শুভ্রা ভট্টাচার্য
অবসরপ্রাপ্ত রসায়নের অধ্যাপক রসিকবাবু কেমিক্যালবিহীন জীবন যাপনে সদাই মত্ত। রাসায়নিক আবিরের কুফলের কথা ভেবে কখনও দোল উৎসবের আনন্দ উপভোগ করেন নি। এরজন্য তাঁকে প্ৰিয়তমা গিন্নি উপমা ও বন্ধুবান্ধবদের থেকে কম কথা শুনতে হয় নি। এবারে এক ছাত্রের বানানো ভেষজ আবিরের খবরটা ফেসবুকে দেখেই বেশ আনন্দিত। উপমার সখ মেটাতে দোলের আগের দিন বিকালে চুপিচুপি ছুটলেন আবিরের খোঁজে। হলুদ গাঁদা পলাশ নিম পাতার আবির কিনে মনের খুশিতে বাড়ি ফেরার পথে স্কুলবেলার এক বন্ধুর সাথে হঠাৎ সাক্ষাৎ। বহুদিনবাদ দেখা হওয়ায় সাইকেল গাছের গোড়ায় একখানে রেখে পাশের দোকানে চা খেতে বসে গেলেন। গল্পে মশগুল, কোনোদিকে খেয়াল নেই। ফলত বেশ রাত হয়ে গেলো ফিরতে। উপমার বকাবকির ভয়ে কোনোরকমে তাড়াহুড়ো করে বাড়ি এসে সাইকেল ঢোকাতেই তাঁর সম্বিৎ হলো সাইকেলে ঝোলানো আবিরের ব্যাগ ভ্যানিস।
হায় রে,একেই বলে ভাগ্যের পরিহাস! সব আশা স্বপ্ন ভেঙে চুরমার! গিন্নিকে আর সারপ্রাইজ দেওয়া হলো না। স্বামীর বাংলার পাঁচের মতো মুখ দেখেই উপমা কিছু একটা অঘটন আন্দাজ করলেন। অনেক আকুতি মিনতির পর আসল ঘটনাটার দ্বার উদ্ঘাটন। তিনি তো হেসেই খুন। স্বামীর মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন "থাক অনেক হয়েছে! এই বুড়ো বয়সে আমার বেরসিকবাবুর আর রসিকবাবু হয়ে কাজ নেই! ছত্রিশ বছর বিবাহিত জীবনে টক ঝাল মিষ্টি প্রেমের আবিরে যে ভাবে রঙিন করে রেখেছ তাই দিয়েই সমুজ্জলে রাঙিয়ে দিও আমার আগামী দোল উৎসব।"
ছবি ঋণ- ইন্টারনেট ।
-------------------
শুভ্রা ভট্টাচার্য (শিক্ষিকা)
চুঁচুড়া হুগলী