Click the image to explore all Offers

ছোটগল্প ।। বেড়ালের মা ।। সংঘমিত্রা সরকার কবিরাজ

বেড়ালের মা

সংঘমিত্রা সরকার কবিরাজ
 
তাপসী বিকেলে বারান্দায় ব্যালকনির  ছাদের  গাছগুলোতে জল দিচ্ছিলো। টবের নতুন লাগানো গন্ধরাজ ফুলের গাছটায় নতুন ফুল এসেছে। বিন্নি আর তিন্নি মিলে পায়ের কাছে খেলে বেড়াচ্ছে। দুটোই ভীষণ দস্যি হয়েছে।দিন কয়েক ধরে মুন্নিটার পাত্তা নেই , কি যে হলো কে জানে ?  মুন্নি হলো রাস্তার বিড়াল।দুদিন ধরে তাপসীর মন ভালো নেই। মুনিয়ার কলেজ খোলার সময় হয়ে গেলো।  ধীর পায়ে ছাদে উঠে আসে তাপসী। বিকেলের দিকে রোজ ছাদে একটু হাঁটে সে। ব্যস্ত শহরে বিকেলে তো হাঁটতে বেরোনো যায় না ,আর সকালে  চোখ খুললেই তো সাঁতার শুরু সংসার সমুদ্রে ,মর্নিংওয়াক তো সেখানে বিলাসিতা ,তার চেয়ে বাবা এই ভালো , বিকেলে একটু ছাদে হেঁটে নেওয়া।  হঠাৎ তার নজর যায় সিঁড়িঘরের  কার্নিশের দিকে । আরে ! সিঁড়ি ঘরের ঝুল বারান্দাটাতে  ঘুঘু পাখিটার যে দুটো বাচ্চা হয়েছিলো ,আজ তো তাদের কই দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না।বাসাটাতো ঠিকই আছে।কার্ণিশের নীচের দিকে করে দুটি ঝুড়ি শক্ত করে বেঁধে দিয়েছে সে, সেখানে কখনো পায়রা কখনো ঘুঘুরা এসে বাসা বাঁধে। রোজ বিকেলে এসে সে একটা পাত্রে জল দিয়ে যায় খাবার ও দিয়ে যায়, যাতে মা গুলোকে খাবারের খোঁজে বেশি দূরে না যেতে হয়। তাহলে কি বাচ্চাগুলো উড়ে গেছে? পশু পাখিদের জগতে কখনো বাচ্চারা উড়ে যায়। মাকে ছেড়ে বাঁচতে শেখে। আবার কখনো বাচ্চারা বড় হয়ে গেছে বুঝলে , নিরাপদে সুরক্ষিত আছে বুঝলে মা' রায় তাদের ছেড়ে চলে যায়। কে জানে , তাপসী সেরকম মা হতে পারবে কিনা। দেখতে দেখতে মুনিয়া কত বড় হয়ে গেলো।  যে মুনিয়াকে সে এতদিন এপাড়া থেকে ও পাড়া  একা টিউশন পড়তে যেতে ছাড়তো না , নাচের স্কুল ,সুইমিং ক্লাস ,এমনকি বড় রাস্তার মোড়ে স্কুল বাসে সাথে করে গিয়ে তুলে দিয়ে আসতো , আবার ঝড় জল বৃষ্টি যাইহোক না কেন ছুটির সময় রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থেকে নিয়ে আসতো এই সেদিন অবধি ,আজ বাদে কাল সে রাজ্য ছেড়ে ভিন রাজ্যে পড়তে চলে যাবে। অনেক দিন ধরেই মুনিয়াকে এবার ছেড়ে দিতে হবে সে বুঝতে পারছিলো। এমনিতে এতদিনে সে চলেই যেতো নেহাত করোনার জন্য সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিলো তাই। তাছাড়া মুনিয়া আজকাল যেন এমনিতেই  একটুকুতেই বিরক্ত হয়। সবকিছুতেই তার মনে  হয় তাপসী তার উপর অতিরিক্ত খবরদারি করছে। তার নাকি তাপসীর স্নেহের নামে অতিরিক্ত  শাসনে  আজকাল দমবন্ধ হয়ে আসে। খাওয়া পড়া সবকিছুতেই একটা চাপা অসহযোগ আন্দোলন। তাপসী বুঝতে পারে না ,কোথায় ভুল হলো।  সেতো মুনিয়ার ভালোই চায়। তবে কি প্রত্যেক মাকে সন্তানের খাতিরে বেড়ালের মা হতে হয়। পাখিদের মতো বাচ্চাদের উড়ে যাওয়াকে স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে হয়। সব মা'রা কি এতো সহজে পাখির ছানার মতো  সন্তানকে উড়তে দিতে পারে? শেষ বিকেলের রাঙা সূর্যকে অন্ধকারে তলিয়ে যেতে দেখতে দেখতে তাপসীর চোখের কোনে অবুঝ জল এসে উঁকি দেয়।
-------------------- 

✒️সংঘমিত্রা সরকার কবিরাজ।



Post a Comment

2 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.