Click the image to explore all Offers

গল্প।। বন্ধু ।। অঞ্জনা দেব রায়





বাড়ির সামনে উঠোন । উঠোনের একপাশে গোলাপ ফুলের বাগান। এছাড়া উঠোনের চারপাশে নিমগাছ , শিউলিগাছ , লেবুগাছ ও পেয়ারাগাছ। বাড়ির ভেতরে একটা পুকুর আছে । পুকুরের চারপাশ গাছ দিয়ে ঘেরা । পুকুরে কুটিদের পাড়ার অনেকে স্নান করতে আসত । কুটিদের বাড়ির সামনে একটি ঠাকুর মন্দির আছে । বাড়ির সামনের বারান্দায় বসে মেন রাস্তা দেখা যায় । মেন রাস্তায় দিন রাত প্রচুর লোকজনের চলাচল তো লেগে থাকেই এছাড়া প্রচুর ভ্যানগাড়ি , টোটোগাড়ী , প্রাইভেট কার ও চলে । মাঝে মাঝে বড় বড় ট্রাক করে বাড়ি তৈরির জন্য বালি ,সিমেন্ট , ইট আসে । কুটিদের বাড়িটা -  অনেকটা জায়গা নিয়ে । কুটিদের পুকুরের কাছে একটি রাস্তা আছে , তার পাশেই  প্রাইমারি স্কুল । এই স্কুলে কুটি ও তার ভাই বোনেরা পড়ত । কুটি স্কুলে যাবার আগে তৈরি হয়ে ওদের বাড়ির সামনের বারান্দায় বসে থাকত । যখনই রাস্তায় হেডমাস্টারমশাই ও বন্ধুদের আসতে দেখত তখন  দৌড়ে  বইয়ের ব্যাগ নিয়ে বন্ধুদের সাথে স্কুলে যেতো । কুটি প্রাইমারি স্কুল থেকে বন্ধুদের সাথে খেলতে খুব ভা্লোবাসত । কুটির অনেক বন্ধু ছিল । কুটিদের পাড়ায় মিলন সঙ্ঘ নামে একটি প্রতিষ্ঠান ছিল । সেখানে কুটি বন্ধুদের সাথে লোকনৃত্য, জিমনাস্টিক , প্যারেট ,ব্রতচারী করত । কুটির বাবা ও ভাই বোন সবাই সেখানে যেতো । বাবা ছিল মিলন সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠানের মেম্বার । সারা বছর কিছু না কিছু অনুষ্ঠান লেগেই থাকত । তবে বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ মাসে রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী অনুষ্ঠানে কবিতা কম্পিটিশন , গান কম্পিটিশন , রচনা প্রতিযোগিতা ও ঋতু রঙ্গের নাচ হত। আবার ছেলেদের ও মেয়েদের আলাদা আলাদা নাটক হত । দুদিন ধরে অনুষ্ঠান হত। শেষ দিনে  পুরষ্কার দেওয়া হত ।খুব আনন্দ হত । কুটিদের পাড়ার সবাই অনুষ্ঠান দেখতে যেত ।
কুটিদের পাড়ার নাম ছিল শ্রীনগর । পাড়ার  ছোট বড় সবার মধ্যে খুব ভাল সম্পর্ক  ছিল । কুটির বাবাকে পাড়ার সবাই খুব সম্মান করত কেননা উনি  একটা হাই স্কুলের টিচার ছিলেন । লেখা পড়ার ব্যাপারে বেশ কড়া ছিলেন। স্কুলে যেমন স্টুডেন্টরা ভয় করত তেমন বাড়িতে কুটিরা ভাই বোন সবাই বাবাকে ভয় পেত। তবে লেখাপড়ার সময় ছাড়া অন্য সময় বাবা খুব ভাল মানুষ । আর মা ছিল সহজ সরল ভালোবাসার মানুষ । সবাইকে মনপ্রাণ দিয়ে সবার ভাললাগার খাবার রান্না করে খাওয়াত । মা ও বাবা  ছিল কুটির কাছে ভগবান ।
কুটি বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে খুব পছন্দ করত । এর জন্য মা ও বাবার কাছে অনেক সময় বকা খেত । ছাত্রজীবনে  কুটির অনেক বন্ধু ছিল । তবে শিবানী নামে তিনজন বন্ধু ছিল। শিবানী সিকদার ছিল প্রাইমারী সেকশনের বন্ধু , শিবানী তালুকদার ছিল পঞ্চম থেকে ক্লাস সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত , আর শিবানী দাস ছিল ক্লাস অষ্টম শ্রেণী থেকে বি.এড পর্যন্ত । এছাড়া জেসিকা , রত্না , পূর্ণিমা, জ্যোৎস্না আর শিবানী দাস ও কুটি  এই ছয়জন ছিল কলেজ জীবনের প্রিয় বন্ধু। ওরা ছয়জন ছিল যেন একপ্রাণ। কিন্তু এক এক করে সবার যখন বিয়ে হয়ে গেল, সবাই তখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল । প্রথম প্রথম সব বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ ছিল । তারপর সংসার জীবনের ও কর্ম জীবনের ব্যস্ততায় যোগাযোগ কম হয়ে গিয়েছিল । কুটি বন্ধুদের এতটাই ভালবাসত যে ওদের সবার ছবি এ্যালবামে সাজিয়ে রেখেছিল। শ্বশুর বাড়ির সবাইকে দেখাত আর নিজে মাঝেমধ্যে এ্যালবাম বের করে ছবিগুলো দেখত আর পুরনো কথা মনে করে খুব হাসত । বিশেষ করে কলেজ থেকে যখন জুওলজি এক্সকারসন এ ৬৫ জন ছাত্রী মিলে দিঘা গিয়েছিলো একসঙ্গে । তার মধ্যে ওরা ছয় প্রিয় বন্ধু একসঙ্গে একই ঘরে থেকেছিল সে একটা আলাদা আনন্দ । সাথে অবশ্য দুজন স্যার ও দুজন ম্যাম ছিলেন আর জুওলজি  ডিপার্টমেন্টের  শুকুদা ও বটানি ডিপার্টমেন্টের  অশোক দা  ছিল। কুটিরা সব বন্ধুরা মিলে যে সব সামুদ্রিক অ্যানিম্যাল সংগ্রহ  করত শুকুদা সেগুলো ফরমালিনের মধ্যে রেখে দিত ।   
সন্ধ্যের পর হোটেলে একসাথে ক্লাস ও সবাই মিলে একসাথে খাওয়া তারপর একটা জলশা হত, জলশায় গান,নাচ কবিতা পাঠ হত। বন্ধুদের সাথে সেই আনন্দের কথা কুটি কোনদিন ভুলতে পারবে না। 
কুটি ভাল গান জানত বলে বিয়ের পর লোকসঙ্গীত শেখার জন্য শ্রদ্ধ্যেয় অমর পালের কাছে গিয়েছিল। মাষ্টার মশাই যখন কুটিকে গান শেখাতে চাইল তখন কুটির খুব আনন্দ হল আর গান শেখা শুরু হল মাষ্টার মশাইয়ের কাছে । সপ্তাহে শনিবার করে ভোর ৬ টার সময় বাড়ি থেকে বেরোতে হত । 
মেট্রো ধরে টালিগঞ্জ , টালিগঞ্জ থেকে রিক্সা করে মাষ্টার মশাইয়ের বাড়ি সকাল ৮ টার মধ্যে পৌছাতে হত । ফিরতে দুপুর দুটো বেজে যেত। এভাবে মাষ্টার মশাইয়ের কাছে গান শেখার পর আকাশবানী-তে গান গাওয়ার সুযোগ হল, এছাড়া অনেক অনুষ্ঠান ও করতে লাগলো কুটি ।মজার কথা হল প্রত্যেক শনিবার যখন কুটি ট্রেন ধরতে যায় তখন একটি ছেলে একই ট্রেনে একই কামরায় ওঠে ।  
প্রত্যেক শনিবার কুটির সাথে ছেলেটির দেখা হয় ও চোখাচোখি হয় ।  কিছুদিন দেখাদেখি চলতে চলতে কথা হল, পরিচয় হল, দুজনের মধ্যে বন্ধুত্বও হল । কুটির স্বামী খুব কম কথা বলে, কাজের থেকে বাড়ি এসে চা খেয়ে গল্পের বই নিয়ে বসে যায় । প্রয়োজন ছাড়া বেশী কথা বলে না । কুটি আবার কথা বলতে ও গল্প করতে খুব ভালবাসে । ফলে নতুন বন্ধুকে পেয়ে মনে মনে খুব খুশি । কেননা নতুন বন্ধু ও কথা বলতে ভালবাসে । ফলে নতুন বন্ধুর সাথে মন খুলে গল্প করে । মাস্টারমশাই মাঝে মধ্যে বাইরে অনুষ্ঠান করতে গেলে সপ্তাহের যে কোন দিনে বাদ যাওয়া ক্লাসগুলি নিয়ে নিত । তখন কুটি বন্ধুকে আগে থেকে জানিয়ে রাখত যাতে সেই দিনগুলোতেও বন্ধুর সাথে দেখা হয় । 
বন্ধু ছেলেটি কুটির কাছে বিশেষ হয়ে উঠেছিল । বন্ধু ছেলেটি গান শুনতে খুব ভালবাসত বলে কুটির সাথে বিভিন্ন ধরনের গান নিয়ে আলোচনা করত আর কুটিকে গানের ব্যাপারে  খুব উৎসাহ দিত ।
কুটির শ্বশুর বাড়ির পাশেই  বিশাল মাঠ আছে । সেই মাঠে প্রতিবছর মাঘ মাসে দশদিন ধরে লোকউৎসব হয় । সেখানে ভারতের প্রতিটি রাজ্য থেকে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান করতে শিল্পীরা আসে। বিভিন্ন ধরনের ফুল ,সবজি প্রদর্শনীও হয় । লোকউৎসবের মাঠের তিনদিকে তিনটি মঞ্চ বানানো  হয় । একটা মঞ্চে গান, কবিতা পাঠ , একটা মঞ্চে শ্রুতিনাটক ,মঞ্চ নাটক ও আর একটি মঞ্চে বিভিন্ন ধরনের নাচ যেমন পুরুলিয়ার ছৌ নৃত্য , আসামের বিহু নাচ ও শেষে যাত্রা হয় । দশদিন কুটিদের খুব আনন্দ হয় । কুটির সবচেয়ে বেশী খুশি থাকত যেদিন  নিজের গানের অনুষ্ঠান থাকত । 
দশদিনের মধ্যে পাঁচ দিন কুটি গান গাইত । কোনদিন আধুনিক, কোনদিন নজরুলগীতি  তবে লোকসংগীতটাই বেশী গাইত। লোকউৎসব অনুষ্ঠানে কুটি এতটাই ব্যাস্ত ছিল যে বন্ধুকে দেখেছিল কিন্তু কথা বলা হয়নি । অবশ্য বন্ধু দূর থেকে হাত দেখিয়ে বাহবা জানিয়েছিল। পরে অবশ্য ফোন করে কুটিকে গানের প্রশংসা করেছিল । 
এদিকে কুটির স্বামী কুটির গানের উন্নতির জন্য  কোলকাতায় একটি ফ্ল্যাট বাড়ি কিনে নিল।  কোলকাতায় এসে কুটি অমর পাল ও আরও দুজন শিক্ষক জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায় এর কাছে আধুনিকগান  এবং পূর্ণদাস বাউলের কাছে বাউল গানের তালিম নিতে লাগল ।আস্তে আস্তে 
কুটি দূরদর্শনেও  গান গাওয়ার সুযোগ পেল। এছাড়া গানের শিক্ষক হিসাবে স্কুলে চাকরিও পেয়ে গেল । কুটি এইভাবে গানের জগতে ব্যস্ত হয়ে উঠলো । কোলকাতায় এসে অবশ্য
কুটির  সংসারে  নতুন অতিথি মানে এক কন্যা সন্তান হল কুটির । গানের জগতে অনেকটা সময়  দিতে হয় বলে মেয়েকে দেখার জন্য একজন লোক রেখেছিল।  আর কুটির স্বামী অফিস থেকে এসে অনেকটা সময় মেয়েকে দেখভাল করত । 
এদিকে কুটি অল ইন্ডিয়া মিউজিক কম্পিটিশনে গান করে আধুনিক ও লোকসঙ্গীতে  প্রথম হয়েছে ।
প্রথম স্থানের পুরস্কার আনার  জন্য ও গান করার জন্য দিল্লি থেকে চিঠি এসেছে । কুটি খবরটা শুনে আনন্দে ওর স্বামী সুদর্শনকে জড়িয়ে ধরল ।  সুদর্শন খুশির খবরটা শুনেই সঙ্গে সঙ্গে দিল্লী যাবার টিকিট করে ফেলল । 
দিল্লীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে গিয়ে খুব ভাল লাগল আর  পুরষ্কার হাতে নিয়ে কুটির মুখে কোন কথা নেই।
দিল্লীতে কুটির গানের খুব প্রশংসা হয় এবং সমস্ত খবরের কাগজে কুটির ছবি ও গানের প্রশংসার কথা ছাপা হয় । এমনকি কোলকাতাতেও  বিভিন্ন মিউজিক সংস্থা  থেকে কুটিকে সংবর্ধনা দেয় ।  এইভাবে  কুটির  চারিদিকে খুব নামডাক হল আর  কুটিকে প্রায়ই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেতে হত  ।  
এইসময় একদিন কুটির  স্বামী সুদর্শনের ভাই এসে হাজির একজন অপরিচিত ব্যক্তিকে  সঙ্গে নিয়ে । সুদর্শনের  ভাই এখনও সেই ছোট্ট শহর হাবড়াতেই থাকে । কুটি ওর স্বামী ও মেয়েকে নিয়ে সময় পেলেই দেশের বাড়ি যায় । পুরনো  সেই শহরের  অনেক কিছুই  বদলে গেছে ।  কিন্তু সুদর্শনের ভাই অচেনা লোক নিয়ে কেন এসেছে কুটি বুঝতে পারে নি । 
এই অচেনা লোকটি হল একটি রাজনৈতিক দলের ছোটখাটো নেতা । মিউনি্সিপ্যালিটি  থেকে কুটিকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে , সুদর্শনের ভাই বলতে চায়, কুটি যেন তাতে সন্মত হয় । হাজার হোক কুটি ওদের শহরের মেয়ে ও বৌ, তাকে পুরসংবর্ধনা  দিতে চায় ওই ছোট্ট শহরের মানুষজন । ওরা গাড়িতে করে নিয়ে যাবে আবার গাড়িতে করে পৌঁছে দেবে। কুটি বলল নিজের শহরে যাবে গাড়ি করে নিয়ে যেতে হবে না । নিজেদের গাড়িতেই চলে যাবে  । আর বাড়িতে অনেকদিন যাওয়া হয় না,এই সুযোগে বাড়িতে দুদিন থেকে আসবে । 
কুটিরা  ঠিক সময়ে পৌঁছে গিয়েছিল সংবর্ধনা  অনুষ্ঠানে । সংবর্ধনা অনুষ্ঠান খুব ভালভাবে শেষ হয়েছে । লোকউৎসবের বড় মাঠেই মঞ্চ তৈরি হয়েছিল সংবর্ধনার জন্য । চেয়ারম্যান, এসডিও , কাউন্সিলাররা সব উপস্থিত হয়েছিলেন । দুজন গানের শিল্পীও ছিলেন বক্তাদের মধ্যে, তাঁরা বললেন  কুটির গানের বিষয়ে । পৌরর্প্রতিনিধিরা  ছোট্ট শহরের গৌরব হিসেবে অভিহিত করলেন কুটিকে । তবে কুটি আশ্চর্য হল মাঠে এত দর্শক সমাগম দেখে  । তার এই ছোট্ট শহরের এত লোক ভালবাসে তাকে ! কুটির নাম শুনে এরা দেখতে এসেছে ! 
যেই কুটি মঞ্চ থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে কুটিকে ঘিরে একটা বেশ বড় ভিড় হয়েছে । কেউ এগিয়ে এসে বলছে আমি মহামায়া, একসঙ্গে ক্লাবে খেলতাম। কেউ বলছে আমি জয়ী এক ক্লাসে এক সেকশনে পড়তাম চিনতে পারছিস ? কুটি অবাক হয়ে শুনছে, দেখছে আর ভাবছে এরা সবাই ওর বন্ধু ছিল । অনেক অল্প বয়সী ছেলে মেয়েরা এসেছে । তারা এগিয়ে দিচ্ছে কুটির দিকে খাতা স্বাক্ষর নেবার জন্য।
কেউ কেউ বলছে দিদি তোমার গানের সি ডি কিনে গান শুনছি আমরা রোজদিন । শুনে কুটির এত ভাল লাগল যে তার নিজের শহরে সবাই তার গান শুনছে ও প্রশংসা করছে । হঠাৎ ভিড়ের  মধ্যে থেকে কুটির চোখ স্থির হয়ে গেল একজনের দিকে তাকিয়ে । কুটি তখন প্রথমে চোখ সরাতে পারলনা। দেখল একটি ছেলে কুটির দিকে চেয়ে আছে । চোখে চশমা পড়া বলে কুটি প্রথমটায় চিনতে পারেনি।  তারপর ছেলেটি এগিয়ে এসে বলল যখন আমারও একটি স্বাক্ষর চাই  ।কুটি এবার খুব কাছ থেকে দেখতে পেয়ে বুঝতে পারল পনেরো বছর আগের সেই ছেলেটি যার সাথে  অমর পালের কাছে গান শিখতে যাওয়ার সময় ট্রেনে আলাপ ও বন্ধুত্ব হয়েছিল । বন্ধু কিছু বলার আগেই কুটি বলল ,"কেমন আছ ? চিনতে পেরেছ  আমাকে ? "  বন্ধু বলল "কেন পারব না ? চেহারার পরিবর্তন হলেও মুখ দেখে চেনা যায়।
এছাড়া তোমার গান আমি রোজই শুনি।  কুটি বলল," বন্ধু তুমি আমাকে মনে রাখবে সেকথা আমি ভাবতে পারিনি । "  কুটির  চারপাশের  ভিড় আস্তে আস্তে কমে গেছে । বন্ধু বলল , "কেন মনে রাখব না ? আমরা কতদিন একসাথে যাতায়াত করেছি একই ট্রেনে ।কত গল্প করেছি,কত গান নিয়ে আলোচনা করেছি । কুটি বলল, তোমার এত সব মনে আছে ! বন্ধু বলল, আমি তো ভেবেছি তুমি ভুলে গেছ।  কুটি তখন বলল , ভুলিনি, সময়ের অভাবে যোগাযোগ করতে পারিনি । 
ঠিক এই সময়ে পৌরপ্রধান  এসে বললেন কুটি চলো , ভিতরে কাউন্সিলাররা ও কয়েকজন গানের শিল্পী তোমার সাথে কথা বলবে বলে অপেক্ষা করে আছেন ।
কুটি বন্ধুর সাথে কথা বলতে বলতে কেমন একটা ঘোরের ভিতর  ছিল । পৌরপ্রধানের কথা শুনে ঘোর কেটে গেলে বলল "আচ্ছা চলুন ।" বন্ধুকে বিদায় জানিয়ে পৌরপ্রধানের  সাথে উৎসব কমিটির অফিসের দিকে এগিয়ে গেল কুটি । 
দুদিন দেশের বাড়ি থাকার পর  কুটি তার স্বামী সুদর্শন ও মেয়ে প্রিয়াকে নিয়ে নিজের গাড়িতে করে রওনা হল কলকাতার দিকে । কুটির কেবল মনে হতে লাগল বন্ধুর কথা । গাড়ি চলছে।  কুটিদের ছোট্ট শহর ছেড়ে গাড়ি  অনেকদূর  চলে এসেছে । দমদম জংশনের  কাছে এসে গাড়িটা আস্তে আস্তে এগোচ্ছে কেননা এখানে একটা জ্যাম হয় । তারপর গাড়ি যত চলতে লাগল তত বন্ধুর কথা মনে পড়তে লাগল । কুটি ভাবতে লাগল এত কথা হল কিন্তু বন্ধুর কাছ থেকে ওর নতুন ফোন নাম্বারটা নেওয়া হোল না , ফলে যোগাযোগ করা যাবে না ।  এই কথাটা কুটি যখন সুদর্শনকে বলল , সুদর্শন তখন হেঁসে বলল  ঠিক আছে আমরাতো দেশের বাড়িতে আবার আসব কোন অনুষ্ঠানে তখন নিশ্চই দেখা হয়ে যাবে আর ফোন নাম্বারও পাওয়া যাবে । সুদর্শন কুটিকে আরও বলল আসল বন্ধু হল যে বিপদের সময় পাশে থাকে আর সব কাজে উৎসাহ দেয় । তোমার এই বন্ধুটিকে ভালো লাগলো ।   কুটি শুনে বলল সত্যি ও আমার খুব ভালো বন্ধু । কুটি ছোট থেকেই একটু বন্ধু পাগল, তাই সমস্ত রাস্তা সুদর্শনের কাঁধে মাথা রেখে বন্ধুদেরৃ স্মৃতিতে ডুবে রইলো । 
  
                              ---------------------- 


লেখিকা - অঞ্জনা দেব রায়
ঠিকানা - ৫৫৩ পি মজুমদার রোড 
কোলকাতা - ৭৮

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.