ছবিঋণ- ইন্টারনেট
আকাশের ইতি
প্রতীক মিত্র
ক্রমেই আকাশ ছোটো হয়ে আসে। উঁচু উঁচু ফ্ল্যাটবাড়িতে ভরে যায় মফঃস্বল।কয়েক বছর আগেও বয়স্ক মানুষগুলোর প্রতিবাদকে যখন নেতা-প্রমোটারদের গুন্ডারা ভয় দেখিয়ে দাবড়ানি দিয়ে শীতল নৈঃশব্দ কায়েম করতে পেরেছিল গোটা রাজপথে,বাড়ির বাচ্চাগুলো বেঁকে বসেছিল। তারা মেনে নিতে পারেনি। তারা আকাশে ঘুঁড়ি দেখতে পাচ্ছিল না আর, দেখতে পাচ্ছিল না পাখিদের উড়ান। সূর্যোদয় কিম্বা সূর্যাস্ত কোনোটাই তাদের চোখে না পড়াতে তাদের বেশ অভিমান হল। তারা কীভাবে যেন (সেইটে গোপনই রয়েছে,কেউ জানতে পারেনি এখনো কেন,কিভাবে!)সবাই এক হল আর সারা দিনের কোনো একটা অদ্ভুত সময়ে ধরা যাক সন্ধ্যে যখন অধিকাংশ বাড়িতে মেগাসিরিয়ালগুলো চলে ঠিক তখন এক সুরে তারা প্রায় সমবেত গান ধরবার সুরে কাঁদতে শুরু করলো।সেই কান্না অবিচ্ছিন্নভাবে চলতে লাগলো চলতেই লাগলো যতক্ষণ না বড়রা মেগা সিরিয়ালের আফিমের ঘোর থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে ওদের দিকে মনোযোগ দেয়। তখন ওরা ওদের বক্তব্য পেশ করলো। এইসব উঁচু উঁচু ঘড়বাড়ি তোলা বন্ধ হোক। আকাশে দখলদারি বন্ধ হোক। নেতাদের কানে গেল।কানে গেল প্রোমোটারদের।তারা তো শুনে থ।ব্যাটারা বলে কি? শিখলো কোথ্ থেকে।প্রথমে ব্যাপারটাকে তারা গুরুত্ব না দিলেও পরে দেখলো বিপদ তো বাড়ছে বই কমছে না।মানে খুদে শয়তানগুলো কান্নাটা শুরু করে ওই খিটকেল সময়েই।আর ব্যস।সব বাবা-মামা-দাদু-ঠাকুমা ফোন করে বসে নেতাদের।নেতাদেরও অসুবিধা।হাই কমান্ড থেকে আদেশ আছে মন দিয়ে ওইসব মেগাগুলো দেখার।ফলে ওদেরকেও দেখতে হয়।দেখায় একটু এদিক ওদিক হলে রাতে রিপোর্টে জমা দিতে পারবে না। তখন পোস্ট নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে।ফলে বাচ্চাদের বাঁদরামিতে কিছুদিনের জন্য ওরা এইসব বাড়ি বানানোতে বিরতি টানে।আকাশ রেহাই পায়।কিন্তু তারপর এইসব করোনা-টরোনা এসে যা সব শুরু হল বাচ্চাগুলোকেও ব্যস্ত থাকতে হল সারাক্ষণের অনলাইন ক্লাস নিয়ে।ফলে সময়ে অসময়ে আকাশ দেখার সহজাত স্বভাবটা ওদের যেন কোন ফাঁকে কেটে গেল।ওরা আর আকাশ নিয়ে মাতামাতি করে না।ওরা এইসব প্রযুক্তির যুক্তিতে বেশ আছে।ফলে...যা হওয়ার তাই হল;ক্রমেই আকাশ ছোটো হয়ে আসতে থাকে।উঁচু উঁচু ফ্ল্যাটবাড়িতে আবারও হাঁসফাঁস করতে থাকে মফঃস্বলের আকাশ।
----------------------------
প্রতীক মিত্র
কোন্নগর-712235,পশ্চিমবঙ্গ