Click the image to explore all Offers

অণুগল্প ।। জননীর যন্ত্রণা ।। অশোক দাশ



 

জননীর যন্ত্রণা 

 অশোক দাশ


সবে সকাল হয়েছে, পূব দিক লালে লাল করে সূর্য উঁকি মারছে ।এই সাত সকালেই  হৈ চৈ শুরু করে দিয়েছে কেলো আর ভুলো ।বিধবা মনসার দুই সন্তান ।বড়োটির বয়স দশ, ছোটটির ছয় ।এক  মস্ত শোল মাছ ধরেছে ।আনন্দে নাচতে নাচতে ছোট শিশুকে কোলে করার ভঙ্গিতে মাছটিকে হাজির করে মা- এর সামনে ।দু ' ভাই চিত্কার করে বলতে থাকে 'মা শোল মাছের ডালনা রান্না করবে, শোল মাছের ঝাল করবে, খুব মজা করে খাব '।
         অতবড় মাছ  দেখে মনসার শুকনো মুখে হাসি ফুটে ওঠে । তার চোখ গুলো চক চক করে ওঠে ।মনে মনে হিসাব করে মাছটা বিক্রি করলে অন্ততঃ ছেলে গুলোর মুখে দু'টি গরম ভাত দিতে পারবে ।আজ তিন দিন পেটে একটা দানাও পড়েনি ।
          কয়েক ঘণ্টা পরে মাছটা বিক্রি করে বাজার সেরে বাড়ি ফেরে মনসা । শুরু হয় অন্তঃদ্বন্দ্ব ।ছেলে গুলোকে কী বলবে সে! হতভাগী তুই এ কি করলি! সন্তানের মুখ থেকে তুই খাবার ছিনিয়ে  নিলি! তুই মা না পাষানি!
না, না ঠিকই করেছি, অন্ততঃ একটা দিন তারা পেট ভরে খাক্ এই গরিবের সংসারে ।মনসার চোখ থেকে ফোঁটা -ফোঁটা  অশ্রুর কণা গড়িয়ে পড়ে তার গণ্ডদেশে ।
          এক সময়  সেই প্রতিক্ষিত ক্ষণটি উপস্থিত হয় ।দুরু দুরু বুকে পাতাভর্তি ভাত মনসা আগিয়ে   দেয় ছেলেদের  সামনে ।ক'দিন তারা গরম ভাতের ঘ্রাণ পায়নি ।তাই ক্ষুধার্ত নেকড়ে র ন্যায় গোগ্রাসে গিলতে থাকে ভাতের গ্রাস ।অপলক নয়নে তাকিয়ে থাকে দুখিনী মা ।এক সময় খেয়াল হয়, মনে পড়ে মাছের কথা ।'ক ই গো মা, শোল মাছের ডালনা '-- বলে ওঠে ভুলো। 'বললুম তোমাকে শোল ঝাল করতে '-- বলে ওঠে কেলো ।' ক ই গো মা দাওনা, ভাত যে শেষ হয়ে এলো '।ছেলেদের বার বার আবেদন উপেক্ষা না করতে পেরে, অবশেষে বুকের ব্যথাকে দমন করে , চিত্কার করে  বলে ওঠে মনসা 'মাছ খাবার বরাত তোরা করেছিস যে মাছ খাবি, শুধু  মাছটা  কি আগুনে  পুড়িয়ে খেতিস '? কান্নায় ভেঙে পড়ে মনসা ।চোখ হতে ঝরে পড়ে শ্রাবন ধারা ।
            এক সময় বড়ো ছেলেটা বুঝতে পারে সব কিছু ।বুঝতে পারে মা- এর ব্যথা- বেদনা ।সে উঠে যায় মায়ের কাছে ।কাপড়ের আঁচল দিয়ে মুছে দেয় মায়ের চোখের জল এবং বলতে থাকে ' মা , তুমি কেঁদো না, আবার আমরা এর থেকে বড় মাছ ধরবো, আমরা দু'ভাই মিলে রোজগার করে চাল কিনে আনবো, আর তুমি ভালো করে শোলমাছের ডালনা, শোল ঝাল রেঁধে আমাদের পেট পুরে খাওয়াবে '।
          ছেলের কথায় মায়ের  মুখে ফুটে ওঠে হাসির রেখা ।ছেলেকে বুকে জড়িয়ে হাসি- কান্নার দোলায় দুলতে থাকে ।
            কিছুক্ষণ আগে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। শরতের আকাশ থেকে সরে গেছে কালো মেঘটা।উজ্জ্বল  সোনালি  রোদে ঝলমল করে ওঠে মনসার  ছোট্ট আঙিনা ।

ছবিঋণ- ইন্টারনেট ।

 
------------------------------ 
 


 অশোক দাশ 
ভোজান, রসপুর, হাওড়া , পঃবঙ্গ, ভারত 

 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.