ভাবনার সই
সুতপা ব্যানার্জী(রায়)
ধরিত্রী আর বিন্নিদের পাশাপাশি ফ্ল্যাট-অনেক সময় এ বাড়ির রান্নার গন্ধ ও বাড়ি ভেসে যায়। ধরিত্রী আর বিন্নি দুজনেই কর্মরতা। অতিমারির সংক্রমণের সতর্কতায় দুজনেরই ওয়ার্ক ফ্রম হোম চলছে। স্যানিটাইজার আর হাত ধোয়ার সমস্ত বিধি মেনেও গতবছর সংক্রমণের শুরুতেই ধরিত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। হোম কোয়ারেন্টাইনেই ওর চিকিৎসা চলে। খাওয়ার রুচি ফিরতে সপ্তাহ তিনেক লেগেছিল। স্বামী
অনির্বাণ-ই দূরত্ব মেনে হালকা খাবার বানিয়ে দেয়, সেবা করে। বিন্নির রান্নার গন্ধে ধরিত্রীর বমি জোরালো হয়। অনির্বাণ ফেসবুকেও বিন্নির পোস্ট দেখে, আজ মুরগমসলম্ তো কাল সিক কাবাবের ছবি। ধরিত্রীর করোনা হওয়ার খবর পেয়ে এ ক-দিন বিন্নি দরজাই খোলে নি। সুচিকিৎসায় ধরিত্রী ক্রমশ সুস্থ হয়। দুর্বলতা কাটতে আরো সময় লাগে। এ বছর ধরিত্রী আর অনির্বাণের ভোটের ডিউটি আসায় ওদের টীকাকরণ স্বাভাবিকভাবেই হয়ে যায়। খানিকটা মনের জোরও বাড়ে। ক-দিন বিন্নিকে দরজার বাইরে আর আসতে দেখা যায় না। খোঁজ নিয়ে ধরিত্রী জানে বিন্নিদের পুরো পরিবার করোনা আক্রান্ত। পাড়ার লোক খাবারের কোন ডেলিভারি বয়কে আসতে দিচ্ছে না। ধরিত্রী মন স্থির করে নেয়, অসুস্থ পরিবারের খাবার ওর হেঁসেল থেকেই যাবে। অনির্বাণ বিন্নিদের ওষুধ যা লাগবে তা কিনে এনে দেয়। ধরিত্রী বিন্নিদের চার বেলার খাবার রেঁধে দিয়ে আসে। বিন্নির বরের রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে অনির্বাণ অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করে দেয়। ধরিত্রী গতবছরের স্মৃতি কখনোই ভোলে নি। কীভাবে একটা রোগ মানুষকে অসহায় করে দেয় তা নিজে অনুভব করেছে তাই মুখোমুখি ফ্ল্যাটের মানুষগুলোর অন্তর্জ্বালা অনুভব করতে পারছে। ইতিমধ্যে বিন্নি সুস্থ হয়ে ওর কৃতকর্মের জন্য দুঃখিত হয় আর রান্নার ছবি বাদ দিয়ে ও বিভিন্ন হেল্প লাইন পোস্ট করতে থাকে ওর পেজে। সরাসরি সাহায্যও অনেককে করে। ধরিত্রীর স্পর্শে বিন্নির সংকুচিত চাওয়াগুলোর বিশাল পরিবর্তন হয়েছে, এতদিনে ও সত্যিকারের শিক্ষিত মানুষ হয়েছে।
--------------------------------
ঠিকানা-শিল্পকানন, দুর্গাপুর, পশ্চিমবর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ
ফোন-9674386270