প্রায় চল্লিশ বছর আগের কথা ।
রায়পুরে গঙ্গার ঘাটে বিজয়া দশমীতে বেশ কিছু প্রতিমা বিসর্জন হয় । কথা ছিল দুই বন্ধু নদীর ঘাটে বসে বিসর্জন দেখেই সন্ধেটা কাটিয়ে দেবে । কথামত বলাই দশমীর বিকেলে রায়পুরের বাজারে পৌঁছে গেল । তখন সেখানকার প্রতিমা মন্ডপ থেকে নামিয়ে বরনের প্রস্তুতি চলছিল । সেজন্য আশপাশ থেকে প্রচুর মেয়ে পুরুষ সমবেত হয়েছিল । বন্ধু সহদেবকে সেখানে দেখতে না পেয়ে বলাই ভাবল - সহদেব বোধ হয় নদীর ঘাটে অপেক্ষা করছে ।
মন্ডপ থেকে কিছুটা দূরেই নদীর ঘাট । বলাই ধীর পায়ে ঘাটের দিকে এগিয়ে গেল । কিন্তু সেখানেও সহদেবকে দেখতে না পেয়ে বলাই কি করবে ভাবতে শুরু করল । এমন সময় কাঁধে টোকা পড়ায় সে ঘুরে দাঁড়িয়ে বছর পঁচিশের এক যুবতীকে দেখতে পেল । অপরিচিত যুবতী কাঁধে টোকা মারায় সে অবাক হয়ে তাকাল , কিন্তু কোন কথা বলল না । মেয়েটিই বরং মোলায়েম সুরে কথা বলল - দাদা , আপনার সাথে দরকার আছে , একটু আসবেন ?
মেয়েটির সাথে পরিচয় না থাকলেও মুখটা চেনা ছিল । একটু আগে মেয়েটি তার মায়ের সঙ্গে ঠাকুরতলায় দাঁড়িয়েছিল । মেয়েটি কি বলতে চায় সেটাও অনুমান করা কঠিন নয় । কয়েক বছর আগে এক ঘটক মেয়েটির সাথে তার বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল । গরীব পরিবারের মেয়েটি লেখাপড়া শেখেনি । তাই বলাই সে প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছিল । তারপরে কোন তরফ থেকেই কোন যোগাযোগ করা হয়নি , যদিও বেশ কয়েকবার রাস্তাঘাটে দেখা হওয়ায় বলাই মেয়েটির মুখ চিনে নিয়েছিল । এমনকি মেয়েটির বাড়ির অবস্থানও আন্দাজ করে নিয়েছিল । তবে বলাই মেয়েটির নাম জানে না , মেয়েটি তার নাম জানে কিনা তার জানা নেই । মেয়েটি সম্ভবত নিজের বিয়ে সম্পর্কে কথা বলতে চায় ভেবে বলাই একটু দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে মেয়েটির পিছু পিছু চলল ।
বলাইকে সঙ্গে নিয়ে ঠাকুরতলায় পৌছানোমাত্র মেয়েটি সবাইকে শুনিয়ে চিৎকার করতে আরম্ভ করল - আপনারা দেখুন , এই ছেলেটা আস্ত শয়তান । অনেকদিন ধরে আমার সর্বনাশ করে আসছে । আমরা গরীব অসহায় বলে কিছু করতে পারি নি । আপনারাই এর বিচার করুন । অপরিচিত এক মেয়ের মুখে একটি ছেলের বিরূদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ শুনে উপস্থিত সকলেই চমকে উঠল । জনতার মধ্যে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি হল । তারা বলাইএর উদ্দেশ্যে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করতে শুরু করল - কিগো নাগর , গরীবের ঘরের অসহায় সুন্দরী মেয়ে দেখে চুপি চুপি অনেক মধু খেয়েছ । আজ তোমার ব্যবস্থা হবে । সেখানে যত অল্পবয়সী ছেলে ছিল , তারা আবার একধাপ এগিয়ে বলাইকে মারধোর করতে এগিয়ে গেল । কিন্তু পুজো কমিটির সদস্যরা তাদের আটকে দিয়ে বলল - অযথা মারধোর করে লাভ নেই । বরং ওদের দুজনের বিয়ে দিয়ে দেওয়া যাক ।
ঠাকুর তলায় তখন মেয়ে পুরুষ বাচ্চা নিয়ে অন্তঃত শ পাঁচেক মানুষ হাজির ছিল । একটা কেচ্ছার গন্ধ পেয়ে সকলেই উৎসাহিত হয়ে উঠল । প্রায় সকলেই মেয়েটির আনা অভিযোগকে সত্য বলে ধরে নিয়েছিল । কেউই অভিযোগের সত্য মিথ্যা যাচাই করতে এগিয়ে এল না । অনেকেই চেঁচাতে শুরু করল - দেরী করে লাভ নেই , এখুনি টোপর এনে বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়ে দাও । সহজে রাজি না হলে দু চার ঘা লাগিয়ে দাও ।
সকলের মারমূখী মেজাজ দেখে বলাই রীতিমত ভয় পেয়ে গেল । জনতার মধ্যে একটিও চেনা মানুষ দেখতে না পেয়ে তার ভয়টা বহুগুণ বেড়ে গেল । সে জানত মেয়েটির সমস্ত অভিযোগ মিথ্যে , কিন্তু সকলেই তাকে বিশ্বাস করে তার পক্ষেই কথা বলছে । মেয়েটি সাহসী হলেও পেটে বিদ্যা বুদ্ধি নেই । অপরদিকে বলাই শিক্ষিত ও বুদ্ধিমান । তাই সে বুদ্ধি দিয়েই মেয়েটির বিরুদ্ধে লড়াই করতে তৈরি হল । দরকারে সে পুলিশ বা আদালতের শরণাপন্ন হবে বলে সিদ্ধান্ত নিল ।
উপস্থিত জনতা যখন প্রবল চেঁচামেচি করছিল , তখন বলাই হাতজোড় করে সবাইকে শান্ত থাকতে অনুরোধ জানাল । জনতা একটু শান্ত হতে সে বলল - আপনাদের কাছে আমার কিছু নিবেদন আছে । দয়া করে আমার কথাটাও শুনুন । বলাইএর নম্র কথা শুনে জনতা বুঝে নিল - ছেলেটি শিক্ষিত ও ভদ্র । দু চারজন বলল - ঠিক আছে , তোমার কি বলার আছে বলে ফেল ।
তখন বলাই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটিকে দেখিয়ে বলল - এই মহিলা আমার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন , কিন্তু সেগুলো সবই গোল গোল কথা , কোন বিশদ বিবরণ নেই। আপনারা সেই অভিযোগের বিচার চান । আমিও চাই - বিচার হোক । তার আগে উনি এক এক করে আমার বিরুদ্ধে ওর অভিযোগগুলো তুলে ধরুন , আমি আপনাদের সামনেই সে সব অভিযোগের উত্তর দেব । যদি দেখা যায় -আমি দোষী , তাহলে আপনাদের বিচার মেনে নেব । আশা করি , আপনারা আমার প্রতি অবিচার করবেন না ।
তবে , একটা কথা বলার আছে । উনি প্রথমেই আমার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ আছে , সব জানিয়ে দেবেন । আমি উত্তর দিতে শুরু করার পরে উনি কোন নতুন অভিযোগ তুলতে পারবেন না । এছাড়া আমি যথাসম্ভব গুছিয়ে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব , তাই আমার উত্তর দেওয়ার সময়ে আপনারা কেউ প্রশ্ন তুলবেন না , তাতে আমার খেই হারিয়ে যেতে পারে । আমার উত্তর শেষ হলে আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকলে উত্তর দেব । পুজো কমিটির সদস্যরা ছাড়াও অন্য সকলে বলাইএর শর্ত মেনে নিল । তারা মেয়েটিকে তার অভিযোগগুলো এক এক করে জানাতে বলল ।
মেয়েটি ভেবেছিল এত লোকের সামনে এমন গুরুতর অভিযোগ করলে সবাই তার কথা বিশ্বাস করবে আর তার সঙ্গে ছেলেটির ধরে বেঁধে বিয়ে দিয়ে দেবে । কিন্তু , এখন বিচারের কথা ওঠায় মেয়েটি বেশ ঘাবড়ে গেল । এজন্য সে তৈরি ছিল না । যাই হোক , সে ঢোঁক গিলতে গিলতে মোট পাঁচটা অভিযোগ তুলল । এক - বলাই অনেক দিন ধরে তার সর্বনাশ করে আসছে । সে অসহায় গরীব বলেই কোন প্রতিকার পাচ্ছে না । দুই - বলাই তাকে বিয়ে করবে বলে কথা দিয়েছিল , কিন্তু এখন বিয়ে করতে চাইছে না । তিন - তার অন্যত্র বিয়ের কথা উঠলে বলাই ভাঙচি দিয়ে সম্বন্ধ ভেঙে দেয় । চার - বলাইএর সাথে বিয়ের কথা চলার সময়ে তারা গরীব জেনেও বলাইএর বাবা দশভরি সোনা আর নগদে পঞ্চাশ হাজার টাকা দাবী করেছিল । পাঁচ - বলাই প্রায় দিনই তাদের বাড়ির সামনে ঘোরাঘুরি করে বলে সে বাড়ি থেকে বের হতে পারে না । সবশেষ একজনের প্রশ্নের উত্তরে মেয়েটি জানাল তার নাম মিতা পাল , রায়পুর উত্তরপাড়ায় তার বাড়ি ।
মিতার প্রথম অভিযোগটা শুনেই বলাই একটু ভয় পেয়ে গেল , কিন্তু পরের অভিযোগগুলো শুনে সে ভরসা পেল সেগুলোর উত্তর দেওয়াটা কঠিন হবে না । তারপরে সে এক এক করে সমস্ত অভিযোগের উত্তর দিতে শুরু করল । তার জবাব শোনার জন্য উপস্থিত সকলেই উৎসুক হয়ে ছিল । বলাই বলল - মিতা দেবীর প্রথম অভিযোগ স্পষ্ট নয় । মেয়ের সর্বনাশ বলতে কি বোঝায় সেটা সকলেই জানে । কিন্তু উনি সরাসরি কিছু বলেননি বলেই আমিও সরাসরি উত্তর দেব না । তবে পরবর্তী অভিযোগের উত্তর দিলেই আপনারা প্রথম অভিযোগের উত্তর পেয়ে যাবেন ।
বলাই আবার শুরু করল - মিতা দেবীর দ্বিতীয় অভিযোগ আমি নাকি কথা দিয়েও বিয়ে করতে রাজি হইনি । আপনারা জানেন বিয়ের নানা রকমফের আছে । অনেকে দেখাশুনা করে সম্বন্ধ পাকা করে বিয়ে করে , কেউ কেউ ভালোবাসা করার পরে রেজিষ্টারের অফিসে সইসাবুদ করে বিয়ে করে , আবার কেউ ভালোবাসা করে কোন মন্দিরে গিয়ে মেয়ের মাথায় সিঁদুর পরিয়ে দেয় । আমাদের ক্ষেত্রে কি হয়েছিল ? বছর সাতেক আগে মিতাদেবীর বাবা ঘটকের মাধ্যমে একটা প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন মাত্র । আমরা পত্রপাঠ সে প্রস্তাব বাতিল করে দিয়েছিলাম । পরে কোন তরফ থেকেই কোন যোগাযোগ করা হয়নি । কোন দেখাশোনাও হয়নি , বিয়ের পাকা কথাও হয়নি । তাহলে আমি কবে কিভাবে বিয়ের কথা দিয়েছিলাম ?
এছাড়া , আমি কোনদিনই মিতাদেবীর বাড়িতে যাইনি , উনিও আমাদের বাড়িতে যাননি । আমরা দুজনে একসঙ্গে কখনো কোন উৎসব অনুষ্ঠানে যাত্রা সিনেমায় যাইনি । কোনদিন গোপনে বা প্রকাশ্যে দেখা করিনি । চিঠিপত্রের আদান প্রদানও হয়নি । কালেভদ্রে রাস্তাঘাটে দু একবার দুজনের দেখা হলেও কেউ কারো সাথে কথা বলিনি । সবচেয়ে বড় কথা কিছুক্ষন আগে পর্যন্ত ওনার নামটাও জানতাম না । তাহলে দুজনের মধ্যে কখন কিভাবে ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠল ?
তৃতীয়ত , আমি কোনদিন ওনাকে রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে গিয়ে সইসাবুদ করে বিয়ে করার বা কোন মন্দিরে গিয়ে সিঁদুর দান করার মাধ্যমে বিয়ে করার প্রস্তাব দিইনি । অনেক সময় অনেকে তার পছন্দের মেয়েকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে থাকে । আমি কোনদিনই ওনাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করিনি । এসব কথা থেকেই বোঝা যায় - মিতাদেবীকে বিয়ে করার বিষয়ে আমার কথা দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না । ওনার দ্বিতীয় অভিযোগ একেবারেই মিথ্যা আর ভিত্তিহীন । সেই সঙ্গে এটাও স্পষ্ট হয়ে যায় ওনার সঙ্গে আমার সরাসরি কোন যোগাযোগ কোন কালেই ছিল না । তাহলে ভেবে দেখুন - আমি কবে কিভাবে ওনার কি সর্বনাশ করেছি , তাও আবার অনেক দিন ধরে ? অর্থাৎ , ওনার প্রথম অভিযোগটাও ধোপে টেকে না ।
বলাই আবার বলতে শুরু করল - এবারে তৃতীয় অভিযোগের কথায় আসা যাক । মিতা দেবীর বাড়ি থেকে আমার বাড়ি সম্ভবত মাইল দেড়েক দূরে , যাতায়াতের সরল রাস্তাও নেই । ফলে আসতে যেতে ঘণ্টাখানেজ সময় লেগে যায় । আমি একটা কারখানায় কাজ করি , প্রাইভেটে টিউশনিও পড়াই । সপ্তাহে একদিন মাত্র ছুটি পেলেও হাটবাজার করতে হয় , বাড়ির কিছু কাজকর্মও থাকে । এত কিছুর মাঝেও মিতা দেবীর বিয়ের সম্পর্কে ভাঙার সুযোগ কি থাকে ? বিশেষ করে কে কবে কখন কাকে দেখতে আসছে , সে খবর পাওয়াটা সহজ নয় । যদি কোনভাবে সেসব খবর পেয়েও থাকি , তাহলে পাত্রপক্ষ আমার কথা শুনবেন কেন ? আসলে ওনার বিয়েতে ভাঙচি দেওয়ার অভিযোগ সম্পুর্ন মনগড়া ।
বলাই আরো বলল - এবারে চতুর্থ অভিযোগের কথা বলি । এদেশের অনেক বিয়েতেই পাত্রপক্ষ নানা দাবী তুলে থাকে । সবাই সেটা জানে আর মেনেও নেয় । আমার বাবা নাকি নগদে পঞ্চাশ হাজার টাকা দাবি করেছিল । আজকাল একটা বিয়ের অনুষ্ঠান আর বৌভাত মিলিয়ে ওই রকমই খরচ হয় বটে । কিন্তু , মিতাদেবীর সঙ্গে আমার বিয়ের ব্যাপারে প্রস্তাব উঠলেও প্রাথমিক দেখাশোনাটা পর্যন্ত শুরু হয়নি । তাহলে আমার বাবা দাবিদাওয়ার কথা তুলতে যাবেন কেন ? আসলে অন্যগুলোর মত ওনার এই অভিযোগটাও বানানো , মূল্যহীন ।
বলাই বলতে থাকল - এবারে শেষ অভিযোগের কথায় আসি আমার বাড়ি থেকে দেড় মাইল দূরে এসে মিতাদেবীর বাড়ির সামনে ঘোরাঘুরি করার মত সময় আমার নেই । তাছাড়া মিতাদেবীর কথা মত আমি যদি বিয়ের কথা দিয়ে থাকি , তাহলে বাড়ির সামনে ঘোরাঘুরি করব কেন ? আমি তো সোজা ওনাদের বাড়িতেই ঢুকে পড়ব । যতদূর জানি ওনার বাড়ির সামনে চওড়া নদীবাঁধ দিয়ে সারাদিন প্রচুর মানুষ যাতায়াত করে । তাদের সামনে উনি বাড়ি থেকে বের হতে পারলে আমার বেলায় পারবেন না কেন ? আসলে এই অভিযোগেরও কোন সারবর্তা নেই । আমার বিরুদ্ধে তোলা সমস্ত অভিযোগই মিথ্যা আর মনগড়া ।
সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পরে বলাই মিতাদেবীকে প্রশ্ন করল - আপনার আর কিছু বলার আছে ? মিতা কোন উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে থাকল আসলে তার বলার কিছু ছিলও না । মিথ্যা অভিযোগ এনে চটজলদি অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায় , কাউকে হঠাৎ বিড়ম্বনায় ফেলা যায় , কিন্তু তাকে প্রতিষ্ঠিত করা কঠিন । বলাই এবার শেষ চাল দিয়ে মিতাকে উদ্দেশ্য করে বলল - আপনি সুন্দরী , এত বয়স হলেও বিয়ে হয়নি । কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে আপনার পেটে বাচ্চা এসেছে । ছেলের বাবাকে বোধ হয় বাগে আনতে পারেননি । সেজন্যই অন্যের ঘাড়ে দায় চাপাতে চাইছেন । সকলের সামনে এমন গুরুতর কথা শুনে মিতা একেবারে চুপসে গেল । মিনমিন করে না না বলে একপাশে সরে যেতে চাইল ।
কিন্তু বলাই পথ আটকে বলল - আপনি বলেছিলেন আপনার উপর নাকি অনেকদিন ধরে অত্যাচার হয়েছে , তাহলে এতদিন চুপ করে ছিলেন কেন ? কেনই বা আজ এত লোকের সামনে অভিযোগ তুললেন ? অভিযোগ যদি সত্যি হয় তাহলে আপনার বাবা মা পঞ্চায়েতে নালিশ করেনি কেন ? কেন আপনাকেই এগিয়ে আসতে হল ? আমাকে ফাঁসিয়ে দিলে কেউ কোন বিচার না করে বিয়ে দিয়ে দেবে বলে ? এবারেও মিতা কোন জবাব দিতে পারল না । বলাই আবার বলল - শুনুন মিতা দেবী । আপনার কোন সত্যি অভিযোগ থাকলে পঞ্চায়েত বা পুলিশের কাছে যান , দরকার হলে আদালতে যান । বিচার পাবেন । অযথা পাবলিকের সামনে নিরপরাধ কাউকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করবেন না ।
এতগুলো কথা শুনেও মিতা কোন উত্তর দিল না ।
উপস্থিত জনতা ততক্ষনে বুঝে গিয়েছিল বলাই নির্দোষ । মিথ্যা অভিযোগ তুলে তাকে ফাঁসানোর চেস্টা হয়েছে । মিতা নামের মেয়েটিই আসলে শয়তান , যাকে বলে শ্রীমতী ভয়ঙ্করী । তার কথায় ভুলে তারা একটি নির্দোষ ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিতে যাচ্ছিল । অপরদিকে ছেলেটি শিক্ষিত ও বুদ্ধিমান বলেই আসল সত্যটাকে বের করে নিজেকে বাঁচাতে পারল । তারা বলাইএর বুদ্ধির প্রশংসা করতে লাগল ।
আবার মিথ্যা অভিযোগ তোলার জন্য তাদের মধ্যে অনেকেই মিতাকে মারধোর করে পুলিশের হাতে তুলে দিতে চাইল । বলাই ও পুজো কমিটির সদস্যরা তাদের বুঝিয়ে সুঝিয়ে নিরস্ত করল । তবে অল্পবয়সী ছেলেরা মিতার উদ্দেশ্যে টিটকারি ছুঁড়তে বাদ রাখল না ।
এর পরে বলাই ঠাকুরতলা থেকে বের হয়ে নদীর ঘাটের দিকে এগিয়ে গেল । এই ঘটনার মাসখানেক পরে বলাই লোকমুখে খবর পেল - পাশের গ্রামের একটি অশিক্ষিত বেকার ছেলের সাথে বিয়ে হয়ে গেছে ।
---------------
ছবিঋণ- ইন্টারনেট ।
----------------------------------------
শুভেচ্ছান্তে - অজিত কুমার পাল ।
লেখকের সাথে যোগাযোগের নম্বর -7278075364 ।
সম্পুর্ন ডাক ঠিকানা :
গ্রাম ও ডাকঘর - আলমপুর
থানা - নোদাখালী ,
জেলা - দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা ।
পিন - 743318 ।