গল্প ।। সময়কথা ।। সোমনাথ মুখার্জী
দাঁড়াও ভাই।এভাবে কেউ কথা বলে!তুমি এত অভদ্র কেন?কীভাবে কথা বলতে হয় জানো না!সানু হেব্বি রেগে গেল।সাধারণতঃ ও এভাবে কথা বলে না।ভদ্র বংশের ছেলে।কথা বলার সময় সময় নেয়।পরিচিত মহলে যথেষ্ট সুনাম।বাজারে লোকে সমীহ করে কথা বলে।তবুও এমন ধরণের ঘটনা ঘটল যার কোনো মাথামন্ডু নেই।যেমন আজ।দরদাম করছিল বাজারে এসে।আচমকা দোকানদার কটু মন্তব্য করল।সানু শুধু বলেছিল,দামটা একটু কমাও ভাই।ব্যাস্ রেগে গিয়ে অশালীন ভাষা ব্যবহার করল।
মুখ ঘুরিয়ে হাঁটা দিল সানু।দোকানদার কিছু বলতে যাচ্ছিল,সময় পেল না।অদ্ভুত ভাবে তাকাল।কেমন লোক রে ভাই!শুধু দুটো কথা বলে চলে গেল!অন্য লোক কত অপমানজনক কথা বলে।বাপ্ রে বাপ্।লকডাউনের পরে আজ বাজার বসেছে।মাথার ঠিক ছিল না।অভাব যে কত কী নষ্ট করে!কোনো দিন এলে দাম কমিয়ে দেবে।দোকানদারের মনে কষ্ট হল।তারপর ভাবল এমন হাস্যকর ভাবনা হয় নাকি!বাস্তবসম্মত ভাবনা ভাবা দরকার।আজ পর্যন্ত কেউ ভেবেছে এভাবে!খুব হাসল মনে মনে।বিক্রিবাটা কম থাকলে কত কী যে ভাবা যায়!পাশ থেকে দুলু বলল,এই,কি ভাবছিস ঝন্টু!রাতে কি মদ বেশি পড়েছে পেটে!ঝন্টু চুপ।কোনো কথা বলল না।দোকানে এখন ক্রেতা।
সানু ওরফে সমীরণ নন্দীর রাগ গিয়ে পরল নিজের ওপর।রাস্তায় বিড়বিড় করতে করতে হাঁটছিল।নিজের মনে কথা বলা সানুর অভ্যাস।অনেকে তাকাল।ভাবল পাগল। অন্যমনস্ক থাকাতে খেয়াল করল না।নিজেকেই বলল রাগে,মানুষ যেন কেমন হয়ে যাচ্ছে!সৌজন্যবোধ বলে কিছু আর রইল না।বাজারহাট,অফিস,সমাজ,সব বেসামাল।যদিও লকডাউনের পরে সব আবার নিউ নরমাল হচ্ছে।তবুও মানুষ তো মানুষই থাকবে,তাই না!কেন এমন হল!বাজারের ব্যাগটা আরো শক্ত করে ধরল।আজ অনেকদিন পর.......।থাক্ ওসব কথা।
সমীরণ নন্দী ওরফে সানু উত্তর খুঁজতে খুঁজতে হাঁটছিল।কোন্ উত্তর কোন্ পদ্ধতিতে যে খোঁজা হয়!মানুষ তো উত্তর খুঁজবেই।আশাহত হল।তবুও,আশপাশের রাস্তাঘাট, বাড়িঘড়, প্রকৃতির দিকে ভরসার চোখে তাকাল।হাতঘড়ি দেখল।বেলা নয়টা।হেমন্তের আকাশে রোদের রংবাহার।সেই রংবাহারী আলোর খেলায় যেন জীবনের আশীর্বাণী ঝরে ঝরে পরছে।উত্তর খুঁজে পেল সমীরণ নন্দী ওরফে সানু।
সমাপ্ত
শ্রী সোমনাথ মুখার্জী