গল্প।।পাত্রী পছন্দ ।। সুতপা ব্যানার্জী(রায়)
0
মে ০১, ২০২১
পাত্রী পছন্দ
সুতপা ব্যানার্জী(রায়)
শ্রাবণী এ বছর এমএসসি পাশ করে নেট পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ওর বাবা এই ব্যাপারটা বুঝলেও মায়ের মেয়ের বিয়ে দেওয়ার বিশাল তাড়া। আত্মীয়পরিজনের মধ্যে ঘটকও জুটে যায়, বিশেষ করে মেয়ে যদি রূপে গুণে শ্রেষ্ঠ হয়। এরকমভাবেই শ্রাবণীদের বাড়িতে এল এক পাত্রপক্ষ। বাবা-মা আর একমাত্র ছেলে নিয়ে পরিবার। প্রাথমিক আলাপ পর্ব আর জলযোগ সাড়ার পর ঐ পরিবারের কর্তার উঠে পড়ার বিশেষ তাড়া দেখা গেল না। কথায় কথায় জানা গেল শ্রাবণীরা বাঙাল আর পাত্র অনির্বাণরা ঘটি। শ্রাবণী আতঙ্কিত হল যে এবার বাঙাল-ঘটি, ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান, ইলিশ-চিংড়ি এসব প্রসঙ্গ এল বলে। কারণ শ্রাবণীর বাবাও কবেকার ছেড়ে আসা পূব-বাংলার ভিটেমাটি, লোকাচার এসব নিয়ে খুব পজেসিভ। কিন্তু বিপদটা ওদিক দিয়ে এল না, এল অন্য দিক দিয়ে। সামনে পড়ে থাকা খবরের কাগজটা হাতে নিয়ে অনির্বাণের বাবা ভূপতিবাবু শুরু করলেন-"চারপাশে যা ঘটছে তা মেনে নেওয়া যায় না। অবিলম্বে এই কেন্দ্রীয় সরকারকে পালটানো দরকার। এসব আর চলে না। চেয়ারে থাকব, সুবিধে ভোগ করব আর রাজনৈতিক দায়িত্ব, রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন করব না, এসব আর চলে না।" শ্রাবণী মনে মনে প্রমাদ গোনে। শ্রাবণীর বাবা প্রীতিমোহনবাবু প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ার মতো শুরু করলেন-" এখানে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে কেন্দ্র কী করবে? ওটা তো রাজ্য সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।"- বলে পুরো পরিসংখানের ঝাঁপি উপুড় করে ফেললেন।
ধুন্ধুমার বেঁধে যাওয়া এই গন্ডগোলকে শ্রাবণী আর অনির্বাণ বহু চেষ্টা করেও থামাতে পারল না। উত্তরোত্তর মুখে থুথু ছিটিয়ে আর গায়ের ঘাম ঝরিয়েও যখন কোন ফয়সালা হল না তখন ভূপতিবাবু অনির্বাণের দিকে তাকিয়ে-"খোকা চলে আয়, এ বাড়িতে এক গ্লাস জলও আর খাব না।"
প্রীতিমোহনবাবু-"হ্যাঁ..হ্যাঁ এতক্ষণ উদয়স্ত খেলেন তো,যান..যান আপনার বাড়িতে আমার মেয়েকে আমি বিয়ে দিয়ে পাঠাবোও না।" এই গোলমালের ফাঁকে অনির্বাণ শেষ চেষ্টা করল-"কিন্তু..বাবা শ্রাবণীকে আমার পছন্দ হয়েছে।" ভুপতিবাবু টান দিয়ে ছেলেকে দরজার বাইরে নিয়ে ধমক দিলেন-"হোক পছন্দ।"
----------------------
ছবি ঋণ- ইন্টারনেট ।
ঠিকানা-এ/4, ডুপ্লেক্স, ফেজ-3, শিল্পকানন
বিধাননগর, দুর্গাপুর-6, জেলা-পশ্চিমবর্ধমান
পশ্চিমবঙ্গ, পিন কোড-713206
Tags