প্রায় পঁচিশ বছর বাদে ওরা পুরোনো দিনের তিন বান্ধবী মনীষা নন্দী একটি কলেজের অধ্যক্ষা, শতাব্দি গুহ একটি খবরের কাগজের সম্পাদক, কৃষ্ণা সিংহ একজন সফল চিত্রপরিচালক । এবং ওদের সাথে ওদের থেকে বয়সে অনেক ছোট কমন পুরুষ বন্ধু কৃষ্ণেন্দু বসু। সে গ্রিক পুরুষের মত সুন্দর আর জার্মান পুরুষের মতো যৌন আবেদনময়। বিছানায় যার রমনিরঞ্জন ক্ষমতা ম্যাজিকের মতো। তাই জীবনে তিন সফল মহিলা তাকে একান্ত সঙ্গী করেছেন। তাকে নিয়ে প্রত্যেকে ভারতের নানা প্রান্তে ভ্রমণ করেন। তার একটা পার্টটাইম জব কিন্তু এই ধ্বনি মহিলাদের বদান্যতায় রাজার হালে থাকে সে। কলকাতায় একটা নামী হোটেলে পানভোজনে এই চারজন। খুব দামী মদের বোতল, চাট হিসেবে মাছ ভাজা, আপেল, কাজু ভাজা, খাসির মেটে দিয়ে ঘুগনি । মাসের মধ্যে দু তিনবার এমন ঘটে। ঘরে প্রবেশ করলেন রিটায়ার্ড পুলিশ সুপার অরিন্দম রায় আর তার উকিল বউ রীনা। বোঝা যায় তাদের অবারিত দ্বার এই দলে। আড্ডা জমে উঠলো সন্ধ্যা সবে সাতটা। সমাজের সফল কিছু মানুষের আলোচনা সবসময়ই রসেবসে আহ্লাদীত। মদ্যপান শুরু হলো। শতাব্দী, মনীষার পিঠ চাপড়ে বললেন একটু সামলে বেবি। অরিন্দম টোন কাটলেন বেবি নয়গো, ও লেডি বরং বলো লেডিকেনি। বলেই চকাম করে মনীষার গালে চুমু খেলেন।স্ত্রী রিনা চার পাঁচ পেগ শেষ করে ব্যাপারটা লক্ষ্য করলেন না।
হাই সোসাইটিতে পর স্ত্রীকে চুমু খেতে গোপনতার প্রয়োজন নেই, ওটা মধ্যবিত্তর সমস্যা। মনীষা যথেষ্ট নেশাগ্রস্ত। বললেন আর প্রিন্সিপালের জব ভালো লাগছেনা। এবার একটা ইউনিভার্সিটি তে ভি সি হতে চাই। শতাব্দি তুমি একটু কলকাঠি নাড়াও না! তোমার যা খরচ আমি অ্যাফোরর্ড করব। কথা বলতে বলতে চার মহিলাই পালা করে কৃষ্ণেন্দু কে চুমু খাচ্ছেন, চটকাচ্ছেন, খিমচাচ্ছেন। কৃষ্ণা হঠাৎ কৃষ্ণেন্দুকে ছেড়ে অরিন্দম কে জড়িয়ে ধরলেন, অরিন্দম প্লিজ তুমি কিছু করো। তোমার কানেকশন দিয়ে দু-একজন টাকার কুমির প্রযোজক জোগাড় করে দাও। অরিন্দম কৃষ্ণার চুম্বনরত মুখটা আলতো করে সরিয়ে বললেন সে আমি পারি। ক্রিমিনাল ওয়ার্ল্ডে আমার যে কানেকশন দু চার কোটি টাকার ব্যবস্থা হয়ে যাবে। কিন্তু তোমাকে পরিচয় করিয়ে দিতে পারি তবে কেবল তোমার রূপ নয় রূপোও দিতে হবে। আমি যা জোগাড় করে দেব তার টেনপার্সেন্ট কমিশন আর তুমি আমার সাথে সাতদিনের জন্য গোয়ায় যাবে । কৃষ্ণা হেসে তাকে জড়িয়ে ধরে বললেন ডান , ডার্লিং । কিন্তু তখন তোমার বউ রিনার কি হবে?
রিনা হাসতে হাসতে বললেন তখন কৃষ্ণেন্দু আছে তো ভাই। আমার কোনো অসুবিধা কোন আপত্তি নাই।
মনীষার কথা জড়িয়ে যাচ্ছে, পা টলছে সেই অবস্থায় বললেন আর আমার সখ মিটবে না। শতাব্দী তোমার কাগজে আমি দশ লাখ টাকা ডোনেশন দেব। ভি সি আমাকে হতেই হবে। আমার জন্য কিছু করো।
শতাব্দী হাসলেন, কৃষ্ণেন্দু কে ছেড়ে মনীষাকে জড়িয়ে ধরে আচমকা চুমু খেতে শুরু করলেন। একটু পরে বললেন ঠিক আছে আমি এম পি সাগরদা আর এমএলএ জংলাদা কে ধরবো। তুমি কোনভাবে সাগর আর জঙ্গল পার হতে পারলে ভিসির চেয়ারের অনেক কাছে পৌঁছতে পারবে।
রিনা বললেন আমরা কিভাবে টাকা ছড়িয়ে,হেসে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে সব সম্মান সব টপ পোস্ট, সব সুখ কেড়ে নিই তাই না ? এই প্রথম কৃষ্ণেন্দু কিছু বলার জন্য তৈরি হলো। সে বয়সে সবচেয়ে ছোট আবার সবচেয়ে কম নেশা করেছে। সে বলল কোন রাজনৈতিক ক্ষমতায় না গিয়েও গোটা রাজ্য গোটা বাজার আপনাদের হাতের মুঠোয়। আপনাদের বুদ্ধি মেধা হাসি, শরীর ,টাকা এগুলো আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের মতো। আপনাদের ইচ্ছে হওয়াই শেষ কথা। অরিন্দম সিগারেট ধরালেন সাথে সাথে অন্যরাও। ঘড়ির কাঁটা দশটা ছুঁই ছুঁই । শতাব্দী বললেন নেক্সট প্রোগ্রামে আমি সাগরদা জংলাদাকে থেকে ইনভাইট করব । অরিন্দম বললেন আমি ইনভাইট করবো এক আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন কে দু-চার কোটি তার কাছে হাতের ময়লা । ঐদিন একটু বড় আয়োজন করবে মনীষা মাটন চিলি চিকেন, প্রন কাটলেট এগুলো রেখে।
মনীষা বললেন নিশ্চয়ই। তাহলে বন্ধুগণ আজকের মিটিং এখানেই শেষ। সবাই একে অন্যের পিঠ চাপড়ানো হাসলেন মৃদু আলিঙ্গন করলেন। রিনা শেষ কথাটা বললেন, behind every fortune there is a crime.
--------------------------
আশিস ভট্টাচার্য্য
রামকানাই গোস্বামী রোড,
শান্তিপুর, নদীয়া ,