অণুগল্প।। বৈধ অবৈধ ।। অনিরুদ্ধ সুব্রত
ছবিঋণ- ইন্টারনেট
বৈধ অবৈধ
অনিরুদ্ধ সুব্রত
"মল্লিকার একটা বয়ফ্রেন্ড আছে জানো !" ---প্রসঙ্গটা খানিকটা এই ভাবে দৌড়চ্ছিল। বড় জা সুচন্দ্রিমা ব্যাপারটা আঁচ করার পর থেকে মুখে মুখে আর কানে মুখে আর ফোনে ফোনে প্রসঙ্গটা দৌড়চ্ছে, বেশ জোরে দৌড়চ্ছে। জেলা শহরের চারতলা বাড়ির তিন তলার সিঁড়ির পাশের ঘর থেকে বেরিয়ে প্রসঙ্গটা সোজা দুর্গাপুর হয়ে রানাঘাট। রানাঘাটের ফুলমাসিকে সাবজেক্ট ধরিয়ে দিলে যেমন অন্য মিডিয়ার আদৌ প্রয়োজন পড়ে না তেমনি। রানাঘাট থেকে এঁকে বেঁকে কলকাতা ছুঁয়ে নবদ্বীপের কালীতলায় ন'পিসির ছোটো মেয়ের শ্বশুর বাড়ি পর্যন্ত। প্রসঙ্গটা ছুটতে ছুটতে এখন পুরো রিলেটিভ লাইনে ভাইরাল।
হাসাহাসি, "ও মা !" , "তলে তলে এতো !" , "ভাব দেখে বোঝার উপায় নেই ! " অথবা "ভাবা যায় !", "শেষে কি না এই বয়সে !" আর অবশ্যই "অথচ ভাবখানা যেন ন্যাকা !" । এই সব তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার কমেন্ট গুলোও দৌড়চ্ছে সমানে।
আজ রঞ্জন অফিস বেরিয়ে যাওয়ার পর, বড়ো জা এর সঙ্গে কথাবার্তার ফাঁকে মল্লিকার মোবাইলটা সামনেই বিছানায় পড়েছিল। হঠাৎ একটা ছোট্ট মেসেজ, " তোমাকে ভীষণ মনে পড়ছে মল্লিকা "। মোবাইলটা সামান্য ভাইব্রেট হয়ে কালো ডিসপ্লের উপরের দিকে পরিস্কার ভেসে ওঠে লেখাটা। বড়ো জা তড়াক করে তাকায়। স্পষ্ট দেখে অচেনা পুরুষের ছোট্ট ছবির পাশে লেখাটা । মল্লিকা মৃদু অস্বস্তি নিয়ে মোবাইলটা বিছানা থেকে তুলে হাতে নেয়। সুচন্দ্রিমা অল্প একটু মুখ টিপে হেসে সংসারি কথার দু'চার বুলি দিয়ে, তাড়া আছে ভাব ফুটিয়ে চলে যায় নিজের ঘরে। তারপর থেকে প্রসঙ্গটা দৌড় শুরু করে ইতিমধ্যে পরিজন আত্মীয়ের মধ্যে চরম ভাইরাল।
দুপুর থেকে সন্ধ্যে । রঞ্জন অফিস থেকে ফিরবে আটটায়, আজ হয়তো আড্ডায় যাবে
না। আজ হয়তো আর একটা নতুন বীভৎস রাত দেখতে চলেছে মল্লিকা। আজ নেশাটা নির্ঘাত মাত্রা
ছাড়াবে। বাড়বে আরও কিছু অশ্রাব্য শব্দ। তবু ছেলে যে হোস্টেলে, অন্তত এটুকু সান্ত্বনা। কিন্তু বাকি আর কিছু মল্লিকা ভাবতে
পারছে না। ব্যালকনির পর্দাটা সরিয়ে দিয়ে,
হোম থিয়েটারে রবীন্দ্রসংগীত চালিয়ে মল্লিকা মনে মনে তবু , ' কেহ কারও মন বুঝে না'।
নির্ধারিত সময়ের সামান্য আগে অফিস ক্লান্ত রঞ্জন ফেরে। মল্লিকার বুকটা মুহূর্তে
হিম হয়ে যায় । সে জানে বড় জা এতক্ষণে নিশ্চিত রঞ্জনকে ফোনে সব জানিয়েছে । আর বড় বৌদির কথা শুনে বা উৎসাহী অন্য
কোনও আত্মীয়ের ছিঃ ছিঃ শুনে এতক্ষণে রঞ্জন রেগে
খার । বুকের ভিতর ঢিব ঢিব চলছে মল্লিকার। তবু এক গভীর প্রতিবাদী যুক্তি জোগাড় করে সে,
একান্ত যদি স্বীকার করতেই হয়, তবে বলবে--- 'হ্যাঁ, কোনও মানুষের সঙ্গে ভার্চুয়াল বন্ধুত্ব
করায় দোষের কী আছে ?' আর যদি বদখোর রঞ্জন সেটা শুনে তেড়ে আসে, তাহলে সরাসরি বলে ফেলবে,
'হাইকোর্ট প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের পরকীয়াকে অপরাধ মনে করে না।'
সাহস করে দরজা খোলে মল্লিকা । রঞ্জনের মুখে ফ্যাক ফ্যাক করা হাসি। মল্লিকা সে হাসি দেখে ঘাবড়ে যায়, মুহূর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে মুচকি হেসে বলে, 'কী ব্যাপার আজ মুড এতো ভালো যে ?'
'---শালা ইঞ্জিনিয়ারকে আজ খাপে ফেলে ব্যানার্জি কনস্ট্রাকশন এর ফাইলটা ঠিক সই করিয়ে নিয়েছি।'
'--- কিন্তু তাতে তোমার এতো খুশি কেন ?'
'---- আশ্চর্য ! খুশি হবো না ? দু'কোটি টাকার টেন্ডার, পুরো টু পার্সেন্ট, হাতে হাতে।'
' কিন্তু অফিসের এই কাজে যখন সিরিয়াসলি ব্যস্ত, তখন হঠাৎ বড় বৌদির ফোন, কী সব বলছে তোমার নাকি ফোনে কোন বয়ফ্রেন্ড কী সব লিখছে । শুনে তো বড় বৌদিকে এমন ঝাড় দিয়েছি, বললাম 'বেশ করেছে বয়ফ্রেন্ড্ করেছে, তোমার সমস্যা কী ?' সঙ্গে সঙ্গে ফোন রেখে দিয়েছে ।'
মল্লিকা যেন বিশ্বাস করতে পারছে না রঞ্জনের কথা। যা শুনে খিপ্ত হওয়ার কথা , সে কথায় বৌদিকে বকেছে ? মনে শক্তি সঞ্চয় করে মল্লিকা এবার প্রশ্ন করলো, ' তা আমার ভার্চুয়াল বয়ফ্রেন্ড্ আছে এই কথা শুনে তুমি রাগ হও নি কেন ? ' রঞ্জন হেসে বলল, ' আমার এই যে টাকার সঙ্গে একটা অবৈধ সম্পর্ক আছে, সেটা জেনেও তো তুমি কোনও দিন কিচ্ছু বলো না আমাকে ।' মল্লিকা বলল, ' আমার সম্পর্কটা ঠিক অবৈধ নয়।' রঞ্জন বলল, ' আমারও তো সুযোগ আছে বলে দু'পয়সা এক্সট্রা কামিয়ে নিচ্ছি, এ আর অবৈধ কী ? যাও দু'কাপ গরম কফি নিয়ে ব্যালকনিতে এসো, গোয়া বেড়াতে যাওয়ার একটা পরিকল্পনা আছে।'
----------------------------------------------
সুব্রত বিশ্বাস (অনিরুদ্ধ সুব্রত)
প্রযত্নে- শংকর প্রসাদ সাহা
গ্রাম +পোষ্ট- পানচিতা
বনগাঁ, উত্তর ২৪ পরগনা
পিন- ৭৪৩২৩৫