ছবিঋণ- ইন্টারনেট
পাশের বেড
দেবব্রত ভট্টাচার্য্য
কি ভাবে এসেছিলাম মনে নেই। কখন কেমন করে সব ব্যবস্থা হলো, কে জানে !এখন বোধ হয় দুপুর। সারা দেহে সাদা জামা চাপিয়ে মুখে ঢাকা সব মানুষ জন ঘুরে বেড়াচ্ছে। বুঝলাম, আমি একটা হাসপাতালের বেডে। নাকে অক্সিজেন মাস্ক।
পাশের বেডে আর একজন শুয়ে। ওর ও মুখে মাস্ক চাপানো। নল লাগানো। সারা গায়ে ঢাকা। তবে ও এখন সজাগ। আমার দিকে পিট্ পিট্ তাকাচ্ছে। ছেলে না মেয়ে ?বয়স কত ?কোথায় বাড়ী ?
বেশী ভাবতে পারি না। চোখ বুজে আসছে। আমার বাড়ীর কেউ তো নেই। কেউ থাকবে না জানি । যদি ফিরি তবে আবার বাড়ীর মেয়ে। বুকে খুব কষ্ট ! যেন এ শরীরটা আমার নয়।
** ** ** **
পাশের বেডের ছেলেটা উঠে বসেছে । আমার ই বয়সের। মুখে মাস্ক নেই। বোধ হয় বেঁচে যাবে এবারের মতো। আমাকে দেখছে। আমার মুখে তো মাস্ক। ছেলে না মেয়ে, সেটাই ও জানে না। আমার তো ফিরে যাওয়া এখনো অনিশ্চিত।
ডাক্তার দিদিমণি এলেন। ওর নাম শুনলাম -বিপ্লব। ও অনেক টা ভালো। তবে আর কয়েক দিন তো থাকতেই হবে ।আবার টেষ্ট হবে। আমার কাছে এলেন ডাক্তার দিদিমণি। চিন্তিত স্বরে বললেন,
-একটু ভোগাবে মনে হচ্ছে। ভয় পেও না গো মেয়ে। সেরে যাবে।
দিদিমণি এগিয়ে গেলেন। ছেলেটা আমার দিকেই তাকিয়ে। মাস্ক পরা মুখে এক ফালি হাসি। আমার চেয়ে বেশ কিছুটা বড় ই হবে ।ও বললো -ভালো হয়ে যাবেন। চিন্তা নেই।
একটু থেমে আবার বললো - আমার একটু হার্টের প্রবলেম আছে। তাই খুব ভয় পেয়েছিলাম। বোধ হয় এ যাত্রায় বেঁচে গেলাম।
কানে শুনছি সব। ছেলেটি, না ছেলে নয়, লোকটি বেশ সুন্দর কথা বলেন। শুনতে শুনতে আবার আচ্ছন্ন হয়ে গেছি কখন, মনে নেই।
** ** ** **
এখন সকাল। ধীরে ধীরে পাশ ফিরলাম। দেখলাম, পাশের বেড টা ফাঁকা। কোথায় গেলেন ? টয়লেটে ?
নার্স দিদিমণি এগিয়ে এলেন। বললেন, - কাল রাতে হার্ট ফেল করে মারা গেছেন উনি।
************************************
দেবব্রত ভট্টাচার্য্য, প্রাচী, শরৎপল্লী, ইন্দা, খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, 721305
***********************************