"তোরা কী আলোচনা করছিস আমাকে একটু বল না? এই অনুপ , এই পিকলু , আমাকে বলবি না ?" বারবার বলতে বলতে বিরক্ত হয় হরিপদ।
হরিপদ কাছ থেকে একটু দূরে ওরা ফিসফাস করে কী আলোচনা করছিল। বিরক্ত হয়ে হরিপদ ওদের কাছে যায়। "তোরা কী আলোচনা করছিস আমায় বলবি না ?"
পিকলু আলোচনা থামিয়ে তাকায়। চোখে বিরক্তি। বলে তোর শুনে কী লাভ ? তোকে দিয়ে তো কিছু কাজ হয় না। তোকে সাথে নেওয়া মানে-বোঝা । খালি ঘ্যানের ঘ্যানের করছে আরকি। তোর জন্য একটা ভালো প্ল্যান করা যাবেনা।
পিকলুর কথায় মুখটা শুকনো হয়ে গেল।" আচ্ছা" বলে যেখানে বসেছিলো আবার সেখানে গিয়ে বসলো। অনুপ সামাল দেয়ার জন্য বলে-- হরিপদ , কিছু মনে করিস না। দেরিতে হলেও তো তোকে বলা হয়।
হরিপদ কোন উত্তর দেয় না। ওদের সাথে ছিল নন্তু। ও বলে, চল সবাই চল। হরিপদের কাছে বসে আলোচনা করি।
সবাই উঠে হরিপদর চার পাশে বসে আলোচনা শুরু করে। পিকলু বলে" এবার খুশি তো তুই !"
হরিপদ বলে- জানি । আমি তোদের গলার কাঁটা। কি করব বল। ভগবান তো আমাকে একটু কম বুদ্ধি দিয়েছে। আর তোদের মত স্মার্ট হতে পারলাম না। সেই জন্য তো আমাকে সবসময় আন্ডার এস্টিমেট করিস।
পিকলু অবাক চোখে বলে, সত্যি তাই নাকি! তোর এটা বুঝতে এত দিন লেগে গেল!
সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। মুখটা আবার শুকনো হয়ে গেলো হরিপদর। অন্যরা আবার বলে ওর পিছনে লাগছিস কেন বলত ? আসল কথায় আয়।
কথাগুলো হচ্ছে যুব সংঘের মাঠে। এরা সকলেই পাড়ার ছেলে। এদের বাবা মা রা দীর্ঘদিনের বাসিন্দা। এরাই ইয়ং তরুণ ব্রিগেড। যখনই থাকে একসঙ্গে 10-15 জন পাশাপাশি। প্রত্যেকেই শিক্ষিত এবং গ্রাজুয়েট। নানা রকম কোম্পানিতে চাকরি করে। এদের মধ্যে কেউ কেউ ইঞ্জিনিয়ার। সবাই চালাক চতুর। শুধু হরিপদ এই ব্যাপার একটু কম। হরিপদ পড়াশোনায় ভালো। মাথায় দুষ্টুবুদ্ধি একেবারে নেই বললেই চলে। কিছু কথা বানিয়ে বলতে বললে বানাতে আরম্ভ করে তারপর আসল কথায় ফিরে যায় অর্থাৎ সত্যি কথাটাই বলে ফেলে। আর তাতেই ওকে নিয়ে চলতে অসুবিধা হয়।
অতুলবাবুর বাড়ির পিছনের দিকটায় উনার পেয়ারা গাছে প্রচুর পেয়ারা ধরেছিল। রিটার ম্যান অতুলবাবুর পেয়ারা গাছ সব সময় নজর রাখে। যাতে কেউ পেয়ারা চুরি না করে। একদিন রাত্রে এই ক্লাবের ছেলেরা লুকিয়ে সব পেড়ে নেয়। ওরা নিত না। সরস্বতী পূজার দিন চাঁদা তুলতে গেলে এদেরকে উনি বলেন" তোদের ক্ষমতা নেই পূজা করার তা অপরের কাছে পয়সা চাইতে এসেছিস কেন ? যাচ্ছেতাই বকে ওদেরকে তাড়িয়ে দিতেই ছেলেদের রাগ আরো মাথায় উঠে বসে। তাই তারা রাত্রে লুকিয়ে চুরি করে নেয়। অতুল বাবু অনেকের সাথে হরিপদকে জেরা করে। একটু বেশি ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে জেরা করতেই সব গড়গড় করে আসল সত্যটা বলে ফেলে হরিপদ। এরপর অতুল বাবু ওদের বিরুদ্ধে থানায় যাবে বলে হুমকি দেখায়। ক্লাবের সেক্রেটারি বা অন্য বয়স্করা অনুরোধ করতে উনি আর যাননি। এরপর থেকে অতুল বাবু ও তার ফ্যামিলি এই ক্লাবের ছেলেদেরকে খুব খারাপ চোখে দেখে। যার দরুন এরাও তার পিছনে লাগে। পুজোর চাঁদার রশিদে অন্যান্য বাড়িতে এক হাজার টাকা লিখলে ওদের বাড়িতে 3000 টাকা র রশিদ দেয়। এনিয়েও যখন-তখন অশান্তি হয়। পুজোর প্রসাদ বিতরণের সময় সব বাড়িতে দেয়া হয় ওদের বাড়িতে দেয়া হয় না। আর দেবে বা কে ? কেউ দিতে গেলে এই কয়েক মূর্তির ইশারায় দেওয়া বন্ধ করে দেয়। এমনিভাবে এরা ওদের বাড়িতে নানাভাবে অত্যাচার চালায়।
অতুলবাবুর স্ত্রীর সদ্য মারা গেলেন। এমনিতেই অতুলবাবুর বয়স প্রায় বিরাশি। কিন্তু এখনো সমানভাবে রাশভারী লোক। সামনে সবাই সমীহ করে। ডব্লিউ বিসিএস অফিসার ছিলেন। উনার একমাত্র ছেলে থানার অফিসার! বিভিন্ন জায়গায় বদলি হয়ে এখন যাদবপুর থানায় এসছে। তার একমাত্র মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে বাবার কাছে এসে খানিকটা স্বস্তি পেয়েছে। মা মরে যাওয়ার পর বাবাকে নিয়ে চিন্তায় ছিল। এদিকে অতুলবাবুর একাকীত্ব বোধ করত। ছেলে বৌমা তার সাথে নাতনি আসাতে খুব খুশি।
হঠাৎ একদিন ক্লাবের ছেলেরা একটা মেয়েকে ক্লাবের সামনে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে দেখে অবাক হয়। এদের মধ্যে কেউ কেউ বলে এ হলো অতুল বাবুর নাতনি। পিকলুর মুখ থেকে বেরিয়ে পড়ে" কি স্মার্ট রে বাবা! অনুপ বলে শুধু স্মার্ট নয় দেখতে কেমন দেখেছিস? যেন আগুনের গোলা!
ওদের মধ্যে আরেকজন বলে -পাড়ায় সেরা মনে হচ্ছে।
পিকলু বলে- অবশ্যই। এর ধারে পাশে কেউ টিকবে না।
অমিত বলে -ঠিক বলেছিস। যেন সিনেমার নায়িকা!
মেয়েটা ওদের চোখের দৃষ্টির আড়ালে চলে গেলেও এরা ওই দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। হরিপদ অবাক চোখে এদেরকে তাকায়। বলে, আরে ও তো চলে গেছে ওই দিকে তাকিয়ে কি দেখছিস?
-- তুই বুঝবি না। তুই তো এখনো কচি শিশু আছিস। মায়ের কোলে দুধ খাস। তোর এসব মাথায় ঢুকবে না।
পিকলুর কথা শুনে হরিপদের মুখটা শুকনো হয়ে যায়।
অমিত বলে কি যা তা বলছিস। টেকনো থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং কমপ্লিট করে চাকরি করছে। এ আবার বুঝবে না! আজ বিয়ে করলে কালকে দু-তিনটা ছেলে মেয়ের বাপ হয়ে যাবে।
কথাটা শুনে সবাই সায়দিয়ে হো -হো করে হেসে উঠল।
অমিত বলে" মেয়েটার নাম কি বলতো ? তোরা কেউ কি জানিস ?
অন্যরা বলে এইতো তোর মত আমরা প্রথম দেখলাম।
কিছুক্ষণ চুপচাপ। এদের মধ্যে ইন্দ্রজিৎ খুব বড় লোকের ছেলে। বাবার প্রমোটিং ও ইট বালি সিমেন্টের ব্যবসা। সকলের পিছনে পয়সা ওড়ায় প্রচুর। ও এতক্ষণ চুপচাপ শুনছিল। এবার বলে" যে আগে ওর নামটা ম্যানেজ করতে পারবে। তার জন্য আমি একটা পুরস্কার দেবো ।
পিকলু বলে --তুই পুরস্কার না দিলেও আমরা খুঁজে বার করব।
-- না। আমার ইচ্ছের কথাটা শোনালাম। সামনে যে দীঘা বেড়াতে যাওয়ার কথা হচ্ছে । তার সব খরচ আমি দেবো।
পরের দিন আবার মাঠে সবাই জড়ো হয়ে বসেছে। ইন্দ্রজিৎ বলে কিরে কেউ কি পেলি। সবাই মাথা নেড়ে না বলে। পিকলু বলে আমরা কিছু জানতে চাইলেই ওই যে বুড়োটা আছে অতুল বাবু। সে জানতে পারলেই তো তাড়া করবে । তার ওপর নিজের ছেলে পুলিশ অফিসার। অনেককে দিয়ে জানার চেষ্টা করেছিলাম । সবাই এর একই কথা। মেয়েটার বাবা পুলিশ অফিসার। যদি জেলে ঢুকিয়ে দেয়। পুলিশ তো ! নানারকম কেস দিয়ে ঢুকিয়ে দিতেই পারে!
অন্যরা সায় দিয়ে বলে হ্যা ঠিক বলেছিস।
ঠিক সেই সময় হাঁপাতে হাঁপাতে ঢোকে হরিপদ। সবাই তার দিকে অবাক চোখে তাকায়।
পিকলু বলে, তোকে যেন মনে হচ্ছে কেউ লাঠি নিয়ে তাড়া করেছে মারার জন্য।
হরিপদ
ওর কথায় পাত্তা না দিয়ে ইন্দ্রজিতের দিকে তাকায়। মেয়েটার নাম " সারিকা ।"
অন্যরা জানতে চায়" তুই কি করে জানলি ?"
কাল যখন এখান থেকে আমরা ফিরছিলাম। বাড়িতে মনে মনে ঠিক করেছিলাম। ওর বাড়ির পিছনে লুকিয়ে চুপটি করে বসে থাকবো। বাড়িতে তাকে কেউ না কেউ তার নাম ধরে ডাকবে । তখনই জানতে পারবো। কাল থেকে চেষ্টা করেও ওর বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করতে পারিনি। আজ সন্ধ্যার সময় হঠাৎ কারেন্টটা চলে যেতেই আমি ওর গেট দিয়ে ঢুকে পড়লাম। পাঁচিলের পাশ দিয়ে ঠিক বাড়ির পিছন টার দিকে গেলাম। বেশ কিছুক্ষণ মশার কামড় খেলাম। তারপর সারিকা সারিকা বলে ডাক দিল তার মা। তারপর আমি শুনেই দৌড় দিলাম। ভয়ও হচ্ছিল যদি কারেন্টটা চলে আসে। ধরা পড়লে তো আর কথাই নেই।
তার কথা শুনে সবাই অবাক। অমিত বলে, যাকে আমরা আন্ডারএস্টিমেট করি। হাবলা ক্যাবলা ভাবি । সেই বাজিতে জিতে গেল।
পিকলু একগাল হেসে বলে। ও হ্যাভলা কেবলা বলেই এটা সম্ভব হলো। আমরা কেউ কি মশার কামড় খেয়ে, ওর বাড়ির পিছনে লুকিয়ে ,কেউ কি শুনতে যেতাম। চালাকচতুর হলে ও মোটেই এ কাজটা করতো না।
মুখটা শুকনো হয়ে যায় হরিপদর। তা দেখে ইন্দ্রজিৎ বলে ,তোরা পারিস নি। ও পেরেছে এটাই বড় কথা ।ওর জন্য যা যা বলেছিলাম তাই পুরস্কার দেবো। একটা কথা বলি আমরা কেউই এখনো পর্যন্ত একটা প্রেম করতে পারলাম না। প্রেম করার কথা দূরে থাক। কেউ আমরা কোন একটা মেয়ের সাথে বসে দু'দণ্ড গল্প করবো তাও হয়ে উঠেনি। এই ক্লাবে আমাদের জীবন কেটে গেল। আর মাঝেমধ্যে কোন বিয়ে বাড়ি পড়লে দু-একটা সুন্দরী মেয়েদের দিকে শুধু তাকিয়ে গেলাম । এর বাইরে আমাদের আর বিশেষ কিছুই হয়নি। একমাত্র দু'বছর আগে আমাদের দল থেকে ছিটকে বেরিয়ে গেছে অতনু। সেই প্রেমে পড়ে গিয়ে দল থেকে সরে গেছে। এখন থাক টিকিটা পাওয়া যায় না। তাও ভাল সে সাহস করে প্রেম করতে পেরেছে। আর আমরা তো সবই ভীরুর দল। কেউ একটা প্রেম করতে পারলাম না। আর আমার কথা ছাড়। আমার তো মেয়ে ঠিক করা হয়ে আছে। পছন্দ না হলেও বাবাদের পছন্দ। প্রচুর টাকা পয়সা পাবে। আমাকে তো তাকেই বিয়ে করতে হবে। কিন্তু আমি তোদের কে ভালবাসি। তোদের পিছনে বহু টাকা উড়িয়েছি। আমি চাই তোরা একজন একটা প্রেম করিস। তার জন্য একটা কন্ডিশন দেব। যে পূরণ করতে পারবে তার জন্য পুরস্কার অপেক্ষা করে আছে ।
সবাই কৌতূহলে শুনছিল কথাগুলো। আমার পরের শর্ত হলো পাশাপাশি ওই মেয়েটার সাথে অর্থাৎ সারিকার সাথে বসে যদি ছবি তুলে এনে দেখাতে পারবে, তাকে ইডেনে ওয়ানডে ম্যাচের খেলা দেখাবো। এবং সবচেয়ে বেশি দামের টিকিট কেটে।
কথাটা শুনে নিজেদের মধ্যে চাওয়া চাওয়ি করে। ইন্দ্রজিৎ কে কেউ কিছু বলতে পারেনা। ওরা সবাই ইন্দ্রজিৎ কে তেলিয়ে চলে।
পিকলু বলে-- আমার কেন কারোর দ্বারা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।
অন্যরা তাকে সাপোর্ট করে বলে-- সত্যি তো। এমনি মেয়েটা আগুন। তার ওপর বাবা পুলিশ ইন্সপেক্টর। পুড়তে পুড়তে আমরা শেষ হয়ে যাবো।
-- সত্যি তোরা ভিরু ! এইজন্য তোদের সারা জীবন তাকিয়ে কাটাতে হবে। তবুও 10 দিন সময় দিলাম। যে পারবে তার জন্য ইডেনে খেলা দেখার ব্যবস্থা। শুধু খেলা দেখানো নয় সেখানে গিয়ে ভালোমন্দ খাওয়াও আছে তার সাথে। তাছাড়া যাওয়া-আসার সব খরচা আমার। এইতো সামনে মাসে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার ওয়ানডে ম্যাচ । ভেবে দেখ তোরা।
সচরাচর দিন যেমন যায়। তেমনি করেই আট দিন কেটে যায়। ক্লাবের মাঠে বসে ওদের মধ্যে কথাবার্তা হয়। তোরা কেউ কি পারলি কিনা। সবার উত্তর-- অসম্ভব! পিকলু বলে- অনেকবার চেষ্টা করেছিলাম। ওর সামনে গেলেই -বুকটা দুরুদুরু করে কেঁপে উঠে! কথা বলা তো দূরের কথা। অন্যরাও সায় দিয়ে বলে- ঠিক বলেছিস। আমরাও চেষ্টা করেছিলাম। ওর সামনে আসতেই বুকটা কেমন কেঁপে উঠলো। গলাটা শুকিয়ে আসছিল। অসম্ভব আমার দ্বারা হবে না। ইন্দ্রজিৎ বলে আরো দুদিন হাতে সময় আছে। চেষ্টা কর। যদি পেরে যাস। পিকলু রা বলে অসম্ভব। আমাদের দ্বারা হবে না। আর তুইও ভালো করে জানিস। আমাদের দ্বারা হবে না বলেই এই রকম শর্ত রেখেছিস।
সঙ্গে সঙ্গে রেগে যায় ইন্দ্রজিৎ। আমার অনেক টাকা বেশি হয়ে আছে তো?এতদিন ধরে যে তোদের পেছনে টাকা খরচ করেছিলাম কোন স্বার্থে শুনি ?
সবাই বুঝতে পারে যে ইন্দ্রজিৎ রেগে যাচ্ছে। সামাল দেওয়ার জন্য বলে-- নারে তোর সাথে সবাই মজা করছিলাম ।
কথাটা শুনে ইন্দ্রজিৎ খানিকটা খুশি হয়। ঠিক সেই সময় হরিপদ তার মোবাইলটা বার করে একটা ছবি দেখায়। সবাই অবাক!সারিকার সাথে পাশাপাশি বসা হরিপদ ছবি। দুজন একেবারে পাশাপাশি দুজনের দুজনের শরীর পাশাপাশি ছুঁয়ে আছে। সবাই তাকে প্রশ্ন করে- এ কি করে সম্ভব!
ইন্দ্রজিতের মুখে খুশির ঝলক। দেখ দেখ তোরা যাকে হ্যাবলা কেবলা বলিস ,সেই করে দেখালো। সবাই অবাক হয়ে তার দিকে তাকায়। সবাই চেপে ধরে- কি করে পারলি। ইন্দ্রজীত অবাক। পুরষ্কার তুই পাবি। যা শর্ত দিয়েছিলাম তা পেরেছিস। ইডেনে খেলা দেখা অবশ্যই তোর হবে তার জন্য তুই কিছু ভাবিস না। আমাদের বল কিভাবে এটা হল ?
ও যখন প্রতিদিন কলেজে যায়। আমি বারবার ফলো করেছিলাম। সি ফাইভ বাসে উঠে। বাসে উঠার সময় লাইন দিয়ে উঠতে হয়। আমি ঠিক তার পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। বাসে উঠে ও যেখানে বসলো তার পাশের সিটটা খালি ছিল। আমি বসে পড়লাম। বেশ কিছুক্ষণ বসে মোবাইলে সেলফি তুলে নিলাম। এমনভাবে করলাম সে জানতে পারল না।
পিকলু বলে। তাহলে তোর সাথে কথা হয়নি যখন পুরস্কার পাবিনা
ইন্দ্রজিতের সাথে অন্যরাও বলে কথা যে বলতে হবে এমন শর্ত ত ছিল না।
পিকলু চুপ হয়ে যায়। অমিত বলে -পাশাপাশি যে বসেছিলি গাড়ি জারকিং এর সময় দুজন দুজনের সাথে ধাক্কা লেগেছিল মনে হয়। তখনও কিছু বলেনি ?
মুখে টুকরো হাসি এনে হরিপদ বলে-- তার আমার দিকে কোন খেয়ালই ছিল না। অন্যদিকে তাকিয়ে কি একটা যেন ভাবছিল।
এরমধ্যে বেশ কিছু দিন কেটে যায়। হরিপদ তার পুরস্কারগুলোও পাওয়া হয়ে যায়। সারিকাকে নিয়ে চর্চা যেমন চলত এখনো চলে। সারিকা কখন যায় কখন আসে। সেই সময়টা সকলের জানা হয়ে গেছে। সেই সময় এলেই রাস্তার পাশে পুরা ক্লাবের মাঠেরাস্তার পাশে এসে জমায়েত হয়। ইন্দ্রজিৎ আবার পুরস্কারের কথা ঘোষণা করে।" যে সারিকা সাথে কথা বলবে শুধু কথা বলা নয় তার গালে হাত দেবে তাকে পুরস্কৃত করা হবে। এবারে কাজটা যেমন কঠিন সেইজন্য পুরস্কারটা খুব মূল্যবান। পুরষ্কারের মূল্য 5000 টাকা।
ওর কথা শুনে সকলে অবাক। 5000 টাকা!
পরক্ষণে সকলের মুখ শুকিয়ে যায়। পিকলু বলে- ইন্দ্রজিৎ! তুই বেশ চালাক ! তাই না ?
--- কেন ? কেন এমন বলছিস ?
--- তুই ভালো করে জানিস। ঐরকম একটা ভয়ংকর ফ্যামিলির স্মার্ট মেয়ের গালে হাত দেওয়া চাট্টিখানি কথা !
ঠিক আছে । পারবি না যখন স্বীকার করে নে । তাছাড়া তুই না পারতে পারিস। অন্য কেউ তো পারতে পারে।
--- এখানে অন্য কেউ বলতে হরিপদকে বুঝাতে চাইছিস তো । আমি একশ পারসেন্ট গ্যারান্টি দিয়ে লিখে দিচ্ছি। যদিও মারের ভয় ও সম্মানের ভয়ে যদি না থাকে তাহলে ঐ কাজে নামতে পারে। কিন্তু লিখে রাখ। এ জন্মে ওর পক্ষে সম্ভব নয়।
ইন্দ্রজিৎ ওকে বলে, তুই পারবি না এটা স্বীকার করে নে। অন্যকেউ পারলো কী পারলো না এটা তোর জেনে কাজ নেই।
দু একদিন কেটে যায়। পিকলু মনে মনে ভাবে। হরিপদর চাইতে সে অনেক বেশি স্মার্ট। একবার চেষ্টা করে যদি ওকে প্রেমে বাগিয়ে আনা যায়। এই নিয়ে ভাবতে ভাবতে একদিন সাহস করে সি ফাইভ বাসস্ট্যান্ডের কাছে দাঁড়িয়ে সারিকার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর সারিকা বাস থেকে নামে। কয়েক মুহুর্তের মধ্যে তার পাশ দিয়ে সারিকা চলে যায়। পিকলু ওর পিছনে পিছনে হাঁটতে থাকে। বেশ কিছুদূর যাওয়ার পর গলি রাস্তায় এখন সারিকা আর ও। সামনের সারিকা এগিয়ে চলেছে হাতে মোবাইল। কানে হেডফোন। মনে হয় গান শুনতে শুনতে যাচ্ছে। পিছন থেকে পিকলু বলে --এই যে শুনছেন।
না ।কোন সাড়া নেই। আবার কিছুটা যাওয়ার পর এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে কেউ নেই । এবার জোর গলায় পিকলু বলে- এই যে শুনছেন। আপনাকে বলছি।
এবার মেয়েটি থমকে দাঁড়ায়। কানের হেডফোন টা খুলে জিজ্ঞেস করে -কি ব্যাপার।
পিকলু দেখে এতক্ষণ মেয়েটি বেশ গানের ছন্দে মাথা নাড়তে নাড়তে যাচ্ছিল। চোখে মুখে কেমন যেন সুন্দর স্নিগ্ধতা ছিল। কিন্তু এখনতো দেখছি উল্টো। মুখটা ক্রমশ গম্ভীর হয়ে গেছে।
- কি বলতে চাইচ্ছেন ? বলুন।
ওর মুখের গম্ভীরতা দেখে পিকলু হকচকিয়ে যায়। মুখ থেকে বেরিয়ে আসে- আমি আপনাদের বাড়ির কাছে ওই ক্লাবের মেম্বার। আপনাকে রোজ ক্লাবের মাঠের পাশ দিয়ে যেতে আসতে দেখি।
-তো ।কি হয়েছে ?
-- আপনাকে আমার ভালো লেগেছে। তাই আপনার সাথে আলাপ করতে এলাম। তার সাথে যদি বন্ধুত্ব টা হয় ।
-- আপনি ওই ক্লাবের ছেলে ?
পিকলু মাথা নেড়ে হাঁ বলে।
- একেবারেই ইরিটেটিং! বাজে লোফার ছেলে ! কোন কাজ না করে মেয়ের পিছনে লাইন মারা হচ্ছে । আউট। এরপর যদি আমার সাথে কথা বলতে আসিস। চাপকে লাল করে দেব। শয়তান ছেলে কোথাকার।
হঠাৎ মেয়েটার চিৎকারে পিকলু হতভম্ব হয়ে যায়। পিকলু হাঁটা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে। মেয়েটি বকতে বকতে চলে চলে যায়।
বাপরে বাপ! এ কি মেয়েরে বাবা! ডেঞ্জারেস! ভাগ্য ভালো আমি বেঁচে গেছি। ওর চিৎকার শুনে পাশাপাশি লোক থাকলে তো আমাকে ধরে পেটাতে আরম্ভ করত।
পরেরদিন গোলটেবিল বৈঠক ।সন্ধ্যায় ক্লাবের মাঠের সকলেই। এই কথাগুলো বন্ধুদের মধ্যে শেয়ার করে।
তা শুনে ইন্দ্রজিৎ বলে এইজন্যই তো আমি বড় টাকা বাজি রাখলাম। যে পারবে সেই টাকাটা পাবে। সঙ্গে সঙ্গে অন্যরা বলে ওর হাতে থাপ্পড় খাওয়া আমার দরকার নেই গো। পিকলু বলে শুধু থাপ্পড়? তা নয় ।খুব চিৎকার শুনে পাড়ার লোক গুলো এসে আমাদেরকে পেটাবে। ভাগ্যিস সেদিন রাস্তা ফাঁকা ছিল। বেঁচে গেছি!
চুপচাপ কথাগুলো শুনছিল হরিপদ। ও বলে মার খাবার ভয়ে আমি হাল ছাড়বো না।
ইন্দ্রজিৎ বলে এই ব্যাপারে কিন্তু আমরা কেউ তোকে হেল্প করতে পারবো না। তুই নিজের ক্যালিতে করবি। তোকে আমি পুরষ্কারের মূল্য টা দেবো।
অন্যান্যরা বলে তুই বুঝতে পারছিস না পিকলুর মত ছেলে মার খেতে খেতে বেঁচে ফিরে এসছে। শুনেও তোর ভয় লাগছে না ?
হরিপদ ওদের কথা শুনে হাসল শুধু।
দুদিন পরে হোলি। পাড়ায় পাড়ায় রঙে মেতেছে আবালবৃদ্ধবনিতা। ক্লাবের ছেলেরাও ক্লাবের মাঠে রং খেলছে। পাড়ার কিছু বয়স্ক লোক খোল করতালের সাথে হরিনাম করতে করতে পাড়ায় পাড়ায় পরিভ্রমণ করছে। প্রত্যেকের হাতে বাতাসা আর আবির। মাইকে মাইকে ভেসে আসছে" ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল লাগলো যে দোল " আবার কোথাও কোথাও চলছে "রঙ বরসে চুনারিয়া,,,। বেলা প্রায় এগারোটা। ঠিক সেই সময় রাস্তার উপর দিয়ে হেটে চলেছে সারিকা ! হরিপদ এগিয়ে যায় তার দিকে। সবাই হাঁ করে তাকিয়ে আছে। আগুন না চন্দ্রমল্লিকা। ঠিক সেই সময় এক মুঠো আবির নিয়ে এক দৌড়ে তার সামনে হাজির হরিপদ।
--- ম্যাডাম। প্লিজ! আবির মাখাব। মেয়েটির কিছু বলার আগেই হাতের কমলা রঙের আবির নিয়ে মাথা এবং গালে মাখিয়ে দেয়।
পিকলু রা হাঁ করে ওই দৃশ্য দেখছে। মনে মনে ভাবছে এই বুঝি থাপ্পড়টা হরিপদর গালে লাগবে। কিন্তু না। হরিপদ যেমনটি গিয়েছিল ঠিক সেই রকম ভাবে আবার ফিরে এলো। মেয়েটিও চলে গেল। তেমন কিছু রাগের বহিঃপ্রকাশ দেখা গেল না। ইন্দ্রজিৎ বলে" 5000 টাকার পুরস্কারটা পেয়ে গেলি । আমাদের মধ্যে যারা তোকে হাবলা ক্যাবলা বলে। আমি 100% সিওর। তারাই হেবলা কাবলা -তুই ,নস। তোকে দেখে ওরা শিখুক। সবাই হাঁ করে তাকিয়ে আছে হরিপদর দিকে।
এখন প্রায় প্রতিদিন সারিকাকে নিয়ে চর্চা চলতেই থাকে। প্রায় প্রতিদিন ও যখন যায় সকলে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। এরই মধ্যে একদিন আবার ইন্দ্রজিৎ বলে-- তোরা কি এরকম হাঁ করে সারা জীবন কাটাবি ?
পিকলু বলে -তা ছাড়া তো অন্য কোন উপায় নেই ? এ মেয়ে তো মেয়ে নয় যেন আগুন ?
ইন্দ্রজিৎ বলে- এইখানেই তো মজা। স্বয়ংবর সভা থেকে রাজকন্যা জয়ের সমান।
হরিপদ বলে- তা ঠিক বলেছ।
অমিত বলে - কিন্তু ওর সাথে তো কথা বলা কঠিন। আমার মনে হয় -যে ,কথা বলতে যাবে সে দু'চারটা থাপ্পড় খাবে।
পিকলু ইন্দ্রজিতের দিকে তাকায়। বলে -কিন্তু কিভাবে তার সাথে যোগাযোগ করা যায় ?
ইন্দ্রজিৎ বলে- ভাব সবাই
অমিত বলে-- ওর ফোন নাম্বারটা যদি ম্যানেজ করা যেত।
কথাটা শুনে ইন্দ্রজিৎ বলে-- ঠিক বলেছিস। ওর ফোন নাম্বারটা ম্যানেজ করতে হবে। এটাই তোরা চেষ্টা কর।
ইন্দ্রজিৎ হরিপদর দিকে তাকায়। --কিরে ম্যানেজ করতে পারবি।
সঙ্গে সঙ্গে পিকলু বলে-- ওকে পাঠাও না। ফোন নাম্বার চাইতে গেলে বেচারা দু'চারটা থাপ্পড় খেয়ে যাবে।
কথাটা শুনে সকলে হেসে ফেললো। হরিপদর শান্তভাবে বলল-- আমি চেষ্টা করব।
ইন্দ্রজিৎ বলে- শুধু তুই কেন অন্যরাও চেষ্টা করবে। তার সাথে কথা বলে আনতে হবে তার কোনো মানে নেই। তার কোন অপরিচিতর মারফত দিয়ে আনা যেতে পারে।
কথাটা শুনে পিকলু বলে তা ভুল বলনি।
ইন্দ্রজিৎ আরো বলে-- এটাতে যে সাকসেস হবে তার জন্য পুরস্কার দেয়া হবে।
সেই মুহূর্ত থেকে সকলে ভাবতে শুরু করেছে কি করে ফোন নাম্বার ম্যানেজ করা যায় ?
হরিপদর ক্ষেত্রেও তাই। ভাবতে-ভাবতে একদিন কেটে গেছে। হঠাৎ তার মনে হল এখন তো ফেসবুকের যুগ। ওর নাম দিয়ে গুগল ফেসবুক সার্চ করি তাহলে পেলেও পেতে পারি। যেই ভাবা সেই কাজ। গুগল সার্চ করতে গিয়ে সারিকা টাইটেলটা মনে পড়লো না।কত সারিকা আছে ! হঠাৎ মনে পড়ে গেল অনেকে অতুল বাবুকে মিত্র বাবু বলেও ডাকে। সঙ্গে সঙ্গে মনের ভিতরে খুশির ছোঁয়া ভেসে উঠলো। সারিকা মিত্র গুগলের সার্চ করতেই বেশ কয়েকটা বেরিয়ে আসে। ধৈর্য না হারিয়ে দেখতে থাকে। মাথায় একটা টুপি পরা মেয়ে। দেখে তো মনে হচ্ছে সেই হতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে তার প্রোফাইলে ক্লিক করে। প্রোফাইলে ঢুকে ঘাঁটাঘাঁটি করতে চোখে মুখে হাসি। এই তো সেই! এদিক-ওদিক খুঁজতে গিয়ে ওর ফোন নাম্বার টা পাওয়া যাচ্ছে না। কি করি ? ভাবতে ভাবতে সঙ্গে সঙ্গে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাতে গিয়ে থমকে যায়। ভাবে -আমার এই প্রোফাইল থেকে পাঠাবো না। সঙ্গে সঙ্গে নতুন একটা প্রোফাইল তৈরি করে। নিজের ছবি ফোন নাম্বার না দিয়ে প্রোফাইল পিকচারেএকটা গোলাপের ছবি দেয়। এবং এই কথাটা বন্ধুদের কাছে না বলে চেপে রাখে। এরপরই রবীনাথের গানের ভিডিও ও মহাপুরুষের বাণী প্রচার করতে থাকে।এরই ফাঁকে লোপামুদ্রা ও শ্রীকান্ত আচার্যের গান পোস্ট করতে থাকে। এরপর মেয়েটিকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়।
মনে মনে ভাবে আমাকে একসেপ্ট করবে তো ? কি জানি! আমার প্রোফাইলে তো আমার ছবি নেই। একটা গোলাপের ছবি। আমাকে তো চিনতে পারবে না। কারন আমার প্রোফাইলে আমার কোনো ছবি নেই। এটা একটা ভালো দিক। আমাকে চিনতেই পারবেনা।
প্রতীক্ষার পর প্রতীক্ষা! দু দিন কেটে যায়। হঠাৎ মোবাইলের আওয়াজ শুনতে পেয়ে ফেসবুক খুলতেই দেখে সারিকা একসেপ্ট করেছে। মনটা খুশিতে ভরে গেল। সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুকে গিয়ে ওর প্রোফাইল ঘাটতে দেখতে পেল ওর ফোন নাম্বারটা। সঙ্গে সঙ্গে খাতায় টুকেই হাজির হয় ক্লাবের মাঠে।
ইন্দ্রজিৎ খুব খুশি । মাথায় হাত বুলিয়ে বলে এর জন্য তোকে পুরস্কৃত করা হবে । অন্যান্যদের থেকে তোর ক্যালী অনেক বেশি । অন্যরা শুধু ফড়ফড়করে । কাজের বেলা অষ্টরম্ভা ! মুখে শুধু ডায়লগ !""
কথাটা শুনে অন্যান্যদের মুখ চুপসে যায়। ইন্দ্রজিৎ যাই বলুক না কেন ফোন নাম্বারটা পেয়ে পিকলু টা খুব খুশি।
পরের দিন থেকে প্রত্যেকেই ফোন করার চেষ্টা করে। প্রায় সকলেই সারিকার ধ্যাতানি শুনে ভয় পেয়ে যায়। এটা নিজেদের মধ্যে জানাজানি হতেই পিকলু বলে আমি তোদের মত বোকা নই। আমি নিজের মোবাইল থেকে ফোন করিনি। বুথ থেকে ফোন করেছি।
এদিকে হরিপদ ভাবতে থাকে কিভাবে আলাপ জমাবে ? বেশিরভাগ সময় সারিকার ফেসবুক টাকে দেখতে থাকে। সারিকা কি পছন্দ করে ?
না তেমন কিছু খুঁজে পায়নি। শুধু বেশ কয়েকটা সেলফি। বন্ধুদের সাথে আড্ডা। ঘরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ছবি। এছাড়া তেমন কিছু নেই। কি করা যায় এরকম ভাবতে থাকে।
কয়েকদিন পর।ক্লাব থেকে আড্ডা মেরে বাড়ির দিকে পা রেখেছে হরিপদ। তখন রাত আটটা সাড়ে আটটা হবে। রোজ ই সারিকার বাড়ির সামনে দিয়ে যেতে হয়। আজ তার বাড়ীর ভেতর থেকে একটা গানের আওয়াজ বেরোচ্ছে। কেউ যেন হারমোনিয়াম বাজিয়েগান গাইছে।বাড়ির সামনে থমকে গেল হরিপদ। গানের আওয়াজ টা দোতালা থেকে আসছে। ঘাড় ঘুরিয়ে ওই দিকে তাকায়। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়েছে নিশ্চিত হয় গানটা গাইছে কিন্তু সারিকা। সেই সময় বাড়ির ভেতর থেকে কে যেন তাকে" সারিকা" বলে ডাকে। গানটা বন্ধ করে সারিকার গলার আওয়াজ" কি বলছো মা ?"
হরিপদ নিশ্চিত হয় সারিকাই গান গাইছে। গানের গলাটাও ভালো। রবি ঠাকুরের"দূরে কোথাও,,,,"গানটা গাইছিল। এই গানটা গাইছে মানে গানের প্রতি গভীর আকর্ষণ না থাকলে এই ধরনের গান গাওয়া যায় না। মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় ও গান খুব ভালোবাসে।
ওখান থেকে না দাঁড়িয়ে বাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। ভাবে ---আমি তো ভালো গান গাইতে জানিনা। কিন্তু গান ভালোবাসি। কিন্তু কিভাবে ফেসবুকেই এর সাথেগাঢ় বন্ধুত্ব তৈরি করা যায়।
এরপর চাকরি করার ফাঁকে গড়িয়ার লাইব্রেরীতে সদস্যের কার্ড করে। মনে মনে ঠিক করে নেয় গানের উপর বহু পড়াশোনা করবে। তাছাড়াও মোবাইলে গুগল রয়েছে। প্রায় 15 দিন ধরে বাংলা গানের ইতিহাস কে জানার চেষ্টা। কে এল সায়গল। পঙ্কজ মল্লিক। সুখেন্দু বিশ্বাস। দেবব্রত বিশ্বাস। কানন দেবী। কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুচিত্রা মিত্র। এদেরকে নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে থাকে।
বাচ্চাকালে স্কুল মাগাজিনে প্রবন্ধ দিত। আজ সারিকার জন্য আবার নতুন করে প্রবন্ধ লেখার আগুনটা জ্বলতে শুরু করে।
প্রতিদিন ফেসবুকে একটার পর একটা গানের উপর আর্টিকেল লিখতে থাকে।" বাংলা চলচ্চিত্রে রবীন্দ্রনাথের গান।"প্রথম আর্টিকেলে ই লাইক কমেন্ট পড়তে থাকে। প্রথম দিনে ততটা পড়েনি কিন্তু পরের দিন গুলোতে ক্রমশ লাইক কমেন্ট বাড়তি থাকে। অনেকেই প্রচুর প্রশংসা করতে থাকে। এদের মধ্যে কেউ কেউ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক। কেউ কেউ বড় মিউজিক ডিরেক্টর। কেউ কেউ সংগীত গবেষক।এরপরেই আর্টিকেল"নজরুলের সব গানের সুর নজরুলের নয়।"
চারদিক থেকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট! কত জ্ঞানীগুণীরা তার ফ্রেন্ডলিস্টে এসে গেছে। কিন্তু না এখনো আসেনি সারিকা।
কিন্তু গুণীজনদের প্রশংসা পাওয়াতে হরিপদ একটা নেশার স্বাদ পেয়ে গেছে। এখন সারিকার প্রতি আগ্রহের চাইতে আর্টিকেল লেখার প্রতি আগ্রহ আরও বেড়ে যায়।
হঠাৎ একদিন মোবাইল খুলতে দেখে তার আর্টিকেল এগুলো সারিকা শেয়ার করেছে। এবং লাইক ও কমেন্ট করে প্রশংসা করেছে। আরো আশ্চর্য আলাপ করার জন্য মেসেঞ্জারে ফোন নাম্বার চেয়ে মেসেজ পাঠিয়েছে।
ফোন নাম্বারটা দিল না সে। মনে মনে ভাবে সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দিলে নিজের গুরুত্ব যদি কমে যায়। নিজেকে সংবরণ করল। কিন্তু প্রতিদিন আর্টিকেল একটার পর একটা লিখতে থাকে। অনেকের অনুরোধে এই আর্টিকেল গুলোকে বইয়ের আকারে প্রকাশ ঘটাতে।
এর কিছুদিন পর মেসেঞ্জারে আবার অনুরোধ আসে ফোন নাম্বারটা দিতে। এরপর ফোন নাম্বারটা দিয়ে দেয় হরিপদ।
সেই দিন বিকেল পাঁচটার সময় ফোন আসে।
--আপনি হরিপদ বাবু বলছেন।
--হ্যাঁ বলছি। আপনি কে বলছেন ?
--আমি সারিকা বলছি। স্যার।আপনি আমাকে চিনবেন না। আমি আপনার লেখার অন্ধ ভক্ত হয়ে গেছি। আপনার প্রতিটি গান বিষয়ক লেখা গুলো আমাদের খুব ভালো লাগে। আমাদের বলতে আমার বন্ধুবান্ধব এমনকি আমাদের বাড়ির সকলের। আপনার এই লেখাগুলো কবে বেরোবে বইয়ের আকারে। বা কোন প্রকাশনী থেকে আগে কোন বই বেরিয়েছে এটা জানলে খুবই ভালো লাগবে। বইটা কিনে এনে পড়লে আমরা উপকৃত হব।
ফোনের অন্যপ্রান্তে সারিকার কণ্ঠস্বর শুনে হরিপদর কি যে আনন্দ হচ্ছিল বলে বোঝাতে পারবে না। ফোন হাতে নিয়ে বিভোর হয়ে ওর কথা শুনছিল।তারপর বলে--দেখি কোনো ভালো পাবলিশার পেলে বই প্রকাশ করার চেষ্টা করব।
আমার লেখাগুলো ভালো লাগছে আপনার ?
ফোনের অন্য প্রান্ত থেকে--খুব ভালো লাগছে স্যার। আমি আপনার থেকে ছোট তাই "আপনি "সম্বোধন আমাকে করবেন না। আমার খুব নিজেকে ছোট লাগে।
--তুমি কি করো ? তোমার বয়স কতো ?
--আমি সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। আর গানে আমি ফাইনাল ইয়ার দেব।
---তোমার গানটা তো শুনতেই হয়।
--তেমন ভালো গান গাইনা স্যার। কিন্তু গানটি খুব পছন্দ করি। তাছাড়া আমি ক্লাসিক্যাল ঘরানার গান শিখি।
--ভালো তো। ক্লাসিকাল গান শিখেইতো যে কোনো ধরনের গান গাওয়া যায়। শুধু গান গাওয়া নয় গানের সৌন্দর্য আরো বেড়ে যায়। অবশ্যই শ্রোতাকে দেবে মুগ্ধতা।
ফোনে বেশিক্ষণ আর কথা না বলে"এখন একটু ব্যস্ত আছি পরে আবার তোমার সাথে কথা হবে ।"বলেই লাইন কেটে দেয়।
হরিপদ মনে মনে বলে-লাইনটা কেটে ঠিক করলাম-বেশিক্ষণ কথা বলতে না দিয়ে আমি ঠিক করেছি। ওর অহংবোধে লাগলে তবেই আমার প্রতি আরও আগ্রহ বাড়বে।
এদিকে ক্লাবের মাঠে আড্ডাটা যেমন ছিলে সেরকমই চলছে। অন্যরা নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সারিকাকে পটানোর। কিন্তু মনের ভিতর ইচ্ছা থাকলেও ওর কাছে পৌঁছানোর কোন রাস্তা খুঁজে পাচ্ছে না তারা। হরিপদো কিন্তু নিজের কর্ম কান্ড বন্ধুদের কাছে গোপন রেখে দেয়। শুধু তাই নয় এখানে সময় দেওয়াটা অনেক কমে গেছে।বন্ধুরা জিজ্ঞেস করে--তুই এখানে আসা কমিয়ে দিচ্ছিস কেন ? প্রত্যুত্তরে হরিপদ বলে অফিসের অনেক কাজ। বাড়িতে এসেও কম্পিউটারে কাজ করতে হয়।
ইন্দ্রজিৎ হরিপদ কে বলে--সবাইকে বলেছি তোকেও বলছি --সারিকার সাথে যে প্রেম করে বিয়ে করতে পারবে। তাকে বিয়ের খরচের ফিফটি পার্সেন্ট আমি দেব। সে যত ধুমধাম করে বিয়ে করুক না কেন।
পিকলু বলে--ওকে শোনাচ্ছিস কেন। আগের বাজি গুলো জেতা সহজ ছিল। প্রেম করে বিয়ে করা চাট্টিখানি কথা নয়। তার ওপর বাঘের ফ্যামিলির মেয়ে কে!পরের চ্যালেঞ্জগুলো কঠিন বলেইতো ও ক্লাবে আসা কমিয়ে দিয়েছে।
কথাগুলো শুনে হরিপদর মুখটা শুকনো হয়ে গেল।
শুধু বলল আমার মত আনস্মার্ট ছেলে সারিকার পাশাপাশি যাওয়ার মত যোগ্যতা নাই।
পিকলু বলে--ঠিক বলেছিস। গেলেইতো রাম ধোলাই খাবি। তখন তো কেলিয়ে পড়বি। আমাদেরই আবার ছুটতে হবে উদ্ধার করতে।
কথাটা শুনে অন্যান্যরা হেসে ফেলে।
ইন্দ্রজিৎ বলে---মুখেতো বড় বড় ডায়লগ। তোরা একবার করে দেখা।
পিকলু বলে --হ্যাঁ আমি দেখাবো।
হরিপদ বলে --আমি এসব ব্যাপারে নেই। তোদের মত স্মার্ট বা বুদ্ধিমান নয়। তোরা এগিয়ে যা বেস্ট অফ লাক।
কিছুদিন কেটে যায়। হরিপদ ফেসবুকে লেখা ছাড়াও ইমেইলের মাধ্যমে বিভিন্ন রকম দৈনিক খবর কাগজে পাঠাতে থাকে। প্রতিটি প্রেপারে ইউর লেখা গৃহীত হয়। দৈনিক পেপারে সেই লেখাগুলোর ছবি হরিপদো নিজের ফেসবুকে পোস্ট করে। প্রচুর লাইক কমেন্ট পড়তে থাকে। এরপর বেশ কয়েকটা গ্রুপে আমন্ত্রিত হয়ে ওখানেও আর্টিকেল লিখতে থাকো। এই গ্রুপের এডমিন সারিকা ও সারিকার বন্ধুরা। তারা হরিপদ কে অনুরোধ করে ফেসবুক লাইভে আসতে। হরিপদর সময় নেই বলে এড়িয়ে যায়। লাইভে এলে তো আমার চেহারা তার চোখে পরিষ্কার হয়ে যাবে। মনে মনে ভাবে এড়িয়ে গিয়ে ভালো কাজ করেছে।
মেসেঞ্জারে মেসেজ খুলতে গিয়ে দেখে সারিকা বেশ কয়েকবার তার সাথে চ্যাট করার জন্য মেসেজ পাঠিয়েছে। ইচ্ছে করে হরিপদ এবার উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যায়। এবং সারিকা বুঝতে পারে উনি দেখছেন অথচ উত্তর দেওয়ার মনে করেননি।
এরপর বেশ কিছুদিন কেটে যায়। পিকলু রা কয়েকবার ব্যর্থ চেষ্টা করেও দম ছাড়েনি। প্রতিদিন যেমন আড্ডায় সারিকার কথা চলতো এখনো সেই কথাই চলে। এখন ওরা অতুল বাবুকে তেলিয়ে চলে। প্রথম প্রথম ওদের প্রতি রাগ ধরে রাখলেও পরের দিকে রাগ ভুলে যায় অতুল বাবু। ওরাই জোর করে অতুলবাবুকে নিয়ে ক্লাবের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসায়। নানা রকম কাজের আছিলায় যখন-তখন অতুলবাবুর বাড়িতে গিয়ে হাজির হয়। উঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করে সারিকাকে কোথাও দেখতে পাওয়া যায় কিনা। কখনো কখনো তো দেখতে পেলেই ক্লাবের আড্ডায় গল্পের উপকরণ হয়ে যায়।
এদিকে অতুলবাবুকে যেদিন থেকে প্রেসিডেন্ট করানো হয়। সেদিন থেকে অতুল বাবু এই ছেলেদের প্রতি অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ে। এবার ক্লাবের কোনো অনুষ্ঠান বা কোন কিছুতেই নাতনি ছেলের বউ কে ও নিয়ে আসে। যদিও প্রথম প্রথম আনতে চায়নি। পিকলু রাএত আবদার করল অতুল বাবু না করতে পারল না।
এখন সারিকার সাথে পিকলু রা বেশ ভালো কথা বলে। ওদের সাথে মুখোমুখি হলেই ঠোঁটের কোণে এক টুকরো মিষ্টি হাসি ছুঁড়ে চলে যায়। তাতেই পিকলু রা ফিদা। আর তাতেই পিকলু রা অনেক স্বপ্ন দেখে ফেলে।
অনেকদিন ধরে হরিপদর দেখা নেই বললেই চলে। মাঠের আড্ডায় থাকে না। মধ্য মধ্যে আসে তাও রাত আটটা নটার সময়। ওরা জানতে চাইলে সেই একই কথা "অফিসে প্রচুর কাজ। শুধু খাটিয়ে নিচ্ছে।"
তার কথা শুনে ইন্দ্রজিৎতো বলেই ফেলল।"তোর প্রতি আস্থা ছিল। তুই একমাত্র সারিকাকে পটাতে পারতিস। উপস্থিত বুদ্ধি ছিল।"
কথাটা শুনে পিকলুরা হো হো করে হেসে ফেলল।
ইন্দ্রজিৎ অবাক চোখে তাকায়।
ওরা বলে --হরিপদ যেমন হ্যাবলা কেবলা ও সরে গিয়ে ভালো করেছে। না হলে সারিকার হাতে চড় থাপ্পড় খেতই উপরন্তু তার বাবা ধাক্কা মেরে জেলের গারদে ঢুকাতো।
হরিপদ কোন উত্তর করলো না। শুধু বলল-- ঠিক বলেছিস । সেই জন্য তো আমি এ বিষয় থেকে সরে পড়েছি।
তারপর বেশ কিছুদিন কেটে যায়। ক্লাব এর সরস্বতী পূজার উপলক্ষে একটা বড় ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে একজন নামী ব্যক্তিত্বকে সংবর্ধনা দেয়া হবে। তার জন্য বেশ জাঁকজমকভাবে আয়োজন চলছে। অতুলবাবুর কথায় ক্লাবের প্রায় সদস্য রাজি। রাজি হওয়ার কথাই তো, পিকলুরা যে অতুলবাবুর পক্ষেই আছে!
হঠাৎ ক্লাবের এক প্রবীণসদস্যের কাছ থেকে পাওয়া খবরে পিকলু দের মনটা খারাপ হয়ে গেল। যাকে সংবর্ধনা দেয়া হবে। অতুল বাবু নাকি তাকে নাতজামাই করবেন। সারিকার সাথে নাকি তার প্রেম।
কথাটা শোনার পর পিকলুদের মধ্যে একটা বড় হতাশা কাজ করছিল। স্বাভাবিকভাবে অনুষ্ঠান আয়োজন করার আগ্রহ কমে গিয়েছিল। ওদের কাজ করার আগ্রহ কম দেখতে পেয়ে। সারিকাই ওদেরকে বলে"তোমরা আমার ভালো বন্ধু। অনুষ্ঠানটা ভালো হতে গেলে তোমাদের সাহায্যের প্রয়োজন প্রচুর।যেহেতু তোমরা আমার বন্ধু ।তোমাদের কাছ থেকে গুড অ্যাক্টিভিটি আশা করতেই পারি।
এরকম কথা শুনে পিকলু রা আবার পূর্ণ উদ্যমে কাজ করা শুরু করে।
অনুষ্ঠানের মঞ্চ তৈরি। বহু মানুষের ভিড়। নানা রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছে। ঠিক সেই সময় হরিপদ আসে। ইন্দ্রজিৎ বলে"এই অনুষ্ঠানের দিনে তোর দেখা নেই। আমি এখন ক্লাবে না এসে কত বড় মিস করেছিস জানিস ?
--কি মিস করেছি ?
পাসে পিকলুরা বলে--জানিস ,সারিকার সাথে আমরা ভালোভাবেই কথা বলি। সারিকা আমাদের নেয়ারেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে গেছে।
--সত্যি ! তাহলে আমার সাথে একটু আলাপ করিয়ে দিবি।
পিকলু বলে --আজকে হবে না ।অনুষ্ঠানের পরের দিন হবে।
অমিত বলে--না না ,এর সাথে আলাপ করাস না।কোথায় কি পুরনো কথা বলে আমাদের বন্ধুত্বটাকে কেঁচিয়ে দেবে।
পিকলু বলে-তা ঠিক বলেছিস।
কথাগুলো বলেই অন্যান্য কাজে ছুটে যায় ওরা। মুখটা শুকনো করে মঞ্চের পাশেই একটা চেয়ারে বসে থাকে হরিপদ।
মঞ্চে অতুল বাবু সারিকা ও তার মা মঞ্চপরিচালনার বেশিরভাগ দায়িত্বটাই ওদের হাতে। অতুলবাবুর বৌমা মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বলতে শুরু করে"এইবারে এই মহেন্দ্রক্ষণ উপস্থিত। আমরা সেই ব্যক্তিত্বকে সংবর্ধনা দিতে পেরে আমরা নিজেরাই গর্বিত অনুভব করব। যিনি একদিকে ব্যস্ত ইঞ্জিনিয়ার। অন্যদিকে বড় নামি জনপ্রিয় প্রাবন্ধিক। যার গানের উপর প্রবন্ধ রাজ্যের বহু পুরস্কার এনে দিয়েছে তাকে। সম্মানের মাপকাঠিতে অনেক উচ্চ স্থান করে নিয়েছে। সে আর কেউ নয় এই পাড়ারই ছেলে হরিপদ গায়েন। আমরা তাকে অনুরোধ করছি মঞ্চে এসে আমাদের দেওয়া সংবর্ধনা গ্রহণ করতে। ওকে আনার জন্য যাচ্ছে আমার মেয়ে সারিকা মিত্র।
কথা শুনে পিকলু রা যে যেখানে ছিল হাঁ করে দাঁড়িয়ে রইলো। সারিকা ,হরিপদকে নিয়ে আসে মঞ্চের উপরের। একে একে বড় রজনীগন্ধার মালা হরিপদর গলায় পরিয়ে দেয় ক্লাবের প্রবীণ সদস্যরা।
এরপর হরিপদ কে কিছু বলতে বলা হলে হরিপদ তার বক্তব্যে বলে--আমি এই পাড়ারই ছেলে এটা আমার প্রথম পরিচয় এটাই আমার আসল পরিচয় পিকলু ইন্দ্রজিৎ অমিত এরা আমার বন্ধু। আজকে যে জায়গায় পৌঁচেছি তাও এদের জন্য। তাই এদেরকে আমার জানাই আন্তরিক অনেক কৃতজ্ঞতা। আমার জন্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য সারিকার পরিবারকে অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই।। তারপর সংক্ষিপ্ত ভাষণ দিয়ে মঞ্চ থেকে নামে।
তার সাথে কথা বলতে বলতে নামে সারিকা। ঠিক সেই সময় তাদের কাছে হাজির ইন্দ্রজিৎ রা।
বাজিতো জিতে নিলি। কিন্তু কিভাবে সম্ভব হলো সেটা বলবি?
হরিপদ আর সারিকা দুজন নিজেদের মধ্যে ইশারায় কি একটা ইঙ্গিত করে। তারপর ওদের দিকে তাকিয়ে হরিপদ বলে -ওটা ছিল ভগবানের ম্যাজিক।
পিকলু রা অবাক চোখে তাকিয়ে বলে- ম্যাজিক
সারিকা আর হরিপদো দুজনেই বলে ওটা ছিল ম্যাজিক!
----------------------------------
Chitta Ranjan Giri
C-03 Sreenagar paschimpara panchasayar road
Post -panchasayar
Kolkata 700094
West Bengal India