অণুগল্প ।। নীল সাইকেল।। তরুণ প্রামানিক
নীল সাইকেল
তরুণ প্রামানিক
কেবলি মনে হয় বুকের গভীরে লুকিয়ে রাখা ধুকপুকটা পাচ্ছে কেউ বুঝি শুনে ফেলে ! ইচ্ছে করে না ওখান থেকে সরে যেতে। পাচ্ছে চলে যায় সে। সময় যে ঘনিয়ে এসেছে।
মাটির দেওয়ালে আটকে থাকা টিকটিকি টা প্রমান দেয় সে কথার।
যতদূর চোখ যায় তাকিয়ে দেখে সে, কপালটা জানালার শিকে চেপে। এখনই আসবে ছেলেটা সাইকেলে চেপে দূরের ওই লাল কৃষ্ণচূড়ার গা ঘেঁষে। একটিবারের জন্যও ঘাড় ফেরাবে না পাষাণটা এদিকে। একবার ও না।
ওই তো আসছে সে, আসছে তার রাজপুত্র,আসছে পাষান !
লালফিতে হাতে জড়িয়ে আড়ষ্ট হয়ে জানালার শিক আঁকড়ে থাকে ঝিনুক।
নীল সাইকেলের গতি ধীরহয় জানালার সামনে। ধীর প্যাডেলে পা চেপে চেপে সামনের দিকে দৃষ্টি রেখে টিং টং করে মিষ্টি একটা বেল বাজিয়ে চলে যায় স্কুল ফেরত ছেলেটি।
কম্পিত বেলের দ্বিখণ্ডিত আওয়াজে বুকটা এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে যায় ঝিনুকের। দুই হাটু থর থর করে কাঁপতে থাকে। হাত পা ঝন ঝন করতে থাকে। কী এক সুখমাখা বুকের ঢেউতোলা ওঠানামায় নিজেই লজ্জায় লাল হয়ে যায় সে। চোখে বুজে আসে। নিঃশ্বাস ঘন হয়ে ওঠে। ইচ্ছে কী করেনা ওই পাষানের একবার ফিরে দেখতে !!! আড়াল হয়ে যায় মানুষ , ক্রমে আড়াল হয় ওই নীল সাইকেল।
এক ছুট্টে বেরিয়ে আসে ঝিনুক ঘর থেকে। পুরো পৃথিবী যেন শুনতে পায় ওর বুকের ধুকপুক। জানুক মা, জানুক দুনিয়া, জানুক ওই কৃষ্ণচূড়া ,জানুক আকাশ,জানুক বাতাস। জানুক ঝরা পাতার বিদায়বেলা --- যে , ছেলেটা ওকে রোজ মেরে রেখে যায়।
ভালোবাসার আবেশ মেশানো রক্তাক্ত ষোড়শী রয়ে যায় নতুন বিকালের অন্তহীন প্রতীক্ষায়।
ছবি ঋণ- ইন্টারনেট ।
----------------
তরুণ প্রামানিক
9875349800