Click the image to explore all Offers

গল্প।। রেখাপাত ।। প্রদীপ বিশ্বাস


 


     কনকনে ঠান্ডা। হিমেল হাওয়া এলোমেলো বইছে। হাতে লাঠি, পিঠে লাগেজ। আপাদমস্তক শীতপোষাকে ঢাকা। ঝাপসা চোখে কুয়াশা ফুড়ে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা ক'জন। পা টেনে টেনে এগোচ্ছি খুব সাবধানে। একটু বেচাল হলেই কম্ম কাবার। একেবারেই সাবাড়। রা' টি কাড়ার জো থাকবে না আর। বরফের সাদা কফিনে ঢাকা পড়ে যেতে হবে। লাঠি ঠুকে ঠুকে চলেছি। কাঁপুনির অনুভূতিটাও নেই। হিমে অসাড় যেন সারা অঙ্গ।
     সঙ্গী পোর্টার একজন। আসছে পিছে পিছে। একবার তাকালাম তার দিকে। আর এগোন যাবে না। নামতে হবে। সঙ্গীরাও একমত। পোর্টার এবার সামনে। দেখলাম তার গায়ের আবরণ। 'ছালা' জড়ানো তার গায়। এটাই তার শীতবস্ত্র। যাত্রা শুরুর সময় অনেক চেষ্টা করেছিলাম একপ্রস্থ পোষাক তাকে দিতে। নিতে রাজি হয়নি। বারবার বলেছে চুক্তির পয়সাটা দিলেই তার হবে। বেশি জোরাজুরি করিনি। যদি আবার বেঁকে বসে উপরে উঠবে না বলে।
     এই হাড়কাঁপানো শীতেও সে দিব্যি পুষ্ট, তরতাজা। আমরা নাজেহাল হচ্ছি, আর ওর একটুও জড়তা নেই। দিব্যি চলেছে। কেমন করে পারে ওরা!মনটা উদাস হয়ে গেল।
     নেমে এলাম। এবার বাস-যাত্রা। পোর্টারকে কাছে ডাকলাম। অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে একপ্রস্থ শীতের পোষাক তার হাতে জোর করে ধরিয়ে দিলাম। এক অমলিন হাসি ফুটে উঠল তার চোখেমুখে। হলুদাভ দাঁত বের করে হাসল। আকর্ণ নির্মল সে হাসি। অনেক দিন হয়ে গেল, ভুলতে পারিনি আজও।
     অবাক হবার বাকি ছিল আরও। 
     বাস ছেড়ে দিল। পাহাড়ের গা বেয়ে ধীরে ধীরে নামছি। পাহাড়ী দৃশ্য দেখতে দেখতে ঘুম ঘুম ভাব এসেছিল। ঝাকুনি দিয়ে হঠাৎ থেমে গেল বাসটা। চোখ রগড়ে ঘটনাটা বোঝবার চেষ্টা করলাম। ড্রাইভার, খালাসি নেমে গেল। মুখ বাড়িয়ে দেখার চেষ্টা করলাম। হয়তো বা ধ্বস নেমেছে, তাই সাবধানতা।
     সম্বিৎ ফিরল খালাসির কথায়, - আপনারা কে পয়সা না দিয়ে চলে এসেছেন বলুন তো? বাস আটকে দাঁড়িয়ে আছে। টাকা দেখাচ্ছে হাত উঁচিয়ে।
     উঁকি মারলাম। এ কী!এ তো আমাদের সেই পোর্টার! টাকা তো মিটিয়ে দিয়েছি। বরঞ্চ কিছু টাকা বেশি দিয়েছি। তাহলে! 
     নেমে গেলাম আমি। জন(পোর্টার) দু'হাতে ভাগ করে টাকা উঁচু করে ধরেছে। তার ভাষাতে সে যা বলল তার মানে দাঁড়াল বা' হাতে ধরা টাকাটা তার পরিশ্রমের জন্য প্রাপ্য, আর ডান হাতের টাকাটা তার না। ওটা সে নিতে পারবে না। কারণ, ঐ টাকাটা তার প্রাপ্যের থেকে বেশি।
     অনেক বোঝালাম। একপ্রকার জোর করে তার হাতে টাকাটা গুঁজে দিলাম। আবার এলে তাকেই পোর্টার নেব এ কথাও দিলাম। তারপর কিছুটা শান্ত হ'লো সে। চোখে তার জল। 
     বাসটা ছেড়ে দিল। উদাস হয়ে গেল মনটা। গলাটা ভারি হ'লো। কিছুই বলতে পারলাম না আর। হাত নাড়লাম শুধু। ভাবলাম মনে মনে এমন কিছু আজও বিরল নয়। 
 
                                                ------------------------------------------------  

দমদম ক্যান্টনমেন্ট 
কোলকাতা - ৭০০০৬৫

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.