারেন নি, তাই আজ আমিই আপনাকে দিলাম l
—কিন্তু জান তো, রোজ ডে-র পর কী ডে?
—জানি তো প্রমিস ডে l
টেবিলের লাল গোলাপগুলো তখন বোধহয় আরও বেশি লাল হয়ে উঠল l
————
শব্দ সংখ্যা : ৩৬০
রবীন বসু
১৮৯/৯, কসবা রোড, কলকাতা-৭০০ ০৪২,
ফোন : 9433552421 হোয়াটসঅ্যাপ : ৮০১৭১৩৫৪৮৫
আন্তরিক ধন্যবাদ 🙏 "কথাকাহিনী"
উত্তরমুছুন