অনর্থম
গৌর মোহন ঘোষ
বৃদ্ধ
রামকোমল মোদক যখন মৃত্যুশয্যায় উপনীত হলেন তখন তাঁকে ঘিরে পুত্র
,পুত্রবধু, মেয়ে, জামাই,নাতি,নাতনিদের ব্যস্ততা একেবারে চরমে উঠলো। সকলে
চব্বিশ ঘন্টা তাঁকে এমন ভাবে ঘিরে রাখতে লাগলো যে স্বয়ং যমরাজও যেন সেখানে
পৌঁছতে না পারে। মৃত্যুপথযাত্রী বৃদ্ধের সেবার ত্রুটি তো কেউ রাখলই না বরং
মাঝে মাঝে এমন অতিরঞ্জিত করতে লাগলো যে বৃদ্ধের প্রাণবায়ু আগেই না বেরিয়ে
যায়। জল চাইলে ফলের রস নিয়ে হাজির হয়,বাতাস চাইলে এসি চালাতে ব্যস্ত
হয়ে পড়ে।কে বেশি সেবা করতে পারে তাই নিয়েই যেন প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে
যায়।সব দেখেশুনে বৃদ্ধের আরও একশো বছর বাঁচতে ইচ্ছে করে।
কিন্তু কালের
নিয়ম তো কেউ রদ্ করতে পারে না, আর তাছাড়া বৃদ্ধ নয় নয় করে অন্তত আশিটা
হেমন্তের হিমের পরশ গায়ে মেখে আরও এক হেমন্তের সন্ধ্যায় জীবন সায়াহ্নে
উপনীত হয়েছেন। তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন সংসার নামের এই সাধের তাজমহল।নিজ
কর্তব্যের কোন ত্রুটি রাখেন নি। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া একটুকরো ছোট্ট
খাবারের দোকান থেকে হিসেবি রামকোমলবাবু 'মোদক সুইটস্' নামে এলাকার সকলের
পরিচিত বেশ বড়সড় সুসজ্জিত মিস্টির দোকান গড়ে তুলেছেন।মফঃস্বলে ভালো
পরিবেশে সুন্দর দোতলা বাড়ি বানিয়েছেন। সঙ্গে কিছু ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স, জমি
জমা ,বাগান পুকুরও। দুই ছেলে এক মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন, তাদের ভালো
বাড়িতে বিয়ে দিয়েছেন।বড়ছেলে কোলকাতায় ভালো চাকরি করে, ছোটটি চাকরির
জন্য চেষ্টা করতে করতে এক সময় হাল ছেড়ে বাবার ব্যবসাতেই যুক্ত হয়ে গেছে।
কিন্তু নিন্দুকেরা বলে নাকি রামকোমলবাবু বড় কৃপণ। আসলে তিনি একটু হিসেবি
মানুষ। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাড়তি খরচকে তিনি বিলাসিতা এবং অপ্রয়োজনীয়
বলেই মনে করতেন। নিজে সারাজীবন হাঁটুর উপর খাটো ধুতি আর ফতুয়া পড়ে
দোকানের তাকিয়ায় বসে কাটিয়ে দিলেন। মাঝে মাঝে সংসারের একঘেয়েমিতা থেকে
মুক্তি পাবার জন্য গিন্নি বেড়াতে যাবার বায়না করলেও ব্যবসায় চাপের কথা
বলে বারে বারে এড়িয়ে গেছেন। গিন্নি ও প্রায় দশ বছর হল তাঁকে পাশ কাটিয়ে
অন্তিম গন্তব্যে পৌঁছে গেছেন। রামকোমলবাবু একা দুহাতে গোটা সংসারটা আঁকড়ে
রেখেছিলেন। ছেলেরা পরিণত হলেও তিনি কারোর কাঁধে সংসারের দায়িত্ব অর্পণ
করেননি। শেষ দিন পর্যন্ত দোকানের আয় ব্যায়ের হিসাব নিজে রাখতেন
পুত্রদ্বয় ও পুত্রবধুদের মধ্যে মিল ছিল ঈর্ষা করার মতো।লোকে বলত হেমন্ত আর
দিগন্ত যেন রাম-লক্ষ্মন। শুনে রামকোমলবাবুর বুকটা গর্বে ভরে উঠতো। আজ মৃত্যু
কালেও তাদের এই অটুট বন্ধন দেখে রামকমলবাবুর আনন্দে চোখ থেকে অশ্রু
গড়িয়ে পড়ল।পরম শান্তিতে তিনি চিরকালের জন্য চক্ষু মুদিত করলেন।
সকলে হাউ হাউ করে কেঁদে পিতাকে একবারের জন্য চোখ খোলার আকুতি
জানাতে লাগলো। শুনে প্রতিবেশীরা সকলে ছুটে আসে।সদ্য পিতৃহারা পুত্র
পুত্রবধুদেরকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে তারাও কেঁদে ফেললেন।
ক্রমে রাত বাড়তে লাগলো। আত্মীয়স্বজন কাছে দূরে যে যেখানেই ছিল খবর
পেয়ে সকলেই ছুটে এসেছে। সকলে মিলে মৃতের শ্মশান যাত্রার ব্যবস্থা করছে
।এমন সময় বড় বৌ আরতি সকলের অলক্ষ্যে হেমন্তের হাত ধরে ঘরে টেনে নিয়ে
গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলতে লাগলো," শোন, তুমি তো সারাদিন বাইরে বাইরেই থাকো,
বাবার কত কি টাকা পয়সা আছে, দোকানের হিসেব নিকেশ সব দিগন্ত দোকানে থেকে
থেকে জেনে গেছে। তোমাকে কতদিন বলেছি ছুটির দিনে একবার করে দোকানে গিয়ে
বসতে, কোনদিন শোনোনি! আজ যেটা বলছি দয়া করে শোনো, না হলে আমাদের শেষে পথে
বসতে হবে।"
হেমন্ত
বরাবরই শান্ত স্বভাবের। সাংসারিক বিষয়ে অক্ষরে অক্ষরে না হলেও স্ত্রীর
কথা বেশ মেনে চলে।স্ত্রী কেও তার বেশ বুদ্ধিমতি বলেই মনে হয়। কিন্তু এ
সময়ে চারিদিকে যখন আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, সকল শুভাকাঙ্ক্ষী মানুষেরা
ঘিরে রয়েছে সে সময় স্ত্রী তাকে কি সুপরামর্শ দিতে চায় বুঝতে না পেরে
স্ত্রীর মুখের পানে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইল। আরতি একই ভাবে বলে চললো,"
শোন, বাড়ির বড় ছেলে হিসাবে সকলে তোমাকেই বাবার মুখাগ্নি থেকে পরলৌকিক কাজ
সবকিছুই করতে বলবে। কিন্তু তুমি করবে না। বলবে তোমার অফিসে এখন হেবি কাজের
চাপ আর তোমার পক্ষে কাছা পড়ে, হবিস্যি করে অফিস করা সম্ভব নয়। কিংবা
বলবে তোমার শরীর ভীষণ খারাপ। খুব গ্যাস্টিক প্রবলেমে ভুগছো। এসময় উপোস করে
থাকা,হবিস্যি,ঘিভাত এসব একেবারেই সহ্য হবে না। মোদ্দাকথা যে ভাবেই হোক
তুমি এড়িয়ে যাবে।।" হেমন্ত অবাক হয়ে বললো,"কিন্তু কেন?" আরতি বিরক্ত ভাবে
বলল,"তুমি সারাটা জীবন বুদ্ধু হয়েই রইলে। আরে--, তুমি যখন কাছা পড়ে বাবার
পরলৌকিক কাজে ব্যস্ত থাকবে তখন তোমার ছোট ভাই দোকানের সব হিসাব পত্তর,
বাবার জমানো টাকা পয়সা লোপাট করে দেবে। তাই বলছি বাবা যেহেতু হঠাৎ করেই
মারা গেছেন তাই এখনো সবকিছু সরাতে পারেনি। তুমি কাল থেকে-----"
এই
সময় কথায় ছেদ পড়ল। বাইরে থেকে কেউ একজন হাঁক পাড়ল,"হেমন্ত চলো, আর
দেরি করোনা,রাত বাড়ছে। এরপর তো মরা বাসি হয়ে যাবে"।হেমন্ত ও আরতি দু'জনেই
ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।
শ্মশানে যেতে যেতে হেমন্তের মনের মধ্যে আরতির কথা গুলো তোলপাড় করতে
লাগলো।কি করা উচিত কিছুতেই সে বুঝে উঠতে পারছে না। পিতার পরলৌকিক কাজ করা
তো তার কর্তব্যের মধ্যে পড়ে কিন্তু কর্তব্য পালন করতে গেলে যদি আরতির কথা
মতো তাদের পথে বসতে হয়।বাবা তো কিছুই তাদের নামে উইল করে যায়নি। জানি না
কোথায় কত কি রেখে গেছে।'
বিবেকের
কাছে কিছুটা খোঁচা খেলেও শেষ পর্যন্ত আরতির কথাতেই হেমন্ত শীলমোহর
দিল।ব্যপারটা যতটা কঠিন হবে ভেবেছিল তা মোটেই হল না। শ্মশানে তাকে কাছা
পড়ার ডাক পড়তেই সে অফিসের দোহাই দিতে লাগল।বয়স্ক দু'চারজন আপত্তি করলেও
দিগন্ত নিজে থেকেই এগিয়ে এসে বাবার মুখাগ্নি করল ও কাছা পড়ল।
কিন্তু সমস্যা বাঁধল পরদিন সকালে যখন হেমন্ত অফিস না গিয়ে ঢুকল সোজা
দোকানে। সিন্দুক খুলে সমস্ত কাগজপত্র, হিসাবের খাতা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে
লাগল। কিন্তু একে তো অনভিজ্ঞ তার উপর এই অল্প সময়ে বিশালাকারের খাতাগুলো
ঘেঁটে কিছুই খুঁজে পেলনা। সমুদ্রের মাঝে ডুব দিয়ে মুক্ত খোঁজার
চেষ্টা। ক্যাশবাক্সে হাজার দশেক টাকা ছাড়া আর কিছুই নেই।
খবরটা দিগন্তের কানে পৌঁছালে দাদার অভিসন্ধির কথা বুঝতে তার আর বাকি
থাকে না। তখনই কিছু না বললেও মনে মনে রাগ হল বিস্তর।আর সেই রাগের লাভা
উদগীরণ ঘটলো পরদিন সন্ধ্যায় যখন বাবার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আয়োজন নিয়ে
কথা হচ্ছিল। আরতি ঘর থেকে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলতে লাগলো যে বাবার কাজে তারা
একটি টাকাও দিতে পারবে না। যেহেতু তারা বাবার দোকান থেকে একটা টাকাও
নেয়নি। ব্যাপারটা এরকম বোঝালো যে এতদিন দিগন্ত বাবার সঙ্গে দোকানে থাকায়
লাভের টাকা সব সে পেয়েছে। কথাগুলো দিগন্তকে বেশ আঘাত করল। দিগন্ত ও পাল্টা
গলাচড়িয়ে বলতে লাগলো,"এতদিন মাইনের টাকাগুলো তো সংসারে বাবার হাতে তুলে
দাওনি বউদি? সবই আত্মসাৎ করেছ। আবার বড় বড় কথা বলছ।" উত্তেজনার পারদ
ক্রমশঃ চড়তে লাগলো। চিৎকার,তর্ক,পাল্টা চিৎকারে বাড়ি মাথায় উঠল।
প্রতিবেশী, শুভাকাঙ্ক্ষীরা ছুটে এসে কোনরকমে সামাল দিলেও উত্তেজনার
চোরাস্রোত ফল্গুনদীর মত বইতে লাগলো। আর তার আসল বহিঃপ্রকাশ ঘটলো
রামকোমলবাবুর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া মিটে যাবার পর সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে,
এবং তা এমন পর্যায়ে পৌঁছালো যে,যে কারণে রামকোমলবাবুর বুক গর্বে ভরে
উঠেছিল,যে কারণে বিদায় বেলাতেও তাঁর চোখ দিয়ে আনন্দাশ্রু ঝড়ে পড়েছিল তা
একেবারে ধুলোয় মিশে গেল। সম্পত্তি নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে বৈরীতা এমন
জায়গায় পৌঁছাল যে তার মিমাংসা করতে লোকাল পার্টি পঞ্চায়েত,থানা পুলিশ
সকলেরই প্রয়োজন হল। দুই জা, ক'দিন আগেও যাদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল দুই
সহোদরার মতো,তা এখন ইজরায়েল- প্যালেস্তাইনে পরিণত হয়েছে। দু'ভায়ের
মধ্যে এখনকার অবস্থা দেখলে পিতার মৃত্যুর আগে তাদের সম্পর্ক স্বয়ং
যুধিষ্ঠির এসে ব্যাখ্যা করলেও কারো বিশ্বাস হবে না। রামকোমল বাবুর সমস্ত
স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি ভাগাভাগি হল। রামকোমলবাবু উপর থেকে দেখলেন যে তার
হৃদয়টা কেটে দু'ভাগ হল। তাঁর তিল তিল করে গড়েতোলা সাধের দোকানটা দু'ভাগ
হয়ে নিউ মোদক এবং আদি মোদক সুইটস্ নামে আত্মপ্রকাশ করলো। সুন্দর করে
সাজানো স্বপ্নের বাড়িটার মাঝখান দিয়ে মানুষ সমান কংক্রিটের পাঁচিল উঠলো।
দোকানের আলমারি,শোকেস থেকে শুরু করে বাড়ির খাট আলমারি বাসন- তৈজস সবকিছুরই
চুলচেরা ভাগ হল। ভাগাভাগি থেকে বাদ গেল না বাড়ির পোষা কুকুর আর
টিয়াপাখিটাও।
গঙ্গারাম মূর্মু নামে একজন আদিবাসী ব্যাক্তি বহুদিন ধরে রামকোমলবাবুর
বাড়িতে দেখাশোনার কাজ করত। লোকটি ছিল খুব পরিশ্রমী এবং বিশ্বাসী। কিন্তু
মাঝবয়সেই অসুখে ভুগে বারো ও চৌদ্দ বছরের দুটি নাবালক পুত্রকে রেখে অকালে
মারা গেলেন।মারা যাবার আগে রামকোমলবাবুর কাছে হাতজোড় করে কাঁদতে কাঁদতে
বলেছিল," বাবু, আমার এই অনাথ ছেলে দুটাকে তুমি দেখ। টাকা পয়সা জমিজমা তো
আমার কিছুই নেই। ওরা যেন ভুখা না মরে। একটু শিখিয়ে পড়িয়ে নিও। ওদের
বলেছি ওরা কোনদিন তোমার অবাধ্য হবে না, বেইমানি করবে না।" সেই থেকে
গঙ্গারামের ছেলেদুটি দুখিরাম আর সুখিরাম রামকোমলবাবুর বাড়িতে কাজে লেগে
যায়। বাবার মতো ছেলেদুটো ও ছিল খুব পরিশ্রমী ও বিশ্বাসী। অনেক বছর ধরে
থাকতে থাকতে তারাও এই মোদক পরিবারের অঙ্গ হয়ে উঠেছিল। সারাদিন বাবুদের
ফাইফরমাস যেমন খাটত আবার সমস্ত সুখ দুঃখের সঙ্গীও হত।
ভাগাভাগি তাদেরও বাদ দিল না। দু'ভাই পাঁচিলের দুপাশে কাজ পেল।দুখিরাম
পেল হেমন্তের বাড়িতে আর সুখিরাম গেল দিগন্তের ভাগে। কিন্তু বাবা মারা
যাবার পর সেই যে তারা কাজে ঢুকেছে কোনদিন আলাদা হয়নি। একসঙ্গে ভাগাভাগি
করে কাজ করা, একসঙ্গে খাওয়া, একসঙ্গে বিশ্রাম নেওয়া।আজ ভাগাভাগি হতে
তাদের মন মোটেই সায় দেয় না। দু'জনে হাতজোড় করে অনেক আকুতি করে,"বাবুরা
দয়া করে কেউ একজন আমাদের একসঙ্গে নেন, না হলে তাড়িয়ে দেন। আমরা অন্য কোনো
খানে চলে যাই।" কিন্তু এ বাজারে এমন পরিশ্রমী আর বিশ্বাসী লোক কোথায়
মিলবে? তাই উভয়েই তাদের ছাড়তে নারাজ। বাবুদের ইচ্ছা অনুযায়ী বাড়ির
আসবাবপত্রের মত তাদেরকেও ভাগ করা হল।
ক্রমে ক্রমে হেমন্ত আর দিগন্তের সম্পর্ক এমন জায়গায় পৌঁছাল যে
দুজনের মধ্যে কথাবার্তা তো দূরের কথা একে অপরের মুখদর্শন পর্যন্ত করে না।
পাছে একবাড়ির গোপন কথা অন্যবাড়ি পৌঁছে না যায় তাই দুই ভাই তাদের
কর্মচারীদেরও আদেশ দিল কেউ যেন অপর বাড়ির কারোর সাথে লুকিয়ে চুরিয়েও কোন
সম্পর্ক না রাখে। জানতে পারলে তাকে বরখাস্ত করা হবে।
এইভাবে কেটে গেল বেশ কিছুদিন। একদিন বাবুরা কেউ নেই দেখে দুখিরাম আর
সুখিরাম বাড়ির সামনে একটা বড় গাছের নিচে একসঙ্গে বসে খাবার ভাগাভাগি করে
খেতে শুরু করলো।সুখিরাম বলল," দাদা বিড়ি এনেছিস? খাওয়ার পরে একটা বিড়ি
দিস্। কতদিন তোর সাথে একসঙ্গে বসে বিড়ি টানিনি।" দুখিরাম বলল,"সত্যি,
সারাদিন হাঁপিয়ে উঠি বুঝলি,মন খুলে দুটো কথা বলতে না পেরে।"
এমন সময় কোথা থেকে হেমন্ত ফিরে এসে বাড়ির সামনে তাদের দুজনকে একসাথে
দেখে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে তেড়ে গেল। খাবারের কৌটো গুলো ফেলে দুখিরামের
জামার কলার ধরে টানতে টানতে বলতে লাগলো,"কতবার বলেছি ও বাড়ির সাথে সম্পর্ক
রাখবি না।" দুখিরাম কম্পিত স্বরে কি যেন বলতে যাচ্ছিল।সুখিরাম এসে
হেমন্তের হাতটা চেপে ধরে বলল,"হাতটা ছেড়ে দিন বড়বাবু। আসলে দুটো
ক্ষুধার্ত পেট ছাড়া বাবা আমাদের জন্য আর তো কিছু রেখে যায়নি, তাই আমাদের
মধ্যে ভাগাভাগির কিছু নেই, বিরোধ নেই। মানুষ যখন শুধু পেটের চিন্তা করে
সেখানে কোন দ্বন্দ থাকে না।"
এই সময় দিগন্তও পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে। গম্ভীর ভাবে বলল,"বটে! অনেক
কিছু জেনে গেছিস্। বাবুদের মুখের উপর আবার বড় বড় কথা বলছিস্।চল্ আজ তোর
বেতন কাটা"। সুখিরাম একই ভাবে বলল,"যে অর্থ ভাইয়ে ভাইয়ে বিরোধ করে,যে
অর্থের জন্য ভাই ভাইয়ের মাথায় ঠ্যাঙা মারে আমরা চাইনা সেই অর্থ। আমরা এই
ক্ষিদে নিয়েই বেঁচে থাকতে চাই। আমাদের ছেড়ে দিন বাবু, আমরা অন্য কোনোখানে
চলে যাব।
ছবিঋণ- ইন্টারনেট ।
----------------------------------
Gour Mohan Ghosh
Khamargachi
Balagarh
Hooghly