অণুগল্প ।। আংটি ।। সৌমিক ঘোষ
আংটি
সৌমিক ঘোষ
পঞ্চাশোর্ধ হারাধনবাবু সুগার , প্রেসারে বেশ অসুস্থ । গ্লুকোমায় বাম চোখের দৃষ্টি ক্ষীণ । দুই মেয়ে আর বউ নিয়ে সংসার । বড়মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন । জামাই মেয়ের হুংকারে গুটিয়ে থাকে । জাঁদরেল স্ত্রীর কথায় স্বেচ্ছাবসর নিতে পারেননি । অনিতা বা ছোট মেয়ে সুমি প্রতিদিন হাওড়ায় ইলেকট্রিক অফিসে পৌঁছে দেয় ও বাড়ি নিয়ে আসে । হা্রাধনবাবুর শরীরে আর ধকল নিতে পারে না ।
লকডাউন একটু শিথিল । টীকা নেওয়া হয়নি । ট্রেনে কোথায় মাস্ক আর
দূরত্ববিধি । ডিসেম্বরে তখন বেশ শীত । হারাধনবাবু খুব ঘামছেন । ঠিকমত হাঁটতে পারছেন না । শরীরটাও কাঁপছে ।
নির্বিকার অনিতা বলল – ঢুকে যাও । রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে ।
দুপুরেই ম্যাসিভ কার্ডিয়াক অ্যাটাক । বাড়িতে খবর যায় । ফোনে অনিতা বলল – কে যাবে বডি নিতে ? আপনারা যদি আসেন ।
বড় মেয়ে শুনেই জামাই নিয়ে হাজির । বাড়িতে কোন শোক বা কান্নার চিহ্ন নেই । সন্ধ্যায় অফিসের গাড়িতে লাশ এলো । সাধের দক্ষিণের বারান্দায় নিথর হারাধনবাবু্ খাটে শুয়ে ।
প্রতিবেশীরা বাড়ির বাইরে জড়ো হয় । আলোচনা চলে । খাট ডিঙিয়ে ভেতরে ঢুকতে কেউ সাহস পায় না ।
অফিসের লোকেরা ব্যাগ , কাগজপত্র ও ডেথ সার্টিফিকেট সুমিকে বুঝিয়ে হাতে দেয় ।
সবাই বেড়িয়ে যাচ্ছে , সেই মুহুর্তে অনিতা হন্তদন্ত হয়ে বেড়িয়ে বলল – ওর হাতে সোনার আংটি ছিল ।
ডিউটি অফিসার আনিসুর বলল – সব আপনার মেয়ের হাতে দিয়েছি । মানুষ চলে গেল আর আংটি ---
---------------------------------------------------------
সৌমিক ঘোষ
৬৭/জি ; জি.টি.রোড (পশ্চিম)
শ্রীরামপুর – ৭১২ ২০৩ , হুগলী .
আলাপন - ৮১০০১৭৪৩৬০