সমুদ্রের পাড়ে যতবার বেড়াতে যায় , ততবারই বালির প্রাসাদ বানায় পৃথা। প্রথম কবে, আজ আর ঠিক মনে নেই। তবে সেই ফ্রকপরা যুগেও যে বানিয়েছে, অল্প অল্প তা মনে আছে। আজো। তবে প্রতিবারই যে একই পরিণতি হয়েছে, তা বলাবাহুল্য। প্রাসাদ কেন, কোন কিছুই বানানো যায় না, বাইরের শক্তি দিয়ে। ধরে রাখা যায় না বাইরের দেখনদারি দিয়ে। কুঁড়েঘরও শক্তপোক্ত হয় যদি বিশ্বাস ও বোঝাপড়া ঠিক থাকে। নচেৎ কিছুই টিঁকে থাকার কথা নয়। এই উপলব্ধিটা নতুন বা সাম্প্রতিক, তা কিন্তু বলা যাবে না। আগেও পৃথা বুঝেছে। বেশ কয়েকবার বুঝতে পেরেছে। তবে আবারও একই ভূল করেছে। তাই মাঝেমধ্যে মনে হয় জীবনটাই যেন তার ভূলেভরা। এক মস্ত ভূলের পাহাড়ে বসে আছে সে।
মা-বাবা সমুদ্রের ধারে হাঁটছে। ব্যালকনি থেকে দেখা যাচ্ছে। মা, বাবার আনন্দের জন্যই গোপালপুরে আসা। তবে শুধু কি মা, বাবার জন্যই!
'ম্যাডাম, আপনার কফি'।
সম্বিত ফিরে পায় পৃথা।
অবাক হয় মনে মনে। কেন এসব ভাবছে সে। সে তো অনেকদূর চলে এসেছে আজ। বহু বহু পথ। কলেজে পড়ার সময় থেকে বন্ধুত্ব। বন্ধুত্ব পেরিয়ে একধাপ বেশি কিছু। এক দুঃসহ স্মৃতি জড়িয়ে সেই সম্পর্কের অপরিণত সমাপ্তি। বাবার পছন্দে বিয়ে করে আবার বিশ্বাসভঙ্গের শিকার। অসহ্য অবস্থা থেকে মুক্তির খোঁজ। অবশেষে বিচ্ছেদ। পৃথা আজো তাকে বিচ্ছেদ ভাবে না! কেননা কোন সম্পর্ক, মনের সম্পর্ক তৈরিই হয়নি কখনো।
মনে হতে থাকে মানবিক সম্পর্কের চোরাবালিতে ক্রমশঃ হারিয়ে যাচ্ছে সে।
কিন্তু ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবার, থিতু হবার চেষ্টায় মগ্ন হয় সে। এখন চাকরি, লেখালেখি আর বাবা-মা নিয়ে দিব্যি আছে পৃথা।
আসা ইস্তক এবার জলে নামে নি। গোপালপুরের সমুদ্র সৈকত তাকে বরাবর টানে। হোটেল থেকেই বেশ সময় কেটে যায়। তবে ভাবছে আজ যাবে একবার ওই দিকটায়। পরিচিত জলটা একবার ছুঁয়ে দেখবে।
আবার কি অভ্যাসবশতঃ বালির ঘর বানাতে শুরু করবে কিনা.....। ভেবেই আবার একটা ঝাঁকুনি লাগল যেন!
(সমাপ্ত)