বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন :

গল্প ।। পরিহাস ।। আবদুস সালাম



ছবিঋণ- ইন্টারনেট 

পরিহাস

আবদুস সালাম


রাজকুমার চাকরি পাইনি। খুব সুন্দর দেখতে ছিল বলেই আদর করে দাদু নাম রাখে রাজকুমার।১৯৭২-৭৩সালের গ্রাজুয়েট। তখন অনেক টা নকশাল আন্দোলনের হাওয়া বইছে । পড়া শোনা লাটে উঠেছে। টেবিলে চাকু গুঁজে দিয়ে বই দেখে দেখে লেখা।এর ভিতরে আবার অনেকে পাশ , অনেকে ফেল ।বিনা মেঘে বজ্রপাত এর মতো।কেন পাশ হলো কেন ফেল হলো কেউই বলতে পারে না।

ডামাডোলের বাজারে চাকরি বাকরি হয়নি। শিক্ষিত ছেলে। কোনো ছোট কাজ করতে বিবেক সাড়া দেয়নি।


এরই মাঝে   প্রেম, বিয়ে  ,ঘর সংসার, ছেলে ইত্যাদি ইত্যাদি। গৃহিণীর অক্লান্ত পরিশ্রম।  বিড়ি বেঁধে দিনপাত। স্বামীর গরবে গরবিনী বাবার বাড়ির কোন অনুগ্রহ ঢুকতে দেয়নি।

    এরই ফাঁকে কখন মরণ অসুখ বাসা বেঁধেছে আমিনার শরীরে। অপুষ্টির শিকার রাজকুমার।ক্রমে অন্ধকার নেমে আসে চোখের পাতায়।যাও বা অল্পবিস্তর দেখতে পেতো। গ্রামে চক্ষু শিবির ক্যাম্পে অপারেশন করে দুটি চোখ বাদ হয়ে যায়। অদৃষ্টের কি নির্মম পরিহাস।

 যা ছিল সব বিক্রি করে একদিকে পেট অন্যদিকে অসুখ। কথায় আছে না বসে খেলে রাজার ভান্ডার ও শেষ হয়ে যায়। রাজকুমারের ও অবস্হা সেই রূপ।

 ছেলে আনন্দের পেটেও কিছু পড়েনি দু দিন। তার কান্না সহ্য না করতে পেরে রাজকুমার ছেলে আনন্দ কে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে রাস্তায়।

ছেলে আনন্দ বুঝেছিলো তার বাবার করুন পরিণতির কথা। আমিনার গা  জ্বরে পুড়ে যাচ্ছিল ।তার ও তো ওষুধ নাই,পেটে খাবার নাই। অগত্যা বিছানায় শুয়ে শুয়ে তাদের আসার পথ চেয়ে প্রহর গোনা।

     পড়ন্ত বিকেলের রোদে মলিন চেহারা নিয়ে যখন বাপবেটা তে বাড়ি ঢুকলো তখন হাঁপাতে হাঁপাতে  আমিনা কাছে এলে জানতে পারে সারাদিনের তাদের হারিয়ে যাওয়ার কাহিনী। অঝোর নয়নে কেঁদেছে সারারাত।এর পরে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে কে জানে।


সকাল বেলা আনন্দ বাবার সাথে যাবার জন্য এঘর ওঘর খুঁজতে থাকে। কোথাও না পেয়ে গোয়াল ঘরের দিকে চোখ পড়তেই দেখতে পাই তার বাবার পা দু'খানা ঝুলছে। আরও এগিয়ে গিয়ে দেখে তিন দিন আগে গাই বিক্রি হয়ে যাওয়া ফাঁকা দড়িটা গলায় ফাঁস লাগিয়ে জিভ্ বার করে  ঝুলছে।


----------------------------------------- 


 

 


  



Post a Comment

1 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
  1. কথা কাহিনীর এমাসের উপহার সবার মন কাড়বে সন্দেহ নেই।
    সকল কবি সাহিত্যিক বৃন্দ কে হার্দিক শুভেচ্ছা। আরও ভালো গল্প যাতে আমরা পেতে পারি।

    ReplyDelete