Click the image to explore all Offers

প্রেম বিষয়ক গল্প।।মুক্তো ।। অনিন্দ্য পাল

 



'এই দেবী, ওই দেখ কে আসছে! ' পিঠে নাজমার খোঁচা খেয়ে কাচের কোলাপসিবল দরজার দিকে তাকালো স্নিগ্ধা। ওহ, এতো সেই খদ্দের। নিয়ম করে প্রতি মাসে দশ তারিখে আসে। গত ছ-মাস এই রুটিন চলার ফলে খদ্দেরটিও যেমন তাদের চেনা হয়ে গেছে, তেমনি তারা এই মাসিক খরিদ্দারটাকে নিয়ে নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি ও করে। যেমন নাজমা বলেছিল, ' স্নিগ্ধা, এ বোধ হয় প্রতি মাসে নতুন কাউকে প্রোপোজ করে, একটা মুক্তোর মালা দিয়ে ' -- হেসে উঠেছিল সবাই। 
সেই মাসিক খরিদ্দার ততক্ষণে কাচের দরজা ঠেলে ভিতরে চলে এসেছে। দরজার পাশে রাখা স্প্রেয়ার থেকে স্যানিটাইজার নিয়ে হাতে মাখতে মাখতে বলল, 
-- " কেমন আছেন সবাই মুখে মাস্ক আর হাতে স্যানিটাইজার নিয়ে? " 
-- ওই চলছে আর কি! স্নিগ্ধা একটু তেরছা উত্তর দেয়। 
স্নিগ্ধার মনের মধ্যে একটা কৌতুহল উঁকি দিয়ে যায়। কেন এই মানুষটা প্রতি মাসে একটা করে মুক্তোর মালা কেনে? রহস্যটা কী? কিন্তু কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারে না, কেমন একটা দ্বিধা তাকে আটকে দেয়।  
কিন্তু নাজমা হঠাৎ প্রশ্নটা করেই ফেলে। 
 
-- স্যার, কিছু মনে করবেন না-- এটা শুধুমাত্র কৌতুহল। আমাদের খুব জানতে ইচ্ছা করে আপনি প্রতি মাসে এই নির্দিষ্ট দিনে কেন একটা করে মুক্তোর মালা কেনেন? 
 
স্নিগ্ধা রাগত চোখে নাজমার দিকে তাকালেও ততক্ষণে নাজমা যা বলার বলে ফেলেছে। স্নিগ্ধার মনের ভিতরের দ্বন্দ্ব আর বাইরের অস্বস্তি তার অসম্ভব সুন্দর লালচে চোয়াল দুটোকে আরো লাল করে দিল। সে সো-কেসের কাচের উপর সাঁটা একটা রঙিন স্টিকার ডিজাইনার পালিশে সাজানো নখ দিয়ে টেনে তুলতে লাগলো। 
মাসিক খরিদ্দার- এর মুখ চোখ ঠিক কেমন হল সেটা জানা গেল না, কারণ তিনি তখনও মাস্ক দিয়ে মুখটা  ঢেকেই রেখেছেন। 
দোকানের ভিতরে কয়েক মুহুর্ত সব চুপচাপ। শুধু ওয়াল-মাউন্ট পাখাটা একটা ছন্দোবদ্ধ শব্দ করে চলছে। 
নিস্তব্ধতা ভাঙলো মাসিক খরিদ্দারের গলার আওয়াজে। একটু জড়ানো কিন্তু বেশ পুরুষালী স্বরে সে বলতে লাগলো, 
-- একদিন যে এই প্রশ্ন উঠবে তা আমি জানতাম। আর সেটাই আমার ভয়ও ছিল আবার সেটাই ছিল আশা। 
     একটু থেমে, হঠাৎ মুখ থেকে মাস্কটা সরিয়ে দিল সেই খরিদ্দার। তারপর আবার বলতে লাগলো, 
--- উত্তর তো দিতেই হবে। মাস্কের আড়ালে লুকিয়ে থাকা মুখটা খুব সুন্দর না হলেও বেশ চোখ টানে তার মোটা ভ্রু আর চকচকে দু'টো চোখ। সেই চোখ দুটোতে একটা মোলায়েম স্রোত খেলে গেল হঠাৎ, তারপর সে আবার বলতে লাগলো, 
-- প্রায় মাস ছয়েক আগে এক বন্ধুর বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে ছিলাম। সেখানে কনে পক্ষের এক মেয়েকে দেখে আমার মনে হয়েছিল আমার আগামী জীবনটা তার হাতে সঁপে দিতে পারলে আমি সবচেয়ে সুখী হই। কিন্তু সেদিন সেকথা তাকে বলতে পারিনি। পরে খোঁজ  নিয়ে তাকে ... একটু থেমে সেই মাসিক খরিদ্দার বলতে শুরু করল, 
-- সেই দিনটা ছিল মাসের দশ তারিখ। আমি তাই প্রতি মাসে ওই তারিখে একটা করে মুক্তোর মালা কিনে তাকে দেখে আসি, দিতে পারি না, আজও বলতে পারি নি তো। পারবো কিনা তাও জানি না। তবে এই প্রশ্ন উঠবে তা আমি জানতাম। 
এতক্ষণ নাজমা আর স্নিগ্ধা নিশ্চুপ হয়ে শুনছিল। কেন কে জানে স্নিগ্ধার বুকের গভীর থেকে একটা ভেজা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল। নাজমা হঠাৎ সপ্রতিভ হয়ে উঠলো, 
-- দারুণ রোমান্টিক তো আপনার লাভ স্টোরি! তা সেই সৌভাগ্যবতীটিকে জানান এবার। আর না হলে আমাদের বলুন, কথা বলে দেখছি। একটু দুষ্টুমি ভরা হাসিতে খিলখিলিয়ে উঠলো নাজমা। 
স্নিগ্ধা ততক্ষণে কয়েকটা নতুন আসা মুক্তোর মালা সাজিয়ে দিতে লাগলো সো-কেসের উপরের কাচের সমতলে। সাজাতে সাজাতে সে বললো, 
--তা সেই মানুষটার জন্য আজ কোনটা নেবেন দেখুন। 
-- আজ না হয় আপনিই পছন্দ করে দিন। 
এ কথায় স্নিগ্ধা বড় বড় আয়ত চোখ তুলে সেই মাসিক খরিদ্দারের দিকে তাকালো। তারপর আবার চোখ নামিয়ে একটা সুন্দর গোলাপি মুক্তোর মালা নিয়ে নাড়া চাড়া করতে লাগলো। 
-- তাহলে ওটাই দিন। 
স্নিগ্ধা কিছু বলার আগেই নাজমা এবার জোর দিয়ে বলে উঠলো, 
-- আপনি সেই মনের মানুষটার ঠিকানাটা বলুন তো দেখি, আমরা সেখানে এটাকে পাঠিয়ে দেব আপনার নাম করে। আপনার নামটাও বলুন। 
স্নিগ্ধা এবার একটু ছদ্মরাগ দেখিয়ে বকে দিল নাজমাকে। 
-- তুই না, একটু বেশী বেশী। কেন উনি বলবেন? 
-- না না বলবেন, বলবেন। 
নাজমা নাছোড়। 
এতক্ষণ কোন কথা বলে নি সেই মাসিক খরিদ্দার। 
এবার সে একটু বিষণ্ণ গলায় ধীরে ধীরে বলে উঠলো, 
-- জানি বলতে আমাকে হবেই। দিনের পর দিন মনের উপর পাথরের মত চেপে বসছে এই অনুভূতি ... জানি একদিন আমাকে এই লুকোচুরি খেলাটা শেষ করতেই হবে, সেটা তবে আজকেই হোক। 
-- ওয়াও! খুব সুন্দর একটা গল্প শুনবো মনে হচ্ছে। 
নাজমা যেন নেচে ওঠে। আড় চোখে স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বলে, 
-- একটু মনোযোগ দাও মা! 
স্নিগ্ধা মুখটা নীচু করেই বললো, তুই শোন না, আমাকে টানছিস কেন? 
নাজমা এবার একটা ছোট্ট ঠেলা দিয়ে বললো, 
-- তুই না বড্ড কাটখোট্টা হয়ে যাচ্ছিস দিনকে দিন! 
পাতলা লাল ঠোঁট দুটো একটু অদ্ভুত ভঙ্গিমায় বেঁকিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো নাজমা। তার কথার প্রতিক্রিয়া কী হল তা বোঝা গেল না, কারণ স্নিগ্ধা আবার পিছন ফিরে দেওয়ালের সোকেসে রাখা একটা মুক্তোর সেট পেড়ে আনতে গেল। এই দোকানে এটাই বর্তমানে সবচেয়ে সুন্দর এবং দামী মালা। তার নিজেরও সেটটা খুব পছন্দের। কিন্তু সেটটা কেনার মত সামর্থ্য তার নেই। যদি এই মাসিক খরিদ্দারের পছন্দ হয়, সে কিনলে তাদেরও একটা ইনসেন্টিভ থাকবে। 
স্নিগ্ধা মালাটা নামিয়ে একটা কাপড় দিয়ে মুছে ফিরে আবার সেই খরিদ্দারের কাছে ফিরে এসে অবাক হয়ে দেখলো, সেখানে কেউ নেই। নাজমা একটা খুব সুন্দর দেখতে কাগজের চতুষ্কোণ বাক্স তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো, এই নে এটা তোকে দিয়ে গেল। বললো এর মধ্যে একটা গল্প আছে। সেই গল্পটাই নাকি আমাদের প্রশ্নের উত্তর। 
নাজমার মুখে একটা ধাক্কার ছাপ যতটা স্পষ্ট ছিল, স্নিগ্ধার চোখে ততটাই লজ্জা মেশানো হতচকিত অস্বস্তি খেলা করে গেল। একটু থমকে দাঁড়িয়ে হাতের সেটটা নাজমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে সেই বাক্সটা তুলে নিল হাতে। 
একটা সুন্দর রঙচঙে নক্সাদার কাগজে মোড়া বাক্সটা খুলতে গেলে কাগজটা ছিঁড়তে হবে। কিন্তু স্নিগ্ধার সেটা ছিঁড়তে ইচ্ছা করলো না। একটা ব্লেড নিয়ে খুব যত্নের সঙ্গে সে কেটে ফেললো উপরের মোড়কটা। একটা খুব সুন্দর কাঠের বাক্স, সম্ভবত চন্দনকাঠের। তার ঢাকনার উপরে একটা চিরকুট সেলোটেপ দিয়ে আটকানো। সেলোটেপ খুলে চিরকুটটা নাজমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো, 'নে তুই পড়।' 
নাজমা ছোঁ মেরে সেই চিরকুটটা নিয়েই পড়া শুরু করে দিল। 
" ঝিনুক ভেঙে পাওয়া মুক্তো, মুক্তো সাজিয়ে গাঁথা মালা, রোজ স্বপ্নে সেই মালা রেখেছি পরিয়ে তোমাকে। তুমিই সেই, তুমিই গত ছমাস ধরে আমাকে প্রেমিক করে তুলেছ -- তুমিই, স্নিগ্ধা। 
                                      -- আমি রক্তিম। " 
এত পর্যন্ত পড়েই নাজমা তৎপর হয়ে বাক্সের ঢাকনাটা খুলে দেখলো, একে একে ছ'টা মুক্তোর মালা  সাজানো রয়েছে সেই বাক্সের ভিতরে। 
============================ 
ঠিকানা*
======
অনিন্দ্য পাল 
প্রজত্নে -- বিশ্বনাথ পাল 
গ্রাম -- জাফরপুর 
পোঃ-- চম্পাহাটিি 
পিন - ৭৪৩৩৩০
থানা -- সোনারপুর 
জেলা -- দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা 
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত 
Mob: 9163812351
ধন্যবাদ। 






Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.