প্রথম খণ্ড - শেষ পর্ব
"মনন, দেখ দেখ ...."
"আহ মা, বাইরে মাথা বার কোরো না" - মনন বলে মাকে, কিন্তু তার চোখ সামনের দিকেই। গ্রামের সোজা রাস্তা ধরে তাদের গাড়ি চলেছে। একটু দূরেই এক বড় তিনতলা বাড়ি আর তার সামনে বিশাল মাঠ। সমস্তটাই সাজানো ফুল আর কাগজের শিকলি দিয়ে। বাড়িটির সামনেই বেশ বড় মঞ্চ।
গাড়ি গিয়ে থামে মাঠের পাশেই। ব্যাজ পরিহিত দুটি সুবেশা তরুণী এগিয়ে আসে। তাদের হাতে ফুলের বোকে। মানদার হাতে সেটি তুলে দিয়ে নমস্কার করে বলে প্রথম তরুণী - স্বাগতম ম্যাডাম। আসুন। আপনাদের জন্য সবাই অপেক্ষা করছেন।
মানদা মৃদু হেসে বলেন - কি করে চিনলে?
মেয়েটি আবার হেসে বলে - এই গাড়ি আমাদের চেনা। অখিলবাবু স্যার এই গাড়িতেই আসতেন।
মনে মনে ভাবে মানদা, কি স্মার্ট আজকালকার মেয়েগুলো। এই গ্রামেও কি সুন্দর রপ্ত করেছে আধুনিক আপ্যায়নের কায়দা কানুন।
মঞ্চের পাশেই তৈরি হয়েছে অস্থায়ী গেস্টরুম। সেখানে পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গেই হাতজোড় করে এগিয়ে এলেন বিভূতিবাবু আর দেবাঞ্জনবাবু। দুই শিক্ষকেরই আজ পরনে পাটভাঙ্গা ধুতি পাঞ্জাবি কাঁধে শাল। বিভূতিবাবু বলেন - আজ আমাদের আয়োজন সার্থক হল। অখিলবাবুর পরিবারের মানুষরাই এসে গেছেন।
ওখানেই হালকা জলখাবার আর চা এসে গেল। জলখাবার পর্ব চুকতেই মাইকে একটি মিষ্টি গলার ঘোষণা ভেসে এল - আমরা অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি ইতিমধ্যেই আমাদের মধ্যে উপস্থিত হয়েছেন আমাদের সকলের শ্রদ্ধেয় প্রয়াত অখিলবাবুর স্ত্রী মানদা দেবী ও ওনার পুত্র মননবাবু। দুজনকেই আমরা মঞ্চে আহবান করছি।
মানদা ও মননকে মঞ্চে উত্তরীয়, ফুলের বোকে আর স্মারক দিয়ে বরণ করে নিলেন স্কুলের সভাপতি মহাশয়। মানদা একদৃষ্টে চেয়ে আছেন ঘোষিকা মেয়েটির দিকে। খুবই সুন্দরী, সপ্রতিভ আর মিষ্টি গলার অধিকারী মেয়েটিকে খুব চেনা চেনা লাগছে। কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছেন না।
অনুষ্ঠান শেষ হল কিছুক্ষন পরেই। এবার মেয়েটি মানদাকে এসে প্রণাম করে বলে - আমি অগ্নিমিত্রা। ইংলিশ অনার্সের ছাত্রী। স্কুলের পাশেই আমাদের বাড়ি। মা আপনাকে আমাদের বাড়ি নিয়ে যেতে বলেছেন।
মানদা অবাক হয়ে বলেন - তোমার মা আমাদের চেনেন?
মেয়েটি বলে - হ্যাঁ তো। মা আপনাদের বাড়ি গিয়েছিলেন।
এইবার বিদ্যুৎ চমকের মত মানদার মনে পড়ে সব। আরে, এই মেয়েটির মুখে তো বিন্দুবাসিনীর আদল বসানো। তবে কি ...
তিনি অগ্নিমিত্রার হাত ধরে বলেন, আচ্ছা মা, আমি একবার আমার ছেলের সঙ্গে কথা বলে আসি, কেমন।
মনন বিভূতিবাবু সহ স্কুলকমিটির সবার সাথে গল্প করছিল। মাকে আসতে দেখে ও এগিয়ে এসে বলে - কিছু বলবে মা?
মানদা সব কথা খুলে বলেন। এও বলেন, তিনি এখানে এসেছেন বিন্দু রহস্য উদঘাটন করতে।
মনন মন দিয়ে সব শোনে।
তারপর অস্ফুটে নিজের মনেই বলে কিন্তু বিন্দুবাসিনী দেবী তো বিয়ে করেননি বলেছিলেন। তাহলে অগ্নিমিত্রা কি করে ওনার মেয়ে হতে পারেন।
যাইহোক মা এ রহস্যের উদ্ঘাটন করতেই হবে। চলো আমরা ওদের বাড়িতেই যাব। মনন স্কুল কমিটির সবার কাছে বিদায় নেন এবং বলে তারা বিন্দুবাসিনীর বাড়িতে যাচ্ছেন। বিভূতিবাবু বলেন, অনেক ধন্যবাদ আপনাদের। আমরা এখন এখানেই আছি কোন প্রয়োজন হলে আমাদের বলবেন। অগ্নিমিত্রা হাসিমুখে এগিয়ে আসে এবং ওদের দুজনকে নিয়ে স্কুলের পাশেই একটি সুন্দর ছোট্ট বাগান ঘেরা দোতলা বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়।
মনন লক্ষ্য করে বাড়ির সামনে এসেই মায়ের মুখ কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠেছে। বিন্দুবাসিনী স্মিতমুখে হাতজোড় করে এগিয়ে আসেন - আসুন আসুন দিদি কি সৌভাগ্য আমার। আপনারা অবশেষে আমার বাড়িতে এলেন।
একতলায় একটি ঘরের মধ্যে ওদের নিয়ে আসে বিন্দুবাসিনী। সেটি যে বসার ঘর দেখেই বোঝা যায়। তিন দিকে সোফা পাতা এবং একটি ছোট সেন্টার টেবিল। একটি টিভি আছে ঘরটিতে এবং দুটি খুব বড় বড় বইয়ের আলমারি যাতে নানারকম বই ঠাসা। সোফায় বসে মানদার চোখ চলে যায় বইয়ের আলমারির দিকে। সেখানে সাজানো সারি সারি বই। দ্বিতীয় তাকে রবীন্দ্র রচনাবলীর সম্ভার এবং তার উপর একটি বাঁধানো ফটোগ্রাফ। মানদা চমকে গিয়ে দেখে সেটি আর কারো নয় অখিল বাবুর ছবি।
বিন্দুবাসিনী বলেন, আপনারা বসুন আমি এক্ষুনি আসছি। আয় মা একবার ভেতরে আয়।
অগ্নিমিত্রাকে নিয়ে বিন্দুবাসিনী ভিতরে চলে যান। মনন মাকে খুব নিচু স্বরে বলে, দেখো মা আমরা এখানে অতিথি হিসেবে এসেছি। তুমি এমন কিছু করো না যাতে বাবার মান সম্মান নষ্ট হয়। ঝাঁজিয়ে ওঠেন বিন্দুবাসিনী - এ কথা তুই কি করে বলছিস বাবু। যে মানুষটার জন্য আমি সেই কোন ছোট্ট বয়সে ঘর ছেড়ে চলে এসেছিলাম, তিল তিল করে এই সংসারটা তৈরি করেছিলাম, সেই মানুষটির ছবি এই বিন্দুবাসিনী ঘরের আলমারিতে সাজিয়ে রাখে কোন অধিকারI। তার ওপর তোর বাবার সঙ্গে ওর বিয়ে ঠিক হয়েছিল। বিন্দুবাসিনীর বাবা তার সম্পত্তির অর্ধেক তোর বাবাকে দিয়ে গেছেন এবং সব থেকে বড় কথা সেদিন বিন্দুবাসিনী বলেছিল সে বিয়ে করে নি। তাহলে অগ্নিমিত্রা কিভাবে এলো। অগ্নিমিত্রা বাবা কে? এইসব প্রশ্নের উত্তর আজ আমি জানতে চাই
মানদা আঁচলে চোখ মোছেন।
ঘরে প্রবেশ করে অগ্নিমিত্রা। তার দুহাতে দুটি প্লেট ভর্তি নানা রকম খাবার। তার ঠিক পিছনেই বিন্দুবাসিনী। তার হাতে টিপট, চায়ের কাপ একটি ট্রেতে। সবকিছু এনে সেন্টার টেবিলে নামিয়ে রাখে অগ্নিমিত্রা। দুজনের সামনে দুটি খাবারের প্লেট তুলে দেয় এবং মিষ্টি হেসে বলে আপনারা এইটুকু খেয়ে নিন মাসিমা। অনেকক্ষণ আপনারা বাড়ি থেকে বেরিয়েছে।
তীব্র স্বরে ঝাঁজিয়ে ওঠেন মানদা - এখানে আমি জল স্পর্শ করবো না। তোমার লজ্জা করে না তুমি আমাদের বাড়িতে ডেকে এনে খেতে বলছ। তোমার বাবার নাম কি আমার জানার প্রয়োজন আছে।
মনন অপ্রতিভ হয়ে মাকে বলে - আঃ, কি হচ্ছে মা! চুপ করো না।
অগ্নিমিত্রার হাসিমুখটা নিমেষে থমথমে হয়ে যায়। তার দু চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে থাকে। সে হঠাৎই বলে ওঠে - আমার বাবা নেই মাসিমা। বাবাহীন মেয়েরা তো এই সমাজে বোঝা। আমার নিজের পরিচয়ের কোনই মূল্য নেই কোথাও। আমি অনেক আশা করে অনেক ভালবেসে আপনাদের জন্য এই খাবারটা এনেছিলাম। ঠিক আছে আপনাকে জলস্পর্শ করতে হবে না। আপনি যা ভাল বোঝেন তাই করুন।
কান্নায় ভেঙে পড়ে অগ্নিমিত্রা তারপর একছুটে ভিতরে চলে যায়।
বিন্দুবাসিনী দৃঢ় কণ্ঠে বলেন - অগ্নিমিত্রা আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। বাবা ছাড়াই এই মেয়েকে আমি তিলে তিলে বড় করেছি। কোনদিন ওর চোখের জল পড়তে দিইনি। ওকে সামান্যটুকুও বাকি নি কোনদিন। ওর কি দোষ ছিল আপনি ওকে এভাবে কাঁদিয়ে দিলেন। আপনাদের জন্য খাবারগুলো বানিয়েছিল ভোর থেকে উঠে। ওর চোখে অখিলবাবু দেবতা। এই স্কুলটাকেও নিজে ছোট থেকে মন্দিরের মতো পুজো করে। ওর কিন্তু এটা প্রাপ্য ছিল না। যদি মনে হয় আমি কোন অপরাধ করেছি তাহলে আমাকে বলুন কিন্তু ওর তৈরি খাবার না খেয়ে যদি আপনারা চলে যান মেয়েটা মনে খুব কষ্ট পাবে।
মায়ের এহেন আচরণে মনন যারপরনাই অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। সে হাতে একটি খাবারের প্লেট তুলে নেয়। বিন্দুবাসিনী ধীরে ধীরে ভিতরে চলে যান। মনন বলে - মা খাবারটা খেয়ে নাও। আমরা এসব নিয়ে তো পরেও আলোচনা করতে পারি।
মানদা নিজের ব্যবহারে নিজেই লজ্জিত হয়ে পড়েন। তিনি খাবারের প্লেটটা হাতে তুলে ধীরে ধীরে খেতে শুরু করেন।
বিন্দুবাসিনী আবার ঘরে আসেন। এখন অনেকটা শান্ত। মানদাকে বলেন - দিদি এদিকে আসুন, হাতটা ধুয়ে নিন। মানদাএবং মনন ভিতরে প্রবেশ করে বেসিনে হাত ধোয়।
বিন্দুবাসিনী তাদের নিয়ে ভিতরে একটি প্রশস্ত শোবার ঘরে নিয়ে আসেন। সেই ঘরে একটি খুব বড় পালঙ্ক পাতা এবং এখানে একটি সোফা আছে। বিন্দুবাসিনী বলেন - দিদি খাটের উপর উঠে বসুন। আপনার যা কিছু জানার আছে আমি সব বলবো। কিন্তু আমি ছেলের সামনে এ নিয়ে কিছু আলোচনা করতে পারবো না।
তিনি অনুচ্চস্বরে ডাকেন - মিত্রা মা, একবার আয়তো ঘরে। ঘরে প্রবেশ করে অগ্নিমিত্রা। ইতিমধ্যেই সে বাইরের পোশাক ছেড়ে একটি উজ্জ্বল হলুদ রঙের তাঁতের শাড়ি পরেছে। এই আটপৌরে সাজে তাকে আরো সুন্দর লাগছে। বিন্দুবাসিনী বলেন - যা তো মা, মননকে নিয়ে তোর ঘরে যা। আমি একটু দিদির সঙ্গে গল্প করি। অগ্নিমিত্রা মননের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলে - আসুন আমার ঘরে। ওরা চলে গেলে বিন্দুবাসিনী খাটের উপর উঠে বসেন।
মানদা বলেন - আমি উত্তেজিত হয়ে যা যা বলেছি তার জন্য আমি খুব দুঃখিত দিদি। কিন্তু আমি জানতে চাই অগ্নিমিত্রার বাবা কে? আপনি তো আমাদের বাড়িতে সেদিন বলেছিলেন আপনি বিয়ে করেন নি। তাহলে আপনি মা হলেন কি করে? আপনি কি সেদিন মিথ্যা বলেছিলেন?
একটুক্ষণ চুপ করে থাকেন বিন্দুবাসিনী। তারপর বলেন - সেদিন আপনাকে যা বলেছিলাম সেগুলো সবই সত্যি কিন্তু তার সঙ্গে একটি ঘটনা সেদিন আমি আপনাকে বলিনি কারণ সেটা সব পরিস্থিতিতে সব জায়গায় বলা যায় না। আজ আমি সেই ঘটনাটাই আপনাকে বলব - শুরু করেন বিন্দুবাসিনী।
সেদিন আমি আপনাকে বলেছিলাম ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে আমার বাবা কোন সময় না দিয়েই চিরবিদায় নেন। আমি অনাথ হয়ে পড়ি। সেই সময় গ্রামের সবাই জানত বিল্টুদাই আমার দায়িত্ব নেবে। কিন্তু বিল্টুদা বাবা মারা যাওয়ার খবর পেয়েও আসেনি। তখনই না হলেও বিল্টুদা এসেছিল এর তিন মাস পরে এবং এসেই সোজা আমাদের বাড়ি। সেদিনটা ছিল রথযাত্রা। আমি বাড়িতে একাই ছিলাম। তখন বিকেল। বাড়ির সামনে ছোট বাচ্চারা রথ টানছিল। আমি গেটের সামনে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। এ সময় কাঁধে একটি ছোট্ট ব্যাগ নিয়ে রিকশা থেকে নামে বিল্টুদা। বাবার মারা যাবার খবর পেয়ে না আসার জন্য বিল্টুদার প্রতি আমার খুবই অভিমান হয়েছিল। বিল্টুদা আমার গম্ভীর মুখ দেখে খুবই বিচলিত হয় এবং আমাকে বলে ভিতরে আসতে বলবে নাকি এখান থেকেই চলে যাব।
একটু থামেন মানদা। জল খেয়ে আবার শুরু করেন - আমি তো বলেইছিলাম বিল্টুদাকে আমি খুব ভালবাসতাম। মনের দুর্বলতা আমার কোনদিনই কাটেনি। তাই অভিমান থাকলেও বিল্টুদা কে আমি ঘরে নিয়ে আসি এবং চা করে খাওয়াই। কথায় কথায় বাবার প্রসঙ্গ উঠে। আমি নিজেকে সামলাতে পারি না। হাউ হাউ করে কেঁদে উঠি আর সে সময় বিল্টুদা আমাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিয়ে বলে আমিতো আছি। তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করো না। এরপর আমাদের অনেক গল্প হয় ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হয়। বিল্টুদা বলে সে ওকালতি পাশ করেই আমাকে বিয়ে করবে।
কথা অসমাপ্ত রেখে রেখে চুপ করে যান বিন্দুবাসিনী।
মানদার মুখ কঠিন হতে থাকে। তিনি দাঁতে দাঁত চেপে বলেন - চুপ করে গেলেন কেন, বলুন তারপর কি হলো?
বিন্দুবাসিনীর চোখ দিয়ে টপটপ করে কয়েক ফোঁটা জল পড়ে। তিনি বলে ওঠেন - সেদিন সেই দুর্বল মুহূর্তে আমরা দুজনেই ভেসে যাই আবেগে। বাবার মৃত্যুর পর আমি এমনিতেই মানসিকভাবে খুব ভেঙ্গে পড়েছিলাম, একা হয়ে গিয়েছিলাম পৃথিবীতে। এইরকম সময়ে কাঁচা বয়সের একটি মেয়ে যাকে ভালোবাসে সে যদি এসে সান্তনা দেয়, আদর করে জড়িয়ে ধরে এবং অভিভাবকের মতো পাশে এসে দাঁড়ায় তাহলে মেয়েটির বোধহয় কিছু করার থাকে না। একজন মেয়ে হয়ে এ কথা আপনি খুব ভালোই বুঝবেন মানদা দেবী। জীবনে ওই একদিনই, আমার বলতে কোন আপত্তি নেই, আমি বিল্টুর সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে জড়িয়ে পড়েছিলাম আবেগের বন্ধনে।
স্তব্ধ হয়ে যান মানদা। বুঝতে বাকি থাকে না কি হয়েছিল সেদিন। আরও স্পষ্ট হয় যখন বিন্দুবাসিনী আবার বলেন - সেদিন আমাদের সেই ক্ষণিকের আবেগের কিংবা ভুলের, যাই বলুন না কেন, ফসল হলো আমার কন্যা অগ্নিমিত্রা। যাকে আমি মিত্র বলে ডাকি। আমি কোনদিনই জানতাম না বিল্টু পরে অন্য কোথাও বিয়ে করবে। কেন বিল্টু এ কাজ করেছিল তার সদুত্তর আজও আমি পাইনি। আমি জানি একজন মেয়ে হিসেবে এ ঘটনা মেনে নেওয়া আপনার পক্ষে কতটা কষ্টের। সেই কারণেই আপনাকে কষ্ট দিতে চাইনি বলেই সেদিন এই কঠিন সত্য বলতে চাইনি। আমার নিজের জীবন হয়তো আমি শেষ করে দিতাম। কিন্তু পারিনি কেবলমাত্র পেটেরটার কথা ভেবে। আমি হয়তো আপনাদের বাড়ি কোন দিনই যেতাম না যদি না বাবার মৃত্যুর পর কাগজপত্রগুলো পেতাম যেখানে বাবা আমাকে আর বিল্টুকে সম্পত্তি অর্ধেক করে দিয়ে গিয়েছেন আমি জানি না এ সম্পত্তি ভাগ আপনি নিতে চাইবেন কি না। কিন্তু আমার মনে হয় আমার মিত্রার যেমনে এই সম্পত্তিতে অধিকার আছে ঠিক তেমনি অধিকার আছে আপনার মননের।
কিছুক্ষণ দুজনেই নির্বাক হয়ে বসে থাকেন। তারপর উঠে দাঁড়ান মানদা। দুহাতে চোখের জল মুছে দেন বিন্দুবাসিনীর। বলেন, আসলে সমস্ত দোষ আমাদের মেয়েদের। আমরা বড় নিঃস্বার্থ ভাবে পুরুষকে ভালোবাসি। কিন্তু পুরুষ, তার মন বড়ই বিচিত্র। তাইতো যুগে যুগে নারীকে সে এত কষ্ট দেয়। আপনার সম্পত্তি নিয়ে কি করবো বা কি হবে এ সিদ্ধান্ত আজকে আমি নিতে পারছি না। আমাকে একটু সময় দিন। আজ আমরা বাড়ি যাই। আমি বাড়িতে গিয়ে আমার ছেলের সঙ্গেও আলোচনা করি এবং তারপর আমি আবার আসবো কয়েকদিনের মধ্যে এবং সেদিন এব্যাপারে আপনার সঙ্গে আমি কথা বলব।
বিন্দুবাসিনী এর কাছে বিদায় নিয়ে মানদা জড়িয়ে ধরেন অগ্নিমিত্রাকে। কপালে একটি চুমুন খেয়ে বলেন - মা তোর মত মিষ্টি মেয়ে ঘরে থাকলে সে ঘর সবসময়ই আলোকিত থাকে। অগ্নিমিত্রা নিচু হয়ে প্রণাম করেন মানদাকে আর বিল্টুর দিকে তাকিয়ে সে বলে - আবার আসবেন। মানদা বলেন - হ্যাঁ রে মা, ওকে নিয়েই আমি আবার আসবো কয়েকদিন পরেই। আজ আমরা আসি।
মা ছেলে এগিয়ে চলে গাড়ির দিকে। ঘরের দরজায় তাদের যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে মা আর মেয়ে।
প্রথম পর্ব সমাপ্ত