Click the image to explore all Offers

অণুগল্প।। কুঁড়িতেই ঝরা ফুল ।। উদয়ন চক্রবর্তী


 

কুঁড়িতেই ঝরা ফুল 

 উদয়ন চক্রবর্তী 



   শেষ সাত আট দশকের মধ্যে মানুষ এমনটা দেখেনি, একটা অসুখ সমস্ত কিছু সরিয়ে চেঙ্গিস খাঁর মতো মারতে মারতে এগিয়ে চলেছে আর মানুষ মুখ লুকিয়ে মুখ ঢেকে পালাবার চেষ্টা করছে। মানুষের অসহায় অবস্থা মানুষকেই দুয়ো দিচ্ছে। যাই হোক গল্প থেকে সরে গেলে গল্প কী করে বলা হবে।
বৈশাখ তার রুদ্র মুর্তি ধারন করে যখন নাড়িয়ে দিচ্ছে সাধারণ জীবন,তখন সোহিনীর কিছু করার ছিল না। আজ পাঁচদিন যাবৎ জ্বর। আঠাশ বছর বয়সের শরীরটা যেন গোড়া কাটা লতানে গাছের মতো হয়ে গেছে। একটা বেসরকারী স্কুলে ও পড়ায়, যাওয়া হয়নি আজ ছয়দিন। দাদারও বেসরকারী চাকরি বেরোতেই হবে, বৃদ্ধ মা সেই কোনো রকমে রান্না করছে কাজের লোকটা যা হোক কিছু বাজার করে দেয়। আজ সোহিনী ঠিক করেছে একাই যাবে কিছুদূরে সরকারি হাসপাতালে।
ছাতাটা নিয়ে বেরিয়েছে কোনো টোটো বা অটো ওকে নিচ্ছে না ওর জ্বর হয়েছে শুনে । বেশ কিছু পরে একটা খালি টোটোকে ও বলল আমাকে একটু হাসপাতালে নিয়ে যাবে। আমার খুব জ্বর। ছেলেটা সোহিনীর সমবয়সী হবে কী সামান্য বড়। এক মিনিট থেমে থেকে বলল আসুন। সোহিনী ছাতা বন্ধ করে উঠে বলল কত জনকে বললাম আমাকে নিল না জানেন । জ্বর বললে কেউ নেবে এখন?এখন সত্যি চেপে রাখার দিন। সত্যি বলা মানুষ কে বোকা বলা হয় জানেন না? তবে আমি নিই বেশ কয়েক জন কে পৌঁছে দিয়েছি,শুধু বলি পুরো ভাড়াটা দেবেন । হাসপাতালে পৌঁছে থই পেতে সোহিনীর শরীর খারাপ করতে লাগল। ছেলেটার ছোটাছুটি আর চেচামেচিতে একজন ডাক্তার এসে দেখল, সোহিনী মেঝেতে শুয়ে আছে। ওকে ভর্তি করে নিল। ও ছেলেটার নাম ইতিমধ্যে জেনেছে বিবেক। ওকে বলল আমার বাড়িতে একটু খবর দিয়ে দেবেন। ঠিকানা দিল, ফোন নম্বর।
পরের চারদিন সোহিনীর জ্ঞান ছিল না দাদার ফোন পেয়ে আস্তে কথা বলল এখন একটু ভালো আছি।মা ঠিক আছে তো? হ্যাঁ ঠিক আছে। এই নে বিবেক একবার কথা বলবে ও রোজ তোর খবর নিতে হাসপাতালে এসেছে। ভালো আছেন তো। হ্যাঁ কিছুটা। আচ্ছা আমি কাল খবর নিয়ে যাবো। এর সাতদিন পর সোহিনী হাসপাতাল থেকে ছাড়া পায়। ও বুঝতে পারে না কেন বিবেক টোটো নিয়ে আগে থেকে দাঁড়িয়ে আছে।
এরপর এক মাস কেটে যায় বিবেক ওদের বাড়িতে তিন চার দিন এসেছে,কেন জানিনা সোহিনী ওর আসার অপেক্ষায় থেকেছে। একটা আলাদা ভালো লাগা।এক নাগাড়ে পনেরো দিন বিবেক না আসায় রাস্তার মোড়ে সোহিনী এসে একজন টোটো চালক কে জিজ্ঞাসা করে ভাই, বিবেক রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বেরোয় নি? না দিদি ওতো আজ তিন দিন হোলো মারা গেছে। বারোদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিল। সোহিনী রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে মনে হল সন্ধ্যা নেমেছে। বৃষ্টি নেমেছে ওর চোখে। বাড়ির রাস্তাটা ঝাপসা লাগছে।

------------------------------- 


উদয়ন চক্রবর্তী 
কোন্নগর হুগলী 
8240921441

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.