হাসির গল্প ।।মন সার্ভিস সেন্টার ।। অরুণ চট্টোপাধ্যায়
মনোরঞ্জন গুহঠাকুরতা। এই নামটাই খুব মুস্কিলে ফেলেছে। শুধু নাম নয় টাইটেলও। সবাই নাকি রীতিমত ব্যঙ্গ বিদ্রূপ করে। বলে গুহঠাকুরতা তো নয় যেন গুহার ঠাকুরদা। রাগ তো হবারই কথা।
-হ্যাঁ আমার বাবা মানে তোর ঠাকুরদা শেষ বয়েসে সাধু হয়ে গিয়েছিলেন। শুনেছি তিনি হিমালয়ের কোন গুহায় গিয়ে নাকি তপস্যা করেছিলেন। তা সেই থেকে তো আমাদের এই টাইটেল আসে নি?
বাবার উত্তরেও রাগ কমে না।
-আর নাম? আহা কি খাশা। সবাই বলে আমি নাকি সকলের মনোরঞ্জন করে বেড়াই। মানে সবাইকে তেল মেরে বেড়াই।
বাবা বুঝলেন ছেলের গোঁসা হওয়ার কথা।
কোর্টে এফিডেভিট করে নাকি নাম টাইটেল বদলানো যায়। তাই করল সে। নাম নিল মন আর টাইটেল গুহ। মানে মন গুহ। সবাই বলল, বাঃ বেশ মিষ্টি নাম তো।
কলেজের বন্ধু মিষ্টির সঙ্গে শেষ দেখা সেই লাস্ট ইয়ারে। কলেজ ছাড়ার পর ছাড়াছাড়ি দুজনে। তারপর দুবছর ঘুরে বেড়িয়ে এই তিন বছর হল কাজ করছে অফিসে। সর্বমোট পাঁচ বছর পরে দেখা।
মিষ্টি ওকে মিষ্টি হেসে বলল, হা-ই!
অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে নামটা হঠাৎ মনে পড়ল। কিন্তু টাইটেলে কেমন একটা সন্দেহ থেকে যাচ্ছে। তাই সে জিজ্ঞেস করল, মিষ্টি দে?
-না না ওসব হবে না? প্রবল মাথা নাড়ল মিষ্টি।
-কি হবে না? মন তো অবাক।
-ওই যা তুমি চাইছ। তাছাড়া আমার বিয়ে হয়ে গেছে না? এখন কি আর তোমার সেই কলেজের বন্ধু আছি নাকি? এখন আমি ওসব দিতে পারি বল? এমন প্রকাশ্যে।
মন অবাক। তার চোখের দৃষ্টি স্থির। সে চেয়ে আছে বটে, কিন্তু মিষ্টির কাছে কিছু চেয়েছে বলে তো তার মনে হচ্ছে না? মেয়েটা হয় মিষ্টি, আর নয় সে পাগল।
বলল, আচ্ছা পাগল তো আমি আবার তোমার কাছে কি চাইলুম?
-চাইলে না? মিষ্টি চাইলে না? বললে না মিষ্টি দে? তুমি জান না একটা ছেলে যখন একটা মেয়েকে মিষ্টি দিতে বলে তখন তার কি মানে হয়?
এবার খানিকটা বুঝল সে। নাক কুঁচকে বলল, আহা ঠোঁটের যা ধরণ- যেন একজোড়া দাঁত মাজার বুরুশ। ফেটে চটে একশা। ঠোঁটের দেখাশোনা করতে পার না? ভাল ক্রিম কিনে দিতে পারে না তোমার বর? অমন বিচ্ছিরি ঠোঁটের মিষ্টি চাইতে আমার বয়ে গেছে।
মিষ্টি ভেংচি কেটে বলল, আঙ্গুর ফল টক?
কলেজ জীবনে কখনও হয়ত মিষ্টিকে ভাল লাগত তার। কিন্তু কখনও তো মিষ্টি দে বলে ডাকত না। মনের তখন মনে হল নাম টাইটেল নিয়ে সে তবে একাই ভুগছে না। আরও অনেকেই এই দলে আছে?
মিষ্টি খিলখিল করে হেসে বলল, তুমি এখনও বিয়ে কর নি মনে হচ্ছে?
-কি করে বুঝলে?
-ওই যে এখনও সুন্দরী মেয়ে দেখেই মিষ্টি দে বলে মিষ্টি চেয়ে চেয়ে বেড়াচ্ছ?
-তা আমি কি করব? নাম আর পদবীর এমন হ্যাংলা রাজযোটক হলে আর আমি কি করব? দোষ তো তোমার। আমার মত আদালতে গিয়ে নাম-পদবী একটু এপিঠ ওপিঠ করে নিলে আর আমাকে এত কথা শোনাতে হত না?
বলেই সে হন হন করে হাঁটা দিল। মেজাজটা সত্যি খিঁচড়ে আছে। এক তো তার মোবাইলটা খারাপ হয়ে গেছে সে খুঁজতে বেরিয়েছে মোবাইল সারানোর দোকান। আর তাতে মিষ্টির সঙ্গে দেখা আর মিষ্টির সৃষ্টিছাড়া কথা।
একটু পরেই দেখা এক বন্ধুর সঙ্গে। তার বেজার মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, এমন উদ্ভ্রান্ত কেন মন?
হাতের মোবাইলটা দেখিয়ে মন বলল, আর বল কেন ভাই?
বন্ধু বলল, খারাপ হল নাকি মন?
পাশ থেকে এক ভদ্রলোক চেখে একটি ইঙ্গিত খেলিয়ে বললেন, হ্যাঁ হ্যাঁ এইখানে সার্ভিস সেন্টার খুলেছে বটে। আপনি যেতে পারেন।
মন হাঁটতে লাগল। পড়ল বিরাট পাঁচিলে ঘেরা একটা বাড়ি। গেটে লেখাঃ মন সার্ভিস সেন্টার। আরিব্বাস তার নিজের নামে সার্ভিস সেন্টার। দারুন খুশি মন। লোকটা ঠিক বলেছে তবে।
সোজা গেট পেরিয়ে ঢুকে গেল। অফিস মনে হচ্ছে। কিন্তু কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা। তাড়াহুড়োয় খেয়াল করা হয় নি এটা কিসের সার্ভিস সেন্টার। মোবাইলের যদি না হয়? দূর ছাই মরুক গে যাওয়া তো যাক।
লোকটার মাথার ওপরের লেখাটা দেখে চমকে গেল। বেশ ভালও লাগল। লেখা আছেঃ আপনার মন যদি মোবাইল হয় তবে তাকে ঠিক মত রিপেয়ারিং করার দায়িত্ব আমাদের দিন। আমরা সে দায়িত্ব পালনে সক্ষম।
ওরে বাবা মন আর মোবাইল দুটোই মিলে যাচ্ছে। অতএব এটা নিঃসন্দেহে মোবাইলের রিপেয়ারিং সেন্টার।
-বলুন-
-এই একটা সার্ভিস করাব। খুব ইমার্জেন্সি। আজ না দিতে পারেন কাল চাই।
-হ্যাঁ হ্যাঁ কেন হবে না।
ঘসঘস করে স্লিপ লিখে দিয়ে বলল, আপনি এই দরজা দিয়ে চলে যান। ওখানে ডাক্তার বাবু আছেন।
আহা কেতা কত। মোবাইল সারানোর মেকানিককে বলছে ডাক্তারবাবু। তবে এটা কিছু নতুন নয়। অনেক বাসের ড্রাইভার কেবিনে সে লেখা দেখেছেঃ পাইলট। তার মানে বাসের নয়, নিজেকে উড়োজাহাজের চালক ভাবতে ভালবাসে। তাহলে মোবাইলের মেকানিক নিজেকে ডাক্তার বলাটা কিসের অন্যায়?
চলে গেল ভেতরে।
-বসুন।
ডাক্তার বসে আছে। সাধারণ পোশাক। গলায় ঝুলছে না স্টেথো। তার মানে এই হল মোবাইলের মেকানিক। পকেট থেকে মোবাইল বার করে টেবিলে রাখল।
-কি প্রবলেম বলুন?
-সময় ঠিকমত দিচ্ছে না। কখনও এগিয়ে যাচ্ছে তো কখনও পেছিয়ে। একটা খুলতে গিয়ে আর একটা খুলে ফেলছে।
ভদ্রলোক ভ্রূ কোঁচকালেন।
বিস্তারিত বলল মন, এই যেমন ফেসবুক খুলতে গিয়ে খুলছে মেসেঞ্জার। মেসেঞ্জার খুলতে গিয়ে টুইটার। টুইটার খুলতে গিয়ে-
-হোয়াটস এপ এই তো?
-হ্যাঁ আপনি কি করে জানলেন?
হাসল মোবাইল মেকানিক, এসব আমাদের জানতে হয়। না জানলে সারান যায় না। ঘুম? ঘুম হয় ঠিক মত?
লোকটা বলে কি? দরকারি যন্ত্রটা বিগড়ে থাকলে কি কারোর ঘুম হয়?
-না না একেবারেই নয়। আজ সাতদিন ধরে ঘুম নেই।
-ঘুমের কি ওষুধ খান? প্রেসক্রিপশন আছে?
মন তো অবাক। মোবাইল খারাপ হলে লোকে চিন্তায় থাকে। তাই বলে তার জন্যে ডাক্তার দেখাতে হবে আবার সেই প্রেসক্রিপশন আনতে হবে? অবাক কারে কয়। ঘাড় নাড়ল নেতিবাচক ভঙ্গিতে।
-ঘুম হচ্ছে না ডাক্তার দেখান উচিৎ ছিল। এখন সারতে দেরি হবে। সে যা হোক আপনি আমাদের অন্য বিল্ডিং-এ যান। অন্য ডাক্তারবাবু দেখবেন।
একটু দূরেই অন্য বিল্ডিং। গেটের মাথায় লেখাঃ মন রিকনসিলিয়েশন সেন্টার। বাবা তাকে নিয়ে এত কিছু। আনন্দে গায়ে কাঁটা দিচ্ছে যেন।
মোবাইল আর আগের লোকটার কাগজ হাতে নিয়ে ভেতরে ঢুকল মন। এখানেও লোকটার গলায় কোনও স্টেথো ঝুলছে না। তবে কেন যে ডাক্তার বলে ছাই। আরে দূর দূর। মোবাইলের আবার ডাক্তার হয় নাকি? তবে এ লোকটা খুব উঁচু দরের মেকানিক মনে হয়।
মোবাইল টেবিলে রেখে অপেক্ষা করে রইল। লোকটা মোবাইলের দিকে তাকিয়ে চোখ তার দিকে তুলল। প্রেস্ক্রিপশন দেখে বলল, আপনার সাতদিন ধরে ঘুম হচ্ছে না। তারপর ফেসবুক খুলতে গিয়ে টুইটার খুলছেন?
-আমি নয় আমার মোবাইল।
খুব বিরক্ত ভাবে উত্তর দিল মন। তার বিরক্তিটা এই জন্যে যে মেকানিকরা কেউ তার মোবাইল নিয়ে কিছু জিজ্ঞাস করছে না। আর তা নিয়ে তারা নাড়া ঘাঁটাও করছে না। এ কি রে বাবা। তাছাড়া একটা মোবাইল সারাতে এত হাঙ্গামা আগে কখনও জানত না। কিন্তু এখান ছেড়ে চলে যেতেও পারছে না কারণ এই সেন্টার তার নামে হয়েছে 'মন সার্ভিস সেন্টার'। তার মানে হয়ত তার যা কিছু খারাপ হবে সব কিছুই এরা সারিয়ে দেবে। নিজেকে বেশ গর্বিত লাগছে। বলতে ইচ্ছে করছে ফেসবুকের সেই কথাটা 'আমি গর্বিত আমি মন'।
লোকটি মানে- হয় মেকানিক বা ডাক্তার হাসল। বলল, হ্যাঁ হ্যাঁ তাই হয়। প্রথম দিকে তো এমন তুচ্ছ জিনিস দিয়েই শুরু হয়। আপনার ক্ষেত্রে মোবাইল। কিন্তু আর একজনের একটা টিকটিকি।
ভ্রূ কুঁচকে তাকাল মন। লোকটা এমন ধান ভানতে শিবের গীত গায় কেন? বলল, মোবাইলের সঙ্গে টিকটিকির সম্পর্ক কোথায়?
-আছে আছে। সম্পর্ক আছে। টিকটিকিও সত্যি কথা বলে আবার মোবাইলও তাই। সে যাই হোক একজন এসেছিল কারণ সে শুধু ভাবত তার মাথায় নাকি একটা টিকটিকি লাফিয়ে পড়ছে।
সে আবার কি? মন কিছুই বুঝে উঠতে পারল না।
-আসলে সে খুব মিথ্যে কথা বলত। তাই তার বদ্ধমূল ধারণা হয়েছিল টিকটিকি গায়ে পড়ে তাকে সত্যি কথা শেখাতে আসে। তার সারতে-
এবারও কথা না বলে চুপ করে রইল মন। মনে খুব উদ্বেগ। মোবাইলটা কালকের মধ্যে না সারালেই নয়। হোয়াটস এপে অনেক মেসেজ আসে তার। মন তাই সর্বদা উসখুস করছে।
-চিন্তার কিছু নেই। অশান্ত মনকে শান্ত করাই কাজ আমাদের।
বিরক্ত মন বলে উঠল, আমার মোবাইল-
-তার টিকটিকি নিয়েও সে সর্বদা এমন ভাবত।
আরও বিরক্ত আর অধৈর্য হয়ে মন প্রশ্ন করল, কি ভাবত শুনি?
-ভাবত টিকটিকিটা বুঝি এই লাফিয়ে পড়ল তার ঘাড়ে।
-আপনারা কি টিকটিকিও সারান নাকি? মনের গলায় ব্যঙ্গের সুর।
-টিকটিকি নয় টিকটিকির ভীতি। লিজার্ড ফোবিয়া।
-তারপর?
-তার সারতে সময় লেগেছিল।
-কত?
-এই বছর তিনেক আর কি? তবে আপনার অত লাগবে না হয়ত। হয়ত ছটা মাসেই-
বাবা একটা মোবাইল সারাতেই ছমাস? ডিজিট্যাল ওয়ার্ল্ডেই এই দশা।
-যদি আমাদের চিকিৎসায় সাড়া দেন। আর নাহলে কয়েকটা বছর। বাড়িতে দেখাশোনা করার উপার্জনক্ষম কেউ আছে তো? এত বছর তো আপনি অফিস থেকে ছুটি পাবেন না।
এ কি পাগলের আড্ডা রে ভাই। মনের মনে হল মোবাইলটা ধাঁ করে ছুঁড়ে মারে লোকটাকে। তার পাকানো চোখ হাতের মুঠি আর কোঁচকানো ভুরু দেখে লোকটা হাসল। যেন সে সব কিছু বুঝে গেছে।
-আপনার রিকনসিলিয়েশন হয়ে গেছে স্যার। মানে কোথা থেকে কেমন করে রোগ এসেছে আর এখন কোথায় দাঁড়িয়ে আছে এমন কি কোন ঝাঁটা দিয়ে কেমন করে ঝেঁটিয়ে বিদেয় করা যাবে তা সব এখন আমাদের কব্জায়। আপনি এখন পাশের চেম্বারে যান। ওখানে আপনার চিকিৎসা হবে-
বাধা দিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে মন বলে উঠল, আমার নয় আমার মোবাইলের।
একটুও রাগ করল না সেই মেকানিক বা ডাক্তার যাই হোক। আবার মিষ্টি হাসল, একই কথা। আপনার মোবাইল হল নাটের গুরু মানে আসল কালপ্রিট। বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করেন তো তাই। সারাদিন ফেসবুকে সুন্দর সুন্দর ফেস দেখেন আর-
আর বেশি শুনতে ইচ্ছে হল না মনের। টেবিল থেকে কাগজটা তুলে নিয়েই পাশের ঘরে। মন যতটা খারাপ হয়েছিল এখানে এসে তার চেয়ে দশগুণ ভাল হয়ে গেল। এখানে আবার দরজার মাথায় লেখা 'সুইট হার্ট'। বা বা কি সুন্দর নাম। উঁকি পাড়ল দরজার ভেতর।
সুইট হার্টই বটে। আহা এ যেন ডানাকাটা সুন্দরী। কি অপরূপ রূপ গো।
-আসুন স্যার।
কি মিষ্টি ডাক ডাকল মেয়েটি। ক্ষণিকের জন্যে মন ভুলে গেল সে এসেছে মোবাইল সারাতে। এসেই ঝপ করে বসে পড়ল সুন্দরীর সামনের চেয়ারে। স্থির মুগ্ধ দৃষ্টিতে তার মুখের দিকে চেয়ে সামান্য মাথা নাড়াতে নাড়াতে মৃদুস্বরে বলতে লাগল, সো সুইট! সুইট হার্ট! মাই সুইট ড্রিম।
মেয়েটি হয়ত তার এই বিড়বিড়ানি খানিকটা হলেও শুনেছিল। কিন্তু তার মুখে রাগ নেই কিন্তু মিষ্টি হাসি।
-আপনি বুঝি মিষ্টি খেতে খুব ভালবাসেন? এই যে সর্বক্ষণ সুইট সুইট করছেন?
মুগ্ধ অপলকে তাকিয়ে মন মনে মনে বলল, কি আশ্চর্য। একজন মিষ্টি দে নাম ধরে ডাকলে তেঁতো হয়ে যাচ্ছে আর এই সুইট হার্ট নিজে থেকেই মিষ্টি দিতে চাইছে। সে চোখ বুজল। বোজা চোখে ঠোঁটদুটো তার গোল্লা হয়ে গেল। সুইট হার্ট খিলখিল করে হেসে বলল, বুঝেছি বুঝেছি। আপনার মনের রিকনসিলিয়েশন মানে কোথায় গলদ সে তো বেরিয়েই গেছে। আপনার কেস হিস্ট্রি পাশের ঘর থেকে এসে পৌঁছে গেছে আমার কম্পিউটারে। এখন আপনার সহায়তায় আপনাকে রোগমুক্ত করার দায়িত্ব আমাদের।
মনের এই সময় মোবাইলের কথা মনে পড়ে গেল। সে ভাবল ইস মোবাইল যদি ভাল থাকত তবে এমন সুইট হার্টের মুখের ছবি সে তুলে নিতে পারত। তাড়াতাড়ি বলল, আমার নয় আমার মোবাইলের।
-হ্যাঁ হ্যাঁ আপনার মোবাইল আগে আপনাকে বিগড়েছে। তারপর নিজে গোল্লায় গেছে। এই হয়। জগতের এটাই নিয়ম। কিচ্ছু ভাববেন না। আমরা আছি।
কথাটা মনের দারুণ পছন্দ হল। বিড়বিড় করে বলল, ও মাই সুইট হার্ট।
সুইট হাসল সুন্দরী। বলল, সুইট হার্ট হতে গেলে তো একটা সুইট হোম চাই ডিয়ার।
মন্ত্রমুগ্ধের মত মন বলে উঠল, চাই-ই তো। গান গাওয়ার মত করে বলল, হোম সুইট হোম।
সুন্দরী উঠল, চল পাশের ঘরে।
-সেখানে কি?
-গেলেই দেখবে।
পাশের ঘরটা বেশ জবরদস্ত গেট দিয়ে ঘেরা। মুখে আবার পাহারা। গেটের ওপরে লেখা' মাই সুইট হোম।'
মনের মন নেচে উঠল, কি সুন্দর কি সুন্দর। একটা মোবাইল সারানোর জন্যে কত কি?
-তোমাকে ভর্তি করে নেওয়া হল। সুইট হার্ট বলল।
-আমার মোবাইলকে। ভুল শোধরাবার চেষ্টা করল মন।
-হ্যাঁ সে তো বটেই। মোবাইল তো থাকবে তোমার সঙ্গেই। এখন একমাসের চার্জ সাত হাজার সাতশ সাতাত্তর টাকা এডভান্স দিয়ে দাও।
সামান্য মোবাইল সারাতে এত টাকা? আবার এত সময় কেন? সে তাকাল সুন্দরীর মুখের দিকে। কিন্তু সুইট হার্টের সুইট স্মাইল আবার তাকে বিভ্রান্ত করল। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলে উঠল, কিন্তু- কিন্তু এত টাকা তো আমার নেই।
-তা না থাকতে পারে। তবে পকেটে যে ক্রেডিট কার্ড আছে তা আমাদের গেটের স্ক্যানারে ধরা পড়েছে। এখন দিয়ে দাও।
-কিন্তু এত টাকা-
-হবেই তো। আমাদের মাথা দিয়েই যে তোমার মাথা সারান হবে মাই ডিয়ার। মাথার তো একটা দাম আছে? হয় তোমার বা আমাদের?
-আমার একাউন্টে এখন এত টাকা নেই।
-পরে হবে। এখন যা আছে তাই দাও।
-না না আমি বাড়ি যাব। আমি জল খাব।
-এখানে ঢোকা যায় বেরোনটা আমাদের ইচ্ছে। জল আমরা দেব। বোতল বোতল গামলা গামলা। যত খুশি।
একজন সিকুরিটি গার্ডের মুখ দেখা গেল দরজায়। মিষ্টি হাসি কিন্তু ভয়াল দর্শন।
পকেট থেকে ক্রেডিট কার্ড বার করতেই হল। তার নম্বর নিয়ে তখন কম্পিউটারে ব্যস্ত সুইট হার্ট। হঠাৎ যেন একটা হাতির শক্তি মনের শরীরে। তড়াক করে লাফাল। খপ করে সুইট হার্টের হাত থেকে ক্রেডিট কার্ড ছিনিয়ে নিয়ে এক ধাক্কায় সিকুরিটিকে সরিয়ে দৌড়। রাস্তায় নেমেও এক কিলোমিটার দৌড়ে তবে সে নিশ্চিন্ত। বাড়ি থেকে এক সপ্তাহ বেরোয় নি। যদি ওরা আবার পুরে দেয় ভেতরে।
এক বন্ধু তো হেসেই খুন, আরে বাবা মন সার্ভিস সেন্টার মোবাইলের সার্ভিস সেন্টার হতে যাবে কেন? ও তো একটা পাগলা গারদ। আজকাল এমন লেখে। মন সার্ভিস সেন্টার, শান্ত নীড়, লিটল নেস্ট, সুইট হার্ট এই সব। যাতে মানসিক রুগী আগে থেকে বুঝতে না পারে। আর তুই কিনা-
মন এখন ভাবছে তার নামটা মনোরঞ্জন থাকলেই ভাল হত। তাহলে আর নিজের নাম মাহাত্মে এত গদগদ হয়ে এমন বিপজ্জনক ভুলটা করতে পারত না।
-------------------------
Dr. ARUN CHATTOPADHYAY
181/44 G.T.ROAD (GANTIR BAGAN)
P.O. BAIDYABATI,
DIST. HOOGHLY (PIN 712222)
W.B. INDIA