Click the image to explore all Offers

ধারাবাহিক উপন্যাস ।। সোনালী দিনের উপাখ্যান ( পর্ব ২৪) ।। দেবব্রত ঘোষ মলয়


 

পর্ব ২৪

 

   রবিবার একদম সাতসকালে নিজেই ড্রাইভ করে মননের বাড়ি চলে আসে সুমন। মনন নিচেই অপেক্ষা করছিল। সুমনকে হাত ধরে বাবার অফিস ঘরে নিয়ে এসে বলে - শোন, মা এখনই নীচে আসবে চা নিয়ে। তুই এই পর্দার আড়ালে দাঁড়া। 
এরপর ঠিক রোজকার মতোই চা নিয়ে আসে মানদা। অখিলবাবুর  ছবির দিকে  চেয়ে বিড়বিড় করে বলে - কি গো, চা খাবে তো? তারপর ভাঙা গলায় বলে - তুমি তো একবার বলতে পারতে আমায় যে বিন্দুবাসিনী তোমার কে হয়? ওর বাবা অর্ধেক সম্পত্তি তোমায় কেন দিয়ে গেল? তোমাদের এই অবৈধ প্রেম আমাদের জীবন ছারখার করে দিল। আমাদের তো কোন অশান্তি ছিল না। কেন, কেন তুমি ....
কথা শেষ করতে পারে না মানদা, কান্নায় ভেঙে পড়ে। কিছুক্ষন পর একটু ধাতস্থ হয়ে চোখ মুছে ধীর পায়ে উপরে উঠে যায় মানদা।
পর্দার আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে সুমন। মনন খুবই অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। সুমন ওর কাঁধে হাত রাখে। বলে- তুই কি কিছু জানিস এই বিন্দুদেবীর সম্পর্কে?
মনন জানায় সে কিছুই জানে না। শুধু পুঁটির মা একদিন হারাধন চাটুজ্জের আসার কথা বলেছিল। বলেছিল, হারাধন চাটুজ্জে কিছু একটা গোপন ব্যাপারে বড়বাবুর কাছে আসে আর টাকা নিয়ে যায়।
একটু ভেবে সুমন বলে - আজ আর মাসীমার সঙ্গে কথা বলব না। আমার মনে হয় ওই বিন্দুদেবী আর হারাধন চাটুজ্জের কোথাও একটা যোগসূত্র আছে। এটা একান্তই তোদের পারিবারিক বিষয়। আমার পরামর্শ তুই একবার দেশের বাড়ি যা। ওখানে গিয়ে হারাধনবাবু এবং বিন্দুবাসিনীদেবীর সমন্ধে বিস্তারিত খবর নে। তারপর একবার না হয় আমি আসব। আজ যেরকম গোপনে এলাম সেভাবেই ফিরতে চাই।
কথা শেষ করে উঠে পড়ে সুমন।
মনন তাকে গাড়িতে তুলে দিয়ে চিন্তিত মুখে বাড়ি ফেরে।
বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যে হয়ে যায়। পোশাক বদলে এসে বসে দোতলার বারান্দায়। পুঁটির মা চায়ের ট্রে নিয়ে রাখে সেন্টার টেবিলে। মানদাও এসে বসে সামনে। এমন সময়ে নীচে কলিং বেল বেজে ওঠে। 
পুঁটির মা, দেখ তো - বলে ওঠে মানদা।
পুঁটির মা নিচে দরজা খুলে দিয়ে এসে জানায় আমতা থেকে দুজন ভদ্রলোক এসেছেন। মনন বলে ওঠে - এখানেই নিয়ে এসো ওঁদের, আর আরো দু কাপ চা নিয়ে এসো।
দোতলায় উঠে এলেন দুই সৌম্যদর্শন ভদ্রলোক  দুজনেই পাট ভাঙা ধুতি পাঞ্জাবী, কাঁধে শান্তিনিকেতনী ঝোলা। প্রথমজন হাত জোড় করে বলেন - নমস্কার। আপনি নিশ্চয়ই শ্রীমতি ঘোষ। আমি বিভূতি বিশ্বাস, আমতা হাই স্কুলের এসিস্ট্যান্ট হেড স্যার আর ইনি আমাদের বাংলার শিক্ষক শ্রী দেবাঞ্জন বসাক। 
মানদা স্মিতমুখে প্রতিনমস্কার করে বলেন - বসুন বসুন মাস্টারমশাই। এ হল আমার ছেলে মনন।
ইতিমধ্যেই পুঁটির মা চাযের ট্রে রাখে সামনে।
বিভূতিবাবু চায়ে চুমুক দিয়ে বলেন - অখিলবাবুর চলে যাবার খবর পেয়েছিলাম। কিন্তু স্কুলে পরীক্ষা চলছিল বলে তখন আর আসা হয় নি। বড় ভালো মানুষ ছিলেন আর গুণী মানুষও। আমাদের গ্রামের গর্ব। কয়েক বছর আগে স্কুলে ওনার সম্পত্তি দান করার সময়ে আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম ওনার নামের একটি ফলক বসাতে। উনি রাজি হননি। বলেছিলেন,আমি আজ যা কিছু, তার নেপথ্যে এই স্কুল। এটা আমার কর্তব্য।
মানদা কোন উত্তর দেন না। তাঁর দু চোখ ভিজে ওঠে।
মনন এ সময়ে বলে ওঠে - হ্যাঁ স্যার, বাবা প্রচার পছন্দ না। এখানেও নানা অনুষ্ঠানে ওনাকে সভাপতি করার প্রস্তাব আসত, উনি রাজি হতেন না।
দেবাঞ্জনবাবু বলে ওঠেন - আগামী রবিবার স্কুলের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন। ওই ব্লকের নামকরণ হয়েছে অখিলবাবুর নামে। আমাদের কমিটির ও অভিভাবকদের পক্ষ থেকে আপনাদের বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানাতে এসেছি। আপনাদের হাত দিয়েই উদ্বোধন হবে ওই ভবনের। 
বিভূতিবাবু একটি আমন্ত্রণপত্র দেন মানদার হাতে।
আরো দু একটা কথার পর ওঁরা বিদায় নেন। 
মানদা বলেন, একবার যাওয়া উচিত তো আমতায়। তোর বাবার অনেক স্মৃতি ওখানে। আর এঁরাও এত করে বলছেন।
মনন বলে ওঠে - আচ্ছা মা, আমার দু একটা কাজ আছে, সেরে নি, তারপর না হয় ভাবা যাবে যাওয়ার ব্যাপারে।
দুপুরে খেতে বসে কথাটা তোলে মনন। 
মা, আমি ভাবছিলাম ...
কথা শেষ করতে না দিয়েই মানদা বলে ওঠেন - ও কি রে। তুই ভাপা ইলিশ আর একটা না, কত যত্ন করে বানালাম। বর্ষাকালে রোববার তোর বাবার প্রিয় পদ ছিল এটা। 
মনন মায়ের মন রাখতে বলে - আচ্ছা, দাও আর এক পিস।
বেশ বড় একটা পিস পাতে তুলে দিয়ে মানদা বলেন - হ্যাঁ, তা কি বলছিলিস বাবু?
আমি একবার দেশের বাড়িতে যেতে চাই। হাজার হোক, আমি তো বংশের সন্তান। বাবা তো নিয়ে যেতেই চাইত না।
মানদা একটু ভাবেন। তারপর বলেন, বেশ তো, তুই ঘুরে আয় আর দেখে আয় দেশের বাড়ির হালচাল।
মনন বলে - তোমাকেও যেতে হবে মা। আমি তো কাউকেই চিনি না।
সে হবে 'খন - মানদা উত্তর দেন।
ঠিক দুদিন পর মা-ছেলে বাড়ির গাড়িতেই রওয়ানা দেন আমতার উদ্দেশ্যে।
-------------------------------

                        এরপর পরের সংখ্যায়

Post a Comment

1 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
  1. ভালো লাগল।বেশ জমে গেছে লেখা। এখন অপেক্ষা।

    ReplyDelete