সত্যজিৎ রায়ের ফটিকচাঁদ
একটি অসাধারণ আকর্ষণীয় চরিত্র
রমলা মুখার্জী
ছোটবেলায় মনের মধ্যে হরেক রকম ইচ্ছেপাখিরা উড়ে বেড়ায়, তারা ডানা মেলতে চায় নীল আকাশে। কিন্তু তাদের এই আকাশকুসুম ইচ্ছেগুলো ছোট্ট মনগুলোর মাঝেই আবার হারিয়ে যায় কারণ বড়রা সবসময়ই 'ছোটর দাবী দাবিয়ে রাখে', বড়রা তাদের বড় বড় ইচ্ছের বোঝা, বাস্তব জগতের পাহাড়-প্রমাণ চিন্তার সমুদ্র ছোটদের মনজগতে সেঁধিয়ে দেবার চেষ্টা করেন। তাই শিশুমনের ইচ্ছেনদী স্বতঃস্ফূর্তভাবে বইবার পথ পায় না- শুকিয়ে যায়।
সত্যজিৎ রায় শিশু-মনস্তত্ত্বের এই শিশুর ইচ্ছের দিকটি ভীষণভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। তাই তো তাঁর ফটিকচাঁদ গল্পের সৃষ্ট ফটিকচাঁদ একটি অসাধারণ আকর্ষণীয় চরিত্র যেটির আবেগ আর রোমাঞ্চ শিশুদের মনে আনন্দের প্লাবন বইয়ে দেয়। শিশুমনের ইচ্ছেপাখির সঙ্গে ডানা মেলে ফটিকচাঁদও উড়ে বেড়ায় নানা স্থানে। সেই ইচ্ছের জগতে বাবা-মায়ের বকুনির ভয় নেই, নেই বিদ্যালয়ের পড়ার চাপ বা বাড়িতে পড়া, সাঁতার, ছবি আঁকা শেখার প্রচণ্ড মানসিক চাপ। ফটিকচাঁদ সেরকমই একটি চরিত্র যেখানে কোন বাধা-নিষেধ, নিয়মকানুন কিছু নেই। অবারিত, উন্মুক্ত, রোমাঞ্চ-ভরা জীবন, যা শিশুমন সবসময়ই চায়। সেই শিশুজগতে আছে দিনরাত এক মজার মানুষের সাথে টোটো কোম্পানি, ইচ্ছে নদীতে তরী ভাসিয়ে যেখানে সেখানে ভীড়ে যাওয়া, তা সে চায়ের দোকানের মত ছোট কাজ হলেও তাতে যেন বাঁধভাঙা আনন্দ। আর আছে হারুণের কাছে জাগলিং এর খেলা শেখা-উঃ সে কি দারুণ।
দুর্ঘটনায় স্মৃতিভ্রংশ ফটিকের আসল নাম নিখিল। যখন তার কয়েক সপ্তাহ পর স্মৃতি ফিরে এল সে বুঝল যে সে আসলে ফটিক নয় নিখিল এবং কলকাতার বিখ্যাত এক ব্যারিস্টারের ছেলে। কিন্তু নিখিল কি চায়? সে কি ফটিক হয়েই থাকতে চায় উন্মুক্ত প্রকৃতিতে বাধাবাধনহীন ভাবে নাকি ধনীর দুলাল নিখিল হয়ে নিয়মের গণ্ডিতে আবদ্ধ জীবন কাটাতে চায়। নিখিল নিজেই দ্বন্দ্বে পড়ে যায়।
শিশুমনস্তত্ত্বের অনুভূতির কুসুমিত সৌরভে ছড়ানো 'ফটিকচাঁদ' চরিত্র ভীষণ সুন্দর একটি সার্থক চরিত্র। সত্যজিৎ রায়ের 'ফটিকচাঁদ' এক অনবদ্য, অনন্য সৃষ্টি।
=====================
স্বত্ব
ডঃ রমলা মুখার্জী,
বৈঁচি, বিবেকানন্দ পল্লী,
হুগলী, ৭১২১৩৪,