গোধূলির রক্ত বর্ণ মুছে ধীরে ধীরে অন্ধকারের উত্তরীয়য় আচ্ছাদিত হচ্ছে আকাশ, পাপড়ি মেলে ধরছে নক্ষত্ররাজি। উৎসুক যুবকের অক্ষিদ্বয় নিবদ্ধ দিগন্তপানে ।
লীলাবতীর খনখনে কণ্ঠস্বর নিস্তব্ধতা বিদীর্ণ করে--"সব কটার নাম জানেন?"
ওষ্ঠে প্রথম আলাপের সংকোচ মুছে নিজেকে গোপন করেন যুবক--"একটিরও না "।
হাসিতে উচ্ছ্বল হয়ে ওঠে লীলাবতী, একটি দুটি করে নির্দেশ করে নক্ষত্রদের নাম, অবস্থান, উদয়- অস্তের সময় । দুটি হৃদয়তন্ত্রীতে ঝংকৃত হয় অশ্রুতপূর্ব রাগিণী ।
চন্দ্রমার আলোয় উদ্ভাসিত যামিনী। অঙ্গনে পাশাপাশি উপবেশন করেছেন ত্রিরত্ন- পণ্ডিত, যুবকস্বামী ও লীলাবতী। পিতা-পুত্রের দুইজোড়া অক্ষি কৃতজ্ঞতায় উদ্ভাসিত, পণ্ডিত বললেন--" তোমার নির্ভুল গণনার কারণেই আপন পুত্রকে ফিরে পেয়েছি । আমার ধন্যবাদ জানানোর ভাষা নেই ।"
বড়ো কুণ্ঠিত বোধ করে লীলাবতী, প্রসঙ্গান্তরে গমন করে--" দেখুন পিতা, চন্দ্রদেবকে আজ বেষ্টন করে রয়েছে তিনটি তারকা। বলুন তো, এর ফলাফল কী হওয়া সম্ভব!!"
ব্যাখ্যা আরম্ভ করে লীলাবতী, ম্লান হয়ে যায় দ্বিরত্ন ।
অমাবস্যা রজনী, মসিকৃষ্ণ গগনমণ্ডলের দিকে চেয়ে আছে লীলাবতী । এমন রাত্রিতেই পিতা অনাচার্যদেব নক্ষত্র চেনাতেন, বলতেন--" চক্ষু-কর্ণ খুলে রেখো সবসময়, এই শিক্ষার পথ । যে শিক্ষা লাভ করবে অন্যকে সহজ করে শিখিয়ে দিও ।"
পদশব্দে চটক ভেঙে জেগে ওঠে লীলাবতী, স্মৃতিচারণের পালা সমাপ্ত, ঊষা সমাগত ।
জিহ্বাকর্তনের ছুরিকা হাতে কে এলো--- পিতা নাকি পুত্র!!!!