এক
বহুদিন ধরে,বহু ক্রোশ দূরে
বহু ব্যয় করে, বহু দেশ ঘুরে;
দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা
দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু।
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া,
একটি ধানের শিষের উপরে
একটি শিশির বিন্দু।
এই কবিতাটা খুব প্রিয় মৈনাকের।আর আজ সেই প্রিয় মানুষটার-ই জন্মদিন। হ্যাঁ,আজ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন।এই দিনটার জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে সে।আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই সে বাবাকে গিয়ে বলল,"বাবা,আমায় দোকান থেকে কিছু জিনিস এনে দিতে হবে।" বাবা বিরক্ত হয়ে বলল,"আবার কী আনতে হবে?" মৈনাক রেগে গিয়ে বলল,"তুমি কি আজকের দিনটা ভুলে গেলে?" বাবা অবাক হয়ে বলল, "সেকী রে,আজকে আবার কী?" পাশের ঘর থেকে মৈনাকের মা এসে বলল,"সেকী,ভুলে গেলে?আজ যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন।" বাবা বললেন, "আরে,তাই তো।আজ তো ২৫শে বৈশাখ।একদম ভুলে গেছি রে। কী আনতে হবে বল।" মৈনাক খুশি হয়ে বলল,"বেশি কিছু না, সামান্য জিনিস।" মৈনাক বাবাকে কী কী আনতে হবে তা বলে দিল। বাবা চা খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে বাজারে চলে গেল।
দুই,
"ব্যাস, সব কিছু তৈরী।"-মনে মনে ভাবলো মৈনাক।সত্যিই সব কিছু তৈরী করে ফেলেছে সে।একটা চেয়ারকে কাপড় দিয়ে ঢেকে,তার উপর রবি ঠাকুরের ছবি রাখল।এরপর ছবিটাতে একটা মালা পরিয়ে দিল।সারা ঘর ফুলের মালা দিয়ে সাজানো হয়েছে।বাবা দোকান থেকে মিষ্টি এনে দিয়েছ।এরপর মৈনাক স্নান করে,নতুন জামা পরে,রবি ঠাকুরকে প্রণাম করল। দেখতে দেখতে সারা দিনটা আনন্দের সাথে কেটে গেল মৈনাকের।রাতে খেয়ে -দেয়ে বিছানায় শুতে গেল সে।শুতে শুতেই চোখ লেগে গেল মৈনাকের।হঠাৎ একটা গলার শব্দ পেয়ে ঘুম ভেঙে গেল মৈনাকের। তাকিয়ে দেখল তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।মৈনাক অবাক হয়ে গেল।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বললেন,"কী খোকা,আমার জন্মদিন পালন করেছিস? বেশ বেশ। তুই তো আমার লেখা খুব ভালোবাসিস।ঠিক আছে, এই নে এটা তোর জন্য"। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার হাত দুটো পেছনে থেকে সামনে আনলেন।মৈনাক দেখল সেই হাতে রয়েছে একটা বই।তাতে লেখা "গীতবিতান "। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সেটা মৈনাকের দিকেে এগিয়ে দিলেন।মৈনাক সেটা নিয়ে তার বালিশের পাশে রেখে দিল। এরপর মৈনাক যেই সামনেে তাকাল, তখনই সে দেখল সেখানে কেউ নেই।চোখে মুখে অন্ধকার দেখল সে।