পার্থ সারথি চক্রবর্তী
মফস্বল শহরে বড়ো হয়ে চাকরি করতে কলকাতায় এসে শহরতলির এই অঞ্চলে বাড়ি ভাড়া নিয়েছে রণেন। এমনি থাকার জন্য বেশ মনোরম, শান্ত পরিবেশ। কাছেই গঙ্গা। সন্ধ্যার পর বেশ ফুরফুরে হাওয়া বয়। বিজয়ের সাথে গঙ্গার ধারে বেড়াতে যায় প্রায়ই। চা,সিগারেট খায়। বিজয়ই ভাড়াটা ঠিক করে দিয়েছে। ও অফিসের সহকর্মী। একটু গ্রামের দিকে ওদের বাড়ি।
ইদানিং রণেনের বাড়িটায় এলে অদ্ভূত অভিজ্ঞতা হয়। সন্ধ্যার পরপরই উপরে গান চালিয়ে নাচের শব্দ পায়। নূপুরের শব্দ পায়। রণেনের ঘরটা ঠিক নিচেই। ওপরে বাড়িওয়ালা মেসোমশাই, মাসিমা আর ওনাদের এক মেয়ে থাকে। যদিও মেয়েটিকে ও মেসোমশাইকে দেখতে পায়নি আজো। এই নিয়ে বেশ কৌতূহলও আছে রণেনের। মেসোমশাইয়ের কথা জিজ্ঞাসা করলেই মাসিমা এড়িয়ে যান। আর মেয়ের কথা ইচ্ছা থাকলেও জিজ্ঞাসা করতে পারে না।
গতকাল বাড়ি আসার পর মাসিমা কাঁচুমাচু মুখে এসে দাঁড়ায়-
" আমায় কিছু বাজার এনে দেবে। তোমার মেসোমশাইয়ের শরীর ভালো না"।
" হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। মাসিমা ....." সপ্রতিভ উত্তর দেয় রণেন।
পরে বাজারের ব্যাগটা দিতে গিয়েও উঁকিঝুঁকি দেয়। কিন্তু বৃথাই।
শনিবার তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ফিরে আসে রণেন। ক্লান্ত শরীরে ঘুমিয়ে পড়ে। ছ'টা নাগাদ উঠে রেডি হয় বেরোবে ব'লে। হঠাৎ মনে পড়ে, সকালে তো ওষুধ আনতে দিয়েছিলেন মাসিমা। এনেছে, তবে দিতে ভুলে গ্যাছে। এখন বেরোনোর সময় দিয়ে যাবে।
সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে উঠতে নূপুরের শব্দ ভেসে আসে। সঙ্গে গান। রণেন ভাবে আজ দেখার চেষ্টা করবে মেয়েটাকে। দু'সপ্তাহ হতে চলল..... ।
'মাসিমা,মাসিমা ' বার দুয়েক ডেকে সাড়া পেল না রণেন।
দরজা ঠেলে ঢুকে পড়ল।
কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে আছে। বসার ঘরে এক বিশাল পর্দা। ওপারে বোধহয় অন্দরমহল। শব্দটাও ওদিক থেকেই আসছে।
ফ্যানের হাওয়ায় পর্দাটা উড়ছে। ধীরপায়ে এগোয় রণেন। পর্দা সরিয়ে রণেনের চক্ষুস্থির।
মাসিমা পায়ে নূপুর, খোপায় প্লাস্টিকের ফুল আর নাচের পোশাক পড়ে নাচছেন। এই বয়সে যতটা পারেন আর কি! হাফাচ্ছেন। মেসোমশাই এক কঙ্কালসার চেহারা, মনে হয় জীবন্মৃত। চোখ বুজে আছেন। আছেন কি, তাও তো দেখে বোঝা যায় না!
আর মেয়েটা কোথায়! তাহলে কি .........। নানা চিন্তা ঘুরপাক খায় রণেনের মাথায়।
আর থাকতে পারে না। ছিটকে বেরিয়ে আসে দ্রুতপায়ে।
ছবি ঋণ- ইন্টারনেট ।
----------------------