নদীর সাথে বহুদিনের সখ্যতা গুণধরের। নদীর জল তাকে শান্ত করে, কুলকুল শব্দ তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় এক স্বস্তির জগতে। এমনকি পাড়ের ঝুরঝুরে বালিও তার বেশ লাগে। নদী তার পরম বন্ধু। নদী তার সমব্যথী। তার কষ্ট বোঝে, সান্ত্বনা দেয় পরম লালিত্যে। আসলে খুব ছোটবেলায় যখন বাবার সাথে মাছ ধরা দেখতে আসত, তখন থেকেই কেমন যেন মায়ায় জড়িয়ে পড়ে। তারপর সেও মাছ ধরা শেখে ও মাছ ধরতে শুরু করে, তখন মায়ার বাঁধন আরো জোরালো হতে থাকে। ধীরে ধীরে আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা পড়ে যায়। আর এখন তো নদী অন্ত প্রাণ। শুধু যে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা তা নয়; বরং নদী আজ জীবিকাকে ছাপিয়ে জীবনে পর্যবসিত। শীতে যখন নদী শুকোয়, গুণধরের তখন মন কেমন করে। আবার গ্রীষ্মের শেষে যখন নদী ভরতে শুরু করে, আনন্দও ক্রমশ আচ্ছন্ন করে তাকে। আর বর্ষায় নদীর যৌবনবতী রূপ তাকেও যুবক করে তোলে। এই মধ্য চল্লিশেও। তবে বর্ষায় নদী যখন কখনো সখনো দু'কুল ছাপায়, এপাশ ওপাশ ভাসায়; তখন মানুষ নদীর ওপরে দোষ চাপায় বলে গুণধরের খুব দুঃখ হয়। তার নিজের জমিও নদীতে গ্যাছে, তা সত্বেও। দোষ তো নদীর নয়, মানুষই তো নদীর চলার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। যত্রতত্র নির্মাণ করে, পাথর তুলে নেয় ....তাহলে আর কি হবে!
হঠাৎ আকাশে গুরগুর শব্দে তাকায় গুণধর। কি সুন্দর বসেছিল নদীর পাড়ে! পূর্ণিমার চাঁদের আলো চারদিকে উতলে পড়ছিল। বালিতে আলো পড়ে যেন রূপোলি সমুদ্র। আর জলে এক অপূর্ব আলো-ছায়া। একেবারে বীথির মুখের মতো। লালিত্য থাকলেও দারিদ্র্য ও অযত্নের ফলে তা ফিকে হয়ে এসেছে অনেকটাই।
বৃষ্টি নামবে নাকি! ভাবতে ভাবতে উঠে পড়ল বাড়ি যাবে বলে। বীথির আবার বিদ্যুতের শব্দে খুব ভয়। জোরে হাটা দেয় সে। ততক্ষণে বজ্রপাত শুরু হচ্ছে। ঘরে পৌছাতে পৌছাতে বৃষ্টি শুরু হয়ে গ্যাছে। ফলে বিদ্যুতের শব্দ খানিকটা কমেছে।
বীথি যথারীতি পথের দিকে চেয়ে আছে লন্ঠন হাতে। গুণধরের জন্য।
খাওয়া দাওয়া সেরে শুয়ে পড়তে পড়তে বৃষ্টিও ধরে গ্যাছে। আর বীথিও ঘুমিয়ে কাদা। গুণধরের হাতের ওপর।
ভীষণ মায়া হয় বীথির মুখটা দেখে। বেচারি কি পেল জীবনে! কিছুই তো দিতে পারেনি তাকে। একটা বন্ধুও তো নেই আর, গুণধর ছাড়া।
গুণধরের তো নদী আছে........
ছবিঋণ- ইন্টারনেট ।
------------------