গ্রন্থ আলোচনা ।। মৃতরাত্রিপুরাণঃ ফজলুল হক ।। আলোচকঃ আবদুস সালাম
মৃতরাত্রিপুরাণঃ ফজলুল হক
আলোচকঃ আবদুস সালাম
ছয়ের দশকে পেলব বাংলা ভাষার ছাঁচ থেকে বেরিয়ে (সমরেশ বসু, বুদ্ধদেব বসু) আসার চেষ্টা করেন। যৌনতাকে সমাজ ও সাহিত্যে মেনে নিতে না পারার অক্ষমতা থেকেই রোমান্সের সূচনা। কবিগুরুর একটি উক্তি মনে করিয়ে দেয়, "যৌনতা মিলনের যে চরম সার্থকতা মানুষের কাছে তা "প্রজনার্থং"নয়। কেননা সেখানে সে পশু, সার্থকতা তার প্রেমে, এইখানে সে মানুষ"। তাই তারা glorious substitute of sex বলে মনে করে।
ভারতীয় দর্শন অনুযায়ী জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত ধর্ম ,অর্থ,কাম ও মোক্ষ। ভারতীয়দের কাছে প্রেম ও কাম সমার্থক।মন ও হৃদয় শরীরের হাত ধরে আসে। শারিরীক মিলন ও যৌনতার প্রশ্নে ভারতীয়দের কখনও রাখঢাক ছিল না। কারণ ভারতীয় দর্শন একৈ পূর্ণ সমর্থন জানায়।
ফজলুল হক বীরভূম জেলার বিখ্যাত কথাকার গণের একজন। অজস্র ছোট গল্প ও দশ খানি উপন্যাস এর জন্ম দাতা। এই বিখ্যাত কথাকার এর বিশেষত্ব প্রবাহমান সমাজের বিচিত্র সব চরিত্রের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ।এই বিশ্লেষণ ধর্মী রচনা তাকে অন্য কথাসাহিত্যিক গণের থেকে আলাদা ভাবে চিনতে সাহায্য করে ।
“মৃতরাত্রিপুরান” উপন্যাসের চরিত্র চিত্রনে আধুনিক নারী পুরুষের যৌনতা ও প্রেমকে নিখুঁত ভাবে চিত্রিত করেছেন। দাম্পত্য জীবনের শূন্যতা মানুষকে অবসাদ গ্রস্ত করে তোলে। অন্যদিকে শরীরের চাহিদা তাকে উদ্যমতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। বেপরোয়াভাবে জীবনের মগ্নতায় আত্মক্ষরণের মগ্নতা । পিতা মাতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বড়ো হওয়া প্রতিটি সন্তানের মনে গভীর প্রভাব ফেলে। সমাজে উপরতলার, নীচু তলার বাড়ির ছেলে মেয়েদের ভিতর দুরকম প্রভাব আমরা লক্ষ্যকরি । নীচু তলার বাড়ির ছেলে মেয়েরা বেশি জেদী হয়ে থাকে।
যৌবনের প্রারম্ভে জীবন্তিকা একজনের সঙ্গে ঘর ছাড়ে। কিন্তু সেখানে সে প্রত্যাখাত হয়। আবার ফেসবুক ঘাঁটতে ঘাঁটতে অন্য এক বন্ধুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেও আবদ্ধ হয় পরিণয় সূত্রে।
সময়ের ফাঁদে নিঃসঙ্গতা নেমে আসে তার সংসারে। স্বামী দূরে চাকরির সুবাদে ও কর্মব্যস্ততার কারণে ঠিক মতো সময় দিতে পারে না যতোটা সময় জীবন্তীকা আশা করে। প্রতিক্ষার জীবনে ক্রমশ নেমে আসে নিঃসঙ্গতা। মুক্তির জন্য হাহাকার করে ওঠে তার উচ্ছল মন। মনকে কিছুতেই বাগে আনতে পারছে না সে।নিজে নিজে মনে মনে খুঁজতে থাকে মুক্তির উপায়। তার মুক্তি এনে দিতে পারে স্বনির্ভরতা,মানে একটা চাকরী।
ইতিমধ্যে এক লেখক বন্ধু তার খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে যে কোন মূল্যে সে মুক্তি পেতে চায়। যৌবনভারত তন্বী মেয়ে নিঃসঙ্গতা কাটাতে তার যৌবন কে কাজে লাগায়। লেখক বন্ধু বৃদ্ধ হলেও যৌবনিক ঢেউ এর তালে তার নৌকা ও দুলতে থাকে বয়স যতই বাধা হোক না কেন । জীবন্তীকা কিন্তু তার সব যৌবন, অদম্য উৎসাহকে তুলে দিতে চাই। সঙ্গদোষে লোহা ভাসে এই প্রবাদটি তার জীবনের অঙ্গ হয়ে ওঠে। আস্তে আস্তে অক্ষমতা কাটিয়ে আদিম খেলায় মেতে ওঠে দুজনে । জীবন্তীকার জীবনে এটি মন্দের ভালো। যৌনতার মাদকতা নারী পুরুষের প্রবল উত্তেজনা বয়স কে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে দ্বিধা করে না।
লেখক অসাধারণ দক্ষতায় যৌনতা সুড়সুড়ির আবেগঘন মুহূর্ত গুলিকে তুলে ধরেছেন। চিত্র কল্পের সৌন্দর্যের অনুভব লিপি আমরা উপন্যাসের শরীরে দেখতে পাই। সংসার জীবনের অন্য সব আনুষাঙ্গিক কাজ কর্মের মতো সম্ভোগ শৃঙ্গার কে তুলে ধরেছেন। শরীরী কামনা সংসার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কামনা বাসনা যে পুরুষের একচেটিয়া নয়, তাতে নারীরও যে সমান অধিকার আছে এই উপলব্ধিটুকু গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের স্বীকৃতী লেখক ছত্রে ছত্রে বিন্যাস করতে সক্ষম হয়েছেন। জীবন্তীকা নিঃসংকোচে বলতে পেরেছে যৌনতায় অদক্ষ লোকটা র প্রতি আমার করুণা ছাড়া আর কি থাকতে পারে।
“মৃতরাত্রিপুরান”-এর আদিম প্রবাহ যেন আমরা প্রত্যেকে বহন করে চলেছি। ভাষা ব্যঞ্জনার ক্রিয়া বিক্রিয়া উপন্যাসটিকে অন্য মাত্রা এনে দিয়েছে।
পাঠক মহলে মৃতরাত্রিপুরান যে সাড়া ফেলে দিবে তাতে কোনো সন্দেহই নেই।
------------------------
প্রথম প্রকাশ বইমেলায়।
দে পাবলিকেশনস,১৩বঙ্কিম চন্দ্র চ্যাটার্জি স্ট্রিট , কলকাতা
সহায়ক মূল ১৫০টাকা
লেখকের এটি সপ্তম তম উপন্যাস।
---------------------------------
সুন্দর একটা সংখ্যা উপহার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ
উত্তরমুছুন