Click the image to explore all Offers

অণুগল্প।।মিশন পয়লা বৈশাখ।। সমাজ বসু


মিশন পয়লা বৈশাখ


 

সমাজ বসু    



        পয়লা বৈশাখ মানে পল্টু দা। কিংবা পল্টু দা মানেই পয়লা বৈশাখ। তার আর কোন দ্বিতীয় পরিচয় নেই। বছরে এই একটা দিন তাঁকে দেখা যায়। সকাল থেকে রাত অবধি। এছাড়া সারাবছর সারাদিন তাঁর দেখা মেলে না। স্থায়ী পেশার অভাবে পরিশ্রমেই দিন কাটে।  নিজের পেট আর মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের জন্য।
      পয়লা বৈশাখ, ঠিক  সকাল নটা। শুরু হয় পল্টুদার মিশন পয়লা বৈশাখ। মাত্র তিনঘন্টার হানা। তার ঢাউস মার্কা ব্যাগে আর জায়গা নেই। পঁয়ত্রিশটা খাবারের প্যাকেট,তার দুএকটা কম ক্যালেন্ডার। মুখে বিজয়ীর হাসি। বিকেল থেকে রাত পড়েই আছে।
       এলাকা জুড়ে তাঁকে নিয়ে রঙ্গরসিকতা। ব্যাঙ্গবিদ্রুপ,গালাগালি এমনকি সন্দেহও বাদ নেই। একা মানুষ, একমাসের খাবার মজুদ। কিন্তু ক্যালেন্ডার?
      
       পরদিন সকালে ঘুম ভাঙে। ঘুম ভাঙতেই আমাদের মুখে ঝামা ঘষে দেয় পল্টু দা। তাঁর দরজার সামনে অনাথ, অসহায় শিশুর ভিড়। কিসের প্রতিবাদ? প্রতিবাদ নয়। ত্রাণকার্য চলছে। পল্টুদার সামনে ওরা হাত পেতে দাঁড়িয়ে। আর  প্রত্যেকের হাতে পল্টু দা তুলে দিচ্ছেন খাবারের প্যাকেট ও ক্যালেন্ডার। 
        বিষ্ময়ে আর আবেগে আমি টলতে লাগলাম। টলতে টলতে তাঁর চাতালে পৌঁছে গেলাম। ততক্ষনে ঘরটা মন্দির হয়ে গেছে। আমি হাঁটু মুড়ে বসি। প্রণাম করি মানুষটাকে।

         সেই পল্টু দা আজ আর নেই। সব ধরাছোঁয়ার বাইরে। গত বছর পয়লা বৈশাখের দিন তিনেক আগে তিনি চলে গেছেন। গত বছর অতিমারির কারণে পয়লা বৈশাখের কোন অনুষ্ঠান হয়নি। হয়তো বা আঁচ করেছিলেন। অসহায় শিশুগুলোর মুখে হাসি ফোটাতে পারবেন না। সেই দুঃখই তাঁকে বাঁচতে দিল না।
         পল্টুদাই আমার পয়লা বৈশাখের স্মৃতি। যতবার পয়লা বৈশাখ আসবে, ভেসে বেড়াবে তাঁর স্মৃতি। চোখের পাতায় টলমল করবে দুঃখ।
        পল্টু দা আপনি যেখানেই থাকুন,ভাল থাকুন। শান্তিতে থাকুন।
 
 ছবি ঋণ- ইন্টারনেট ।
---------------------------------------
ঠিকানা:---
৫৬এ, মিলন পার্ক।। ডাক--গড়িয়া
কলকাতা--৭০০০৮৪

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.