গল্প।। প্রাপ্তি ।। অদিতি ঘটক
কেসটা সাজাতে গিয়ে বারবার তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে, অথচ হাতে সময় খুব কম। তাড়াতাড়ি এফ. আই. আর. টা তৈরি করতে হবে। পরমার্থর মত দক্ষ উকিলের কাছে যা একেবারে রুটিন ওয়ার্ক। তবুও, এই তবুও খোঁচাটাই ওকে কাবু করে দিচ্ছে। অপরাধ, নিরপরাধ সমস্ত সংজ্ঞা গুলিয়ে যাচ্ছে। কত কঠিন কেসই তো ওর কাছে এসছে এই রকম উভয়সঙ্কটে ওকে কখনো পড়তে হয়েছে কি?
মেয়েটা যেন ওর রাতের স্বপ্নে হানা
দিচ্ছে, করুন মুখে বলছে বলুন,"আমি অপরাধী?" তত পরমার্থর অস্বস্তি
বাড়ছে? কাল পুলিশের কাছে যাওয়ার ডেট। মেয়ের বাপের বাড়ি, ডাক্তার, মেয়ে সবার
বিরুদ্ধে তার মক্কেল অভিযোগ দায়ের করবে।
এই শেষ কথাটা কয়েকটা প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে, না এই শেষ কথাটা নয় এই কেসটাই বেশ কয়েকটা প্রশ্ন তুলছে, চিকিৎসা বিজ্ঞানের যদি অগ্রগতি না হত তাহলে কি আমরা মেনে নিতাম না ! লক ডাউন একটা শিশু হত্যার জন্য কতটা দায়ী ? কারণ মেয়েটি পিতৃগৃহে গিয়ে আর আসতে পারেনি। দু জায়গাতেই পরিস্থিতির বিপাকে সঠিক চিকিৎসাও করাতে পারেনি। বাবাও সময় মত সশরীরে পৌঁছতে পারেনি। ডাক্তার কি পারে শুধু মায়ের ও তার বাপের বাড়ির মতের ভিত্তিতে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে ? যেখানে মায়ের প্রাণ সংশয় নেই ! যে শিশু কয়েক ঘন্টার অতিথি মাত্র তাকে জন্ম দেওয়ার দায় কি মায়ের আছে? বাবার অধিকার কতটা ? একটি ভ্রূণ যা গর্ভাবস্থায় সম্পূর্ণ বিকশিত হয়নি তাকে কি পৃথিবীতে নিয়ে আসা উচিত ? না ভূমিষ্ঠ হওয়ার অধিকার তারও আছে? কোন ত্বত্ত মানা উচিত যোগ্যতমের উত্তরাধিকার না মানবতা?
অ..নে..ক অ--নে..ক জটিল প্রশ্ন যা বার বার পরমার্থকে আয়নার সামনে দাঁড় করাচ্ছে, নিয়ে যাচ্ছে ওর ছায়াছন্ন অতীত সরণিতে।
পরমার্থ 'ল' আর মধুপর্ণা জেনেটিক্স তবুও ওদের মনে বসন্তের রঙ ধরতে কোনো অসুবিধা হয়নি। বহুদিন ওরা হাত ধরাধরি করে গোধূলির হলুদ আলো মাখতে মাখতে কৃষ্ণচূড়া বনের ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে গেছে। নদীর ছলাৎ ছল ওদের বুকেও তুলেছে তরঙ্গের দোলা। কতবার পার্কের গেট কিপারকে ঘুষ দিয়ে বাড়িয়ে নিয়েছে একসঙ্গে থাকার সময়। আরও আরও কত স্মৃতি... সেই মধুপর্ণা, নরম, সরম, মায়া জড়ানো, হাসিখুশি মেয়েটা এত নিষ্ঠুর ! ভাবতেও অবাক লাগে পরমার্থর,
"দাদা, আপনাকে ডাকছে--"
চিন্তা সূত্র ছিঁড়ে যায়। পরমার্থ নীচে নেমে খাবারের বাটি তুলে নেয়। পরম যত্নে আলাভোলা মেয়েটার মুখের লালা মুছিয়ে বলে, "প্রাপ্তি মায়ের আজ আবার বাবির হাতে খাওয়ার সখ।"
সেই কবে মধুপর্ণা খেলার ছলে পরমার্থর সিমেন টেস্ট করে জানায় তার শুক্রাণুর গঠন ত্রুটিপূর্ণ আর এটা জিনগত ত্রুটি । অতি দামি ওষুধ ইনজেকশনেও সরানো সম্ভব নয়। রিপোর্টটা বিয়ের দুদিন আগে হাতে ধরিয়ে মধুপর্ণা হার্ভার্ড চলে যায়। হাইয়ার স্টাডিজ এর জন্য। উপহার স্বরূপ দিয়ে যায় তার ডিম্বাণুর ভল্ট নাম্বার।
'প্রাপ্তি' পরমার্থর সেই ভালোবাসার সন্তান, যাকে সে বুক দিয়ে লালন করছে।
----------------------------------
ছবিঋণ- ইন্টারনেট
অদিতি ঘটক
চুঁচুড়া
হুগলি
প.ব