গল্প ।। কসাই ।। আবদুস সালাম
কসাই
আবদুস সালাম
এক
ফোটকে মাল ও ভুটু সেখ একই পাড়ার মাংসের দোকানদার । দুজনেই অন্তরঙ্গ বন্ধু । বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে ফোন করে বললেই হলো, ঠিক সময় মত আপনার বাড়িতে পৌঁছে যাবে মাংস। বাজার দামের চেয়ে বরং দু পয়সা কমই ধরে । যাতে খরিদ্দার এর সঙ্গে সদ্ভাব বজায় থাকে। দামাদামি করতে হয়না।
দুই দোকানীর বিশেষত্ব হল বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাংস দিয়ে আসা । এই কৌশল ওরা আয়ত্ত করেছে ভুটুর কাছে । প্রথম প্রথম মাংস বিক্রি না হলে দারুণ অসুবিধায় পড়তো । খাসির মাংসের দাম বেশি । বিক্রি না হলে গায়ে লাগতো। কি করে এর থেকে উদ্ধার হওয়া যায় এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা চালায় ওরা । গবেষণা করতে করতে পেয়ে যায় এই ফরমুলা। দশ টাকা লাভ কম হোক মালগুলো তো অনায়াসে বিক্রি হয়ে যায়। লোকসানের মুখে পড়তে হয় না।
হাটে খাসি কিনতে গেছে। দাম বেশি বলছে। পড়তা হবে না গো গুরু। মানে ভুটুকে ফটকে গুরু বলেই ডাকে। মুকুট বলে বেলা বাড়তে দে । হাটের ধূলো নাকে ঢুকুক, কটকটে রোদে মাথা ঘুরুক । খিদের জ্বালায় পেট যখন চিন চিন করবে তখন বেটারা মাল বিক্রি না করে যাবে কোথায়। একটু ধৈর্য ধর।
ওমরপুর হাটে বটগাছ তলায় বিড়ি ধরিয়েছে দু'জনে। মানুষ আর গরুছাগলের পায়ে পায়ে মাটির পেলব পলেস্তারা উঠে গেছে কবে। খাঁ খাঁ দুপুর । জলের টানে বট গাছটা ও কোন রকমে বেঁচে আছে। বরষার জল পেলে আবার নতুন করে বাঁচার আনন্দে ধেয় ধেয় করে নাচবে। ভিখারীর ছেলে গুলো কেউ পয়সা দিলে যেমন গান ধরে "ডাল রুটি খাও , প্রভুকে গুন গাও"। বিড়ি খেতে খেতে ফটকে ভুটু কে বলে গুরুদেব তুমি তো দেখছি প্রতিদিন এক কুইন্টাল এর উপর মাংস বিক্রি করে দিচ্ছো। আমি শালা পঞ্চাশ কেজি মাল বিক্রি করতে হিমসিম খাচ্ছি। অনেক দিন আবার থেকে যাচ্ছে একটু আধটু। সাড়ে ছশোটাকা কেজি দরের মাংস কি আর রোজ খেতে পারি।
ওরে ফটকে ফুসিং(পুসিং) সেল করতে হবে রে । গুরুদেব ফুসিং সেল কি জিনিষ? ব্যাটা সব জানিস আর এইট্যো জানিস ন্যা? ক্যানে শহরে নাটোক আর যাতরা হলে তো গাড়িতে গাঁয়ে গাঁয়ে পাড়ায় পাড়ায় টিকিট বিক্রি করতে আসে দেখিসনি।
দুই
উৎসবের মরশুম এলে এই দুজনের সাথে টেক্কা দেওয়ায় দায়। কেউ পারেনা এদের দুজন দুজনকে। হিন্দুদের অর্ডার দেখে ফটকে আর মুসলমানদের অর্ডার দেখে ভুটু। এদের মতো এতো কম দামে কেউ মাল বিক্রি করে না। দুজনে মিলে সাপ্লাই টা দেয়। বখরা ও সমান সমান হয় । সদ্ভাব টা বজায় থাকে । বাজারে অন্য যাদের মাংসের দোকান আছে তারা হাত গুটিয়ে বসে থাকে যতক্ষণ ওদের দুজনের দোকানে মাংস থাকে। এদের মাংস শেষ হলে তবেই ওদের দোকানের মাংস বিক্রয় শুরু হয়। মনে মনে ওরা খোঁজ করে । কিছুতেই বুঝে উঠতে পারেনা। গায়ে জ্বালা ধরে । শালা আমরাও তো খাসি কাটি । একটা খাসি কাটি তো দুটি ধাড়ি কেটে ঝুলিয়ে দিই। খাসির নাভি টা কে আঁটা দিয়ে চিপকে দিই । খাসির মাংস বলে অনেক সময় ভেঁড়ার মাংস ও তো চালিয়ে দিয়েছি । তবুও তো খুব একটা লাভ হয়না। রমরমিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছে শালা দুজনেই । ওদের নাম শুনলেই গায়ে ফোসকা পড়ে।
তিন
প্রতি সন্ধ্যায় দুই বন্ধু মিলে একটু নেশার ঘরে বসে । মন টাকে চাপ মুক্ত করে চলে যায় কোবাদ সেখের বাড়ি। সারাদিনের বেচাকেনার হিসাব সেরে নিতে হবে তো। কোবাদ ওদের ওর্ডার মতো মাংস জোগান দেয় । ভোর ভোর মাংস নিয়ে গিয়ে প্রসেসিং করে প্যাকেট বন্দী করে । বাড়ি বাড়ি সাপ্লাই করে মহানন্দে।
সাঁঝালি আলোয় কোবাদ চিনতে পারে নি। বিধু কৈবর্ত ও ভোটু দু'জনে গিয়েছিল হাতিয়ারে শান দিতে। কোবাদ মনে করে ফটিক ভোটু দু'জনে এসেছে। তাই আগাম জানিয়ে দেয়। কাল একটু তাড়াতাড়ি এসো হে, দারুন মাল আছে।
বিধু কৈবর্ত সারা রাত চিন্তা করে কি এমন দারুণ মাল আছে কোবাদের কাছে। আবার তাড়াতাড়ি যেতে বলছে । কৌতূহলে সারারাত ঘুমোতে পারেনি বিধু ।ভোর তিনটেয় বিধু চলে আসে কোবাদের কসাই খানায়। মাল ঠিক করায় ছিল । তাড়াতাড়ি সাইকেল চালিয়ে মাল নিয়ে চলে আসে বাড়ি। প্যাকেট খুলে চক্ষু চড়কগাছ , এযে গরুর মাংস!
হতভম্ব হয়ে যায়। নিজের চোখকে সে বিশ্বাস করতেই পারছে না। রক্ত গরম হয়ে ওঠে। শালা হিন্দুর বাচ্চা হয়ে কতো জনের জাত নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। সামান্য কয়টা পয়সা বেশি লাভের আশায় মানুষ কি না করতে পারে! এজন্যই লোকে আমাদের মানুষ বলে না । বলে কসাই।
ছবি ঋণ- ইন্টারনেট ।
------------------------
###২৩/০৪/২০২
কথা কাহিনীর সকল কর্ম কূশলীবৃন্দকে হার্দিক শুভেচ্ছা।
উত্তরমুছুনঅসাধারণ একটি সংখ্যা উপহার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাই।