আবারও মোবাইলটা বাজছে । এই মোবাইল বস্তুটা এখন ঋতর কাছে বড় আতঙ্কের । ওটার বেজে ওঠা মানেই হয় পার্টি নয়তো কারিগর তাগাদা করছে , হয় কাজের জন্য , নয়তো পয়সার জন্য ।
দীর্ঘ লকডাউন পর্বের পর দেশের অর্থনীতি এখনো টালমাটাল । এরই মধ্যে চলছে কেন্দ্র রাজ্যের রোজের তরজা । দিদি বনাম দাদার বাক্-বিতণ্ডা । এদিকে সেই মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ঋতর কাজ-কারবার বন্ধই ছিল । নভেম্বর থেকে কাজকর্ম কিছুটা শম্বুক গতিতেই চলছে । কিন্তু মার্কেটে টাকা নেই । মালের রেট আগের জায়গায় নেই । লকডাউন যে সবার জন্যই সর্বনাশ ডেকে এনেছে এমনটা নয় । অনেকেই এর সুযোগ নিয়েছে । যেমনটা জগতের আরো পাঁচটা মহামারী বা বিপর্যয়ে হয়েছে । বিশেষ করে পার্টিদের ক্ষেত্রে এই ' সব ঘেঁটে গেছে এবার যতটা পারিস লুটে নে ' কালচারটা খুব দেখছে ।
সারা লকডাউনে দু একজন ছাড়া কেউই সিকি পয়সাও ঠেকায়নি । গ্যাটের কড়ি যেটুকু ছিল কারিগরদের দিয়ে-থুয়ে নিজের সংসার খরচ জুগিয়ে এখন ভাঁড়ে মা ভবানী । অথচ মহাজনদের তাগাদার অন্ত নেই । একই কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কত আর বলা যায় মানুষজনকে ।
সন্ধ্যে বেলায় আজ একটু তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরেছে ঋত । মোবাইলটায় চার্জ ছিল না বিকেল থেকেই । ছোট শিশু যেমন খিদের জ্বালায় কেঁদে কেঁদে পেটে খিদে নিয়েই ঘুমিয়ে পড়ে , এই মুঠোফোনটারও তখন সেই দশা । কিন্তু দীর্ঘক্ষণ মুঠোফোন টু-শব্দও করেনি এ যাতনাও তো আজকাল আর মানুষের সহ্য হয় না । জীবন আছে অথচ ফোন নেই , এ জীবনটা আজকাল আর কেউ মানতে পারে না ।
ইন্টারনেট আর মুঠোফোন বিশ্ব-মানবের জীবনের ধারা-টাই আজকাল বদলে দিয়েছে ।
ঘরে ঢুকে ঋত আগে ফোনটা চার্জে বসিয়ে ছিল । চার্জে মিনিট কুড়ি রেখেই ফোনটাকে অন-ও করে দেয় ।
আর অন হওয়া মাত্রই ফোনটা আবারও তার স্বরূপ ধরে । সেই একই ঘ্যানর ঘ্যানর ।
টানা দু'ঘণ্টা ঋত ধৈর্য ধরে চুপ করে বসে থাকে ।
ফোন করছে সাহিল কখনো দীনেশ , এক আধ বার পবনজী । সাহিল করছে বেশি । টাকার জন্য । দীনেশ সাহিলের চেয়েও ঝানু । ও কাজ চাইছে । পবনজী চাইছে আইডিয়া । ঋত সবাইকেই ঘোরাচ্ছে । নভেম্বর পার হয়ে ডিসেম্বর পার হয়ে দুহাজার একুশও হাঁটিহাঁটি পা বাইশের দিকে । আর কারো তড় সইছে না ।
ঋত তবু দাঁতে দাঁত চেপে এক একটা দিন পার করে যাচ্ছে । এখন যা অবস্থা এসে দাঁড়িয়েছে তাতে একটা দিন তো অনেক একটা ঘন্টা কাটানো দায় হয়ে যাচ্ছে ।
খুব ক্লান্তি লাগছে ঋতর । চোখ বুজে হাজারো চিন্তা করতে করতে ঋত ঘুমিয়েই পড়ল ।
এখন ঘুমের মধ্যেই ঋত শুনছে অজস্র রিং টোন । নানান সুরে স্বরে বিরামহীন সেগুলো বেজেই চলেছে । অথচ কেউই ফোনগুলো রিসিভ করছে না ।
প্রথম প্রথম ঋত খুব বিরক্ত হল । মনে হল ও ঘুমোতে পারছে না । কিন্তু এক সময় ঋত এতটাই ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গেল যে বাইরের কোন শব্দই আর ওকে ছুঁতে পারল না ।
মা ডাকল । ওঠ বাবা , খেয়ে নিয়ে শো । বউ ডাকল । মেয়ে মুখে মুখ ডুবিয়ে চুমু খেল অজস্র । ঋতর ঘুম তবুও ভাঙল না ।
খুব ভোরে হঠাৎ যখন ঘুমটা ভাঙল , ঋত দেখল পাশে মেয়ে , বউ তখনো ঘুমে আচ্ছন্ন । মার ঘরে গিয়ে দেখল মা-ও এখনো জাগে নি । বারান্দায় এসে ঋত দেখল আড়মরা ভেঙে একটা দিন সবে মাত্র জাগছে।
ছবি ঋণ- ইন্টারনেট ।