এক
আমার একটা অদ্ভুত শখ তৈরি হয়েছে। সবার থেকে মজার মজার ঘটনা শোনা ও সেটা রেকর্ড করে রাখা। সেই কাজটা আমি বেশিরভাগ রবিবার দিনই করে থাকি। এ পর্যন্ত প্রায় পনেরোটি গল্প আমার সংগ্রহে আছে।
আজ রবিবার। সকালের টিফিন খেয়ে দাদুর কাছে গিয়ে বসলাম। আজ দাদুকে বললাম একটা মজার গল্প শোনানোর জন্য। দাদু আমার কথা শুনে বলল, " মজার গল্প শুনবি দাদুভাই, বেশ চুপ করে বোস। আমি তোকে একটা মজার ঘটনা বলছি। আমি দাদুকে বাধা দিয়ে বললাম, " দাঁড়াও দাদু , একটু অপেক্ষা কর। আমি ছুটে গিয়ে থাইল্যান্ড থেকে কেনা আমার ছোট লাল রেকর্ডারটা নিয়ে এনে সেটা চালিয়ে দিলাম। দাদু বলতে শুরু করল, " বুঝলি দাদুভাই, যে সময়কার কথা বলছি তখন আমি ছিলাম একদম. . . ওই কী বলে . . . হ্যা, মনে পড়েছে। ইয়ং, একদম ইয়ং ছিলাম। রোজ সকালে ব্যায়াম করতাম। লোকে আমাকে সমীহ করে চলত। গ্রামের ছেলেপুলেরাও আমাকে ঘাটাতে সাহস পেত না। আমাদের বাড়িখানা ছিল মাটির, উপরে টিনের চাল। তখন তো আর এরকম পাথর বসানো বাথরুম ছিল না। আমাদের বাড়ির পেছনের বাঁশবনের নীচে ছিল আমাদের বাথরুম। সিমেন্টের দেয়াল। নানা জায়গায় পলেস্তারা খসে পড়েছে। একটা ভাঙাচোরা টিনের দরজা।
সেদিন ছিল বৃষ্টির দিন। একটু পরপরই বৃষ্টি হচ্ছে। মাঝরাতে হঠাৎ আমার বাথরুম পেল। বাইরে কাঁদার মধ্যে পা টিপে টিপে বাথরুমে গেলাম। কিছুক্ষণ পর বাথরুম থেকে শুনতে পেলাম, বাইরে একটা খসখস শব্দ। যদিও আমি মনে মনে সাহসী ছিলাম , কিন্তু এত রাতে এই বাঁশঝাড়ের তলায় কেমন যেন ভয় করছিল। বাথরুম সেরে আস্তে আস্তে বের হয়ে দেখি একটা লোক হাতে একটা বস্তা নিয়ে আমাদের বাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে। আমি বুঝে গেলাম যে ও একটা চোর। আমি চট খরে একটা গাছের আড়ালে লুকিয়ে পড়লাম। দেখলাম লোকটা থুড়ি, চোরটা বাথরুমের সামনে এসে ব্যাগটা ধুপ্ করে ফেলে দিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল। মনে মনে হাসলাম আমি। চোরটার ও বাথরুম পেয়েছে !"
দুই,
একটু থামল দাদু। এক গ্লাস জল খেয়ে আবার শুরু করল, " আমাদের বাড়ির থেকে চুরি করে আনা জিনিসপত্রের বস্তাটা আমার থেকে মাত্র দুই হাত দূরে পড়ে আছে। আমি খুব সাবধানে বস্তাটা নিয়ে এসে তার ভেতরকার জিনিসপত্র গুলো বের করলাম। তারপর তার ভেতর থান ইট ঢুকিয়ে দিয়ে, আবার আগের জায়গাতেই বস্তাটা রেখে দিলাম। আমি আবার আগের জায়গায় লুকিয়ে পড়লাম। প্রায় মিনিট দুয়েক বাদে চোরটা বাথরুম থেকে বেরিয়ে এল। থান ইট ভর্তি বস্তাটা নিয়ে তুলতে যেতেই সেটার ভারে আর কাঁদায় পেছল খেয়ে চোর বাবাজি একেবারে ধপাস্। আর্তনাদ করে উঠল চোরটা। কোমরটা বোধহয় ভেঙেই গেছে। চোরের চিৎকারে আর আমার ডাকাডাকিতে ঘর থেকে সবাই বেরিয়ে এল।"
তিন,
দাদু বলল, " বুঝলে দাদুভাই, ওই চোরটাকে আর কোনো শাস্তি দেয়া হয়নি। এমনিতেই প্রচুর পরিমাণে শাস্তি ও পেয়ে গেছে।" আমি রেকর্ডারটা বন্ধ করে দিলাম। দাদুকে বললাম, " বাহ্ দাদু, তুমি তো খুব বুদ্ধিমান ছিলে।" দাদু বলল, " বুঝলি দাদুভাই, এই প্রথম আমার জীবনে একটা প্রবাদ বাক্য ফলে গিয়েছিল।" আমি জিজ্ঞেস করলাম, " কী প্রবাদ বাক্য ?" দাদু বলল, " চোরের উপর বাটপারি।" আমি আর দাদু একসাথে হেসে উঠলাম।।
ছবিঋণ- ইন্টারনেট ।
__________❌❌❌__________
আবির চক্রবর্তী
414/1, বিবেকানন্দ রোড,
চাঁপাডালি মোড়, বারাসত।
কোলকাতা - 700124 ।।
মোবাইল + হোয়াটস্এপ : 8017463108