Click the image to explore all Offers

অণুগল্প ।। কিচেন চিমনি ।। প্রতীক মিত্র


 কিচেন চিমনি 

 প্রতীক মিত্র  




  কিচেন চিমনি পরিস্কার চলছে।যে করছে সে তার প্রয়োজনের গুঁড়ো সাবান, ন্যাকড়া, গরম জল আর অনেকগুলো খবরের কাগজ চেয়ে নিয়েছে।লোকটা চিমনির একটার পর একটা অংশ খুলছে আর সেখানে জমে থাকা চাপ চাপ তেল ফেলছে।অচেনা লোক।একদম ফাঁকাও তো ছাড়া যায় না। ফলে ফ্ল্যাটের মালকিন রান্নাঘরের ঠিক বাইরে করিডোরে দুপুরের ঘুমটাকে নিষ্ঠুরভাবে অগ্রাহ্য করে টি.ভি তে ক্রিকেট চালিয়ে খুব ভান করছে আগ্রহ সহকারে দেখার।সচরাচর টিভি সে চালায় না কিন্তু যদি চালায় খবরই শোনে।কিন্তু বাংলা হোক বা ইংরেজি সবেতেই প্রধানমন্ত্রীর লাইভ কভারেজ।হেলিকপ্টারে নামা থেকে বিরাট মাঠে বক্তব্য রাখার আগে চুমুক দিয়ে জল খেতে গিয়ে বাংলার জলের পবিত্রতা উল্লেখ করা অবদি।এতে কোনো খবর নেই।তাই কিছুটা হতাশ কিছু অনভ্যেসবশতঃ ক্রিকেট খেলা চালিয়ে ফেলে।ছেলেটা জেগে থাকলে এখানে ছেড়ে দিত।করিডোরে ওর দস্যিপনাতেই আগন্তুক কেউ আর কিছু করার সাহস পেত না।ফ্ল্যাটে ও যে একা নেই সেটা বোঝানোর জন্যই বারবার নকল ফোনের কথোপকথনে মালকিনকে গলা তুলে মাঝে মাঝেই বলতে শোনা যায়, তোর দাদা তো আজ অফিস থেকে ছুটি নিয়ে ঘরে ঘুমোচ্ছে।লোকটা মোটের ওপর নিঃশব্দে  কাজে ব্যস্ত থাকলেও বন্ধ ছোট্ট রান্নাঘরের ভ্যাপসা গরমে ঘেমে যাওয়ায় ভেবেছিল রান্নাঘরটা খুলবে।হাতগুলোতে চ্যাটচ্যাটে তেল লেগে বিচ্ছিরি অবস্থা বলে জানলাটা খোলার ঝুঁকি নিল না।একবারের জন্য বলেওছিল রান্নাঘরের ফ্যানটা যদি চালিয়ে দেওয়া যায়।সজোরে টিভিতে খেলা চলছে বলে মহিলা বোধহয় শুনতে পায়নি।নাকি না শোনার ভান করেছে,কে জানে?একটা সময় ছিল যখন ক্রিকেট মাঠের এই সবুজ দেখলে মাথা খারাপ হয়ে যেত।নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে খেলা দেখে দেখেই সারাটা দিন যেত ওর কেটে। আর এখন…মালকিন তাড়া দিচ্ছে।বিকেলে একটা গ্যাদারিং আছে।এই অ্যাপার্টমেন্টের সোসাইটিরই স্যুইমিং ক্লাবে।লোকটাকে বেশ ক'বার বলাতে লোকটা শেষমেশ বলতে বাধ্য হয়,স্যার আছেনতো!তাহলেই হবে।কাজটা তো ভালো করে করবো ম্যাডাম।স্যার!স্যার!স্যার কি করবে সেটা স্যার ঠিক করবে।আপনাকে…তোমাকে কে বলতে বলেছে?আমিই কোম্পানিতে ফোন করে কমপ্লেইন করবো!কমপ্লেইনের কথা শুনে লোকটা আবার নীরবে কাজ করতে থাকে।টিভিতে লাইভ ক্রিকেটের চিৎকার, ফ্ল্যাটের মালকিনের সেটাকে মন দিয়ে দেখার ভান গোটা পরিবেশটাকে আরো অসঙ্গতিপূর্ণ করে তোলে।কোম্পানীতে মালকিনের আর ফোন করা হয়ে ওঠে না।স্যুইমিং ক্লাব থেকে এদিকে ফোন আসতেই থাকে।চিমনি পরিস্কারের লোকটা ওই কালচে তেলমাখা হাতেই রান্নাঘরের জানলাটা খুলে ফেলে।আধঘন্টার কাজ, আজ দ্বিগুণ সময় লাগছে।এতে ক্ষতি তার।কিন্তু উপায় কি কাজ শেষ না করে!এতক্ষণ একবার দুবার মেপে নিয়ে চোখে চোখ রেখে কথা বললেও এবারে চিমনির দিকে তাকিয়েই সে মালকিনের উদ্দেশ্যে কটা কথা ছুঁড়ে দেয়।'আর একটু গরম জল আর আরো ক'টা খবরের কাগজ লাগবে!'
সেটা অবশ্য আদেশ না অনুরোধ বোঝা যায় না যেমন লোকটা বুঝে উঠতে পারে এমন বিকেলের অবেলাতেও বাড়ির মাঝবয়সী মালিক কিভাবে ঘুমিয়ে থাকে?
----------------------------------------------------------------------------------

প্রতীক মিত্র

কোন্নগর-712235,পশ্চিমবঙ্গ
ফোন:8902418417
মেইল: mitprat@gmail.com







Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.