ছোটগল্প।। ধ্রুবতারা।। পারমিতা রাহা হালদার (বিজয়া)
0
মে ০১, ২০২১
পারমিতা রাহা হালদার(বিজয়া)
ছুটি ফুরিয়ে এসেছে সংকল্পের, এবার ওর যাওয়ার পালা। শ্রেষ্ঠার কনশিভের পজেটিভ রিপোর্টটা সংকল্প নিয়ে এলো ডক্টরের চেম্বার থেকে। মা হবে এই খুশির খবর সংকল্পের চলে যাওয়ার কষ্ট কিছুটা কম করলেও শ্রেষ্ঠা ভয় পাচ্ছে। শ্রেষ্ঠা একা, প্রথমবার অন্তঃসত্ত্বা,পরিবার বলতে সংকল্পই। শ্রেষ্ঠার সমস্ত ভয় ভাঙিয়ে সংকল্প প্রতিশ্রুতি দিল, "যেদিন আমাদের সন্তান পৃথিবীতে আসবে সেদিন যতই ঝড়-তুফান আসুক সমস্ত বাধা পেরিয়ে আমি পাশেই থাকবো শ্রেষ্ঠা", ।
আর্মিতে কর্মরত সংকল্পের দাম্পত্য জীবনে শুধু দেশের শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই নয়, স্ত্রী হিসেবে শ্রেষ্ঠাকে মর্যাদা দেওয়া নিয়ে নিজের পরিবারের সাথে লড়াইটাও সহজ ছিল না। শ্রেষ্ঠা অনাথ আশ্রমে পালিতা। দুষ্কৃতীরা আশ্রম থেকে মেয়েদের বিদেশে পাচারের খবরে সংকল্পের টিম দুষ্কৃতীদের আটক করে। শ্রেষ্ঠা সহ বাকি মেয়েরা উদ্ধার হয়। দুষ্কৃতীদের সাথে ধস্তাধস্তিতে সংকল্পের হাতে আঘাত লাগলে শ্রেষ্ঠা নিজের শাড়ির আঁচল ছিঁড়ে সংকল্পের হাত বাঁধে। সেদিন দুজনের আলাপ পর্ব পরবতীর্তে ভালোবাসায় পরিণতি পায়।
শ্রেষ্ঠাকে জীবনসঙ্গীর প্রস্তাব সংকল্প পরিবারের কাছে রাখলে," অনাথ- নাম গোত্র পরিচয়হীন, জাত, কূল নেই, এই মেয়ে বাড়িতে তোলে!"-এই গঞ্জনা শুনতে পায় । শেষে বন্ধুদের সাহায্যে মন্দিরে বিয়ে হয়। সংকল্পের পোস্টিং জঙ্গল এরিয়ায়,শ্রেষ্ঠা সংকল্পের সাথে সংসার সাজায়,পরে হার্ড এরিয়ায় পোস্টিং হলে শ্রেষ্ঠা একাই থাকে।
আট মাস পর...
সংকল্প শ্রেষ্ঠার সন্তানের পৃথিবীতে আসার সময় হলো। রাতে নামল দুর্যোগ, প্রসবের অসহ্য যন্ত্রণায় শ্রেষ্ঠা জ্ঞান হারালো। ডঃ বোস জঙ্গল এরিয়ার ভীষণ দরদি ডক্টর। যেকোনো মানুষের বিপদে পাশে থাকেন।সংকল্পের কাছে গর্ভবতী শ্রেষ্ঠার অবস্থার কথা শুনে সংকল্পের বাইকে রওনা দিলেন। শ্রেষ্ঠার জ্ঞান ফেরেনি। ডক্টর,সংকল্পর সহযোগিতায় শ্রেষ্ঠার গর্ভের সন্তানকে পৃথিবীতে আনলেন।
সংকল্প, ডঃ বোস কে ছাড়তে এলো। মুষলধারা বৃষ্টির দাপট, ঝড়ো হাওয়ায় ঘুটঘুটে অন্ধকারে। সংকল্প ডক্টরকে কিছু দিয়ে বলল, এইটা আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস এইটা ছাড়া আমার কাছে কিছু নেই।
আপনার নাম জানার সৌভাগ্য হয়নি। আপনার মূল্যবান জিনিসটি আপনি রাখুন। আপনার স্ত্রী মৃত্যুমুখ থেকে ফিরেছেন,আমি দুঃশ্চিন্তায় থাকবো,কাল অবশ্যই একটা খবর দেবেন।
আমি সংকল্প। আপনি এইটা রাখুন। আমার মূল্যবান সম্পদ যোগ্য ব্যক্তিকেই দিলাম। শ্রেষ্ঠার সাথে দেখা হলে বলবেন আমার দেওয়া প্রতিশ্রুতি আমি রেখেছি।সংকল্পের বাইক শূন্যে মিলিয়ে যেতে লাগল। কথাগুলোতে খটকা লাগাতে ডক্টর কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো।
ডঃ বোস অপেক্ষা করতে লাগল সংকল্পের, দুদিন পেরিয়েও গেল । প্রসব যন্ত্রণায় লড়াই করেছে মেয়েটি, ভাবলেন নিজেই দেখে আসি। বাড়িতে ঢুকতেই, ঐ তো মেয়েটা। কাছে গিয়ে ডঃ বোস বললেন, কেমন আছেন? প্রসব যন্ত্রণায় খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। সংকল্প না থাকলে স্বয়ং ঈশ্বরও বাঁচতে পারত না আপনাকে।
শ্রেষ্ঠা বলল, আপনি কে? কি বলছেন এইসব। সংকল্প কোথা থেকে আসবে, সংকল্প সেইদিন সন্ধ্যায় জঙ্গিদের সাথে যুদ্ধতেই মারা গেছে ওদের ছোঁড়া গুলিতে। পরের দিন ওর রক্তাক্ত বডি এসেছে। আজ শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছে। ডঃ বোস খেয়াল করলেন মেয়েটা সাদা থান পরেছে,মনে পড়ল সেই রাতে সংকল্প কিছু মূল্যবান জিনিস তার হাতে দিয়েছিল আর বেখেয়ালে সেটা পকেটে রেখেছিল। পকেট থেকে বার করে দেখল একটা মেডেল। শ্রেষ্ঠা দেখে বলল, কোথায় পেলেন এইটা! এই মেডেলটা মহাবীর চক্র, বীর যোদ্ধা হিসেবে সংকল্প পেয়েছিল। নিজের থেকেও বেশি আগলে রাখতো।
সেই রাতে সংকল্প আমাকে এই মেডেলটা দিয়ে বলেছিল তোমার সাথে দেখা হলে যেন বলি, সে তোমাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রেখেছে। ডঃ বোস সংকল্পের ছবিতে মেডেলটা পরিয়ে স্যালুট জানাল। এমন এক যোদ্ধা দেশের জন্য প্রাণ দেওয়ার পরও তার আত্মা স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব পালন করে গেছে। শ্রেষ্ঠা সেই রাতের সব ঘটনা জানার পর নির্বাক হয়ে গেল।
ছবি ঋণ- ইন্টারনেট ।
------------------------
Paromita Raha Halder(Bijaya)
C/O Bimal Kumar Halder
Noapara, Ogg Rd. Bye lane,
Land Mark : Near Taltala Math,
PO: Garulia,
Dist: 24 Pagns(N),
743133
Tags