ফেলান রায়ের লাশটা অনেক রাতে শ্মশানে এলো । রামপুর গ্রামের পাশ দিয়ে যে চৌত্রিশ নম্বর জাতীয় সড়ক সোজা আসামের দিকে গেছে সেই রাস্তায় আজ ভোরে ফেলান রায়
বড় লরির নীচে চাপা পড়ে মারা গেছে । একটু বেলা বাড়তে লোকজন দেখে নিকটবর্তী থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে লাশটি মর্গে পাঠানোর
ব্যাবস্থা করে ।আইনি সব কাজ মিটিয়ে ফেলানের লাশ যখন শ্মশানে পৌছলো তখন রাত দুটো ।
শীতের রাত ।এমনিতেই কুয়াশায় ঢাকা তার উপর ঘোর অমাবস্যা ।সর্বসাকুল্যে ছয়জন শ্মশান যাত্রী । ফেলানের একমাত্র ছেলে রতন থাকে ব্যাঙ্গালোর ।গাঁয়ের আর পাঁচটা ছেলের মতো সেও কাজের জন্য দূর প্রদেশে পারি দিয়েছে ।
প্রতিবেশী দীনু ফেলানের ভাস্তেকে বললো-রতন কে খবর দিচিস ?
হ্যাঁ কাকা মুই ফোন কচ্চং।ওই তো অসিবার পাবার নয়।
দীনু বললো-তা তো ঠিকে।মুখত আগুন তালে তোকে দেয়া নাগবে ?
চিতা সাজাতে সাজাতে তিনটে হয়ে গেলো ।
কিন্তু হঠাত্ কোথা থেকে এক পাগল ছুটে এসে ফেলাণের লাশ ধরে টানতে লাগলো ।একটা বড় চার্জারের আলো তে সবাই দেখতে পেলো অনেকগুলো কালো মানুষ পাগলার সাথে লাশ টানছে ।
এই শ্মশানে দীনু নতুন নয়।বহুবার প্রতিবেশিদের শেষ কাজে এসেছে ।এমন পরিস্থিতির সন্মুখীন হয়নি ।
পাগল টা চেঁচিয়ে উঠলো তোরা জানিস না এটা নিবারণ পাগলার শ্মশান ।
এখানে আসলে ভেটি দিতে হয় ।ওই যে মায়ের মন্দির ওখানে তোরা কেউ ভক্তি করিস নি ।
তোদের চিতা জ্বলবে না ।
দীনু এবার একটু আশ্চর্য হলো ।এটা আবার কবে থেকে চালু হলো? দু একজনের মুখে একথা শুনেছিল কিন্তু দেখেনি সে ।
দীনু সাহস করে বললো বাবা আমাদের ভুল হয়ে গেছে এই বলে সবাইকে নিয়ে মায়ের মন্দিরের সামনে গিয়ে প্রণাম করে চিতার কাছে আসতেই সবাই অবাক ! কেউ নেই।যেমন সাজানো চিতা তেমনি আছে ।
এবার ফেলাণের ভাস্তে একগুচ্ছ পাটকাটিতে আগুন ধরিয়ে ফেলাণের মুখাগ্নী করলো ।
সব শেষ করে সবাই যখন ফিরে যাবে তখন আর এক কাণ্ড ঘটলো ।
শ্মশানের গেটে মস্ত তালা । দেয়াল দিয়ে ঘেরা শ্মশানের আর বেরুবার রাস্তা নেই ।
হঠাত্ কে যেন বলে উঠলো ।চিতা পরিষ্কার করে দে নইলে কাউকে জ্যান্ত রাখব না ।
দীনু বলতে লাগলো কিরে চিতা পরিষ্কার করিস নি ?
দীনু এবার সামনে গেলো দেখলো সত্যিই তো চারদিক কেমন অপরিচ্ছন্ন রয়েছে ।আবারজল ঢেলে পরিষ্কার করে দেখে শ্মশানের গেটে তালা নেই ।দীনু ভাবলো পৃথিবীতে কিছু অলৌকিক ঘটনা আজও ঘটে ।
----------------------
শুভাশিস দাশ
দিনহাটা