Click the image to explore all Offers

গল্প ।। পাঁচ কাহন ।। অনিন্দ্য পাল


 
বৃষ্টিটা আবার শুরু হয়েছে। টিপ টিপ করে ঝরেই যাচ্ছে। দিনো মোটর সাইকেল থামিয়ে বিরক্ত মুখে রাস্তার পাশের মুদিখানাটার টিনের ছাউনির নীচে গিয়ে দাঁড়ালো। মনে মনে আকাশটাকে গালাগাল দিচ্ছিল দিনো, 'মহা হতচ্ছাড়া আকাশ, কেন - আর দুটো মিনিট আগের মত থাকতে পারলি না। এসেই তো গেছিলাম প্রায় -- তবু বাড়ি যেতেই দিলি না! মহা হারামী!' 
কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঝমঝম করে নেমে গেল বৃষ্টিটা। দোকানদার রমেশের সঙ্গে দু-চার কথা হচ্ছিলো দিনোর। বাধ্য হয়েই কথা বলছিল দিনো। এই সব বিহারি গুলোকে একেবারে সহ্য করতে পারে না ও। এত বছর এরা এখানে, এই বাংলায় পড়ে রয়েছে অথচ বাংলা ভাষাটাই ঠিক করে বলতে পারে না। বাংলাটা শেখার বা ভালো করে বলার চেষ্টাটাও নেই। ঠিক এই মুহুর্তে দিনোর মনে হচ্ছে রমেশের ঘেঁটিটা ধরে একটু নেড়ে দেয়। কারণটা আর কিছুই নয়, প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক পাশের পাড়ার বিজনদা, তার মতই এসে দাঁড়িয়েছে ওই চালার নীচে। রমেশ বিজনদাকে দেখে একটু ওরাংওটাং এর মত হেসে বললো, "ম্যাস্টর মশয় আপনেকে ও দিন যে চাবলটা দিয়েছিলম না, ওটা আচ্ছা ছিল তো, কুনো পবলেন হয় নি তো?" মাথাটা গরম হয়ে যায় দিনোর। "বাঙালির কোন সম্মান নেই শ্লা!" 
দিনো একটা দুটো কথা বলছিলো, রমেশ বা বিজন কারোর সঙ্গেই কথা বলতে ইচ্ছা করছিল না তার। বিজনটাকেও একটা গাড়োল মনে হচ্ছিলো তার, একটা প্রতিবাদ তো করতে পারতো বিজনটা? 
        বৃষ্টিটা আরো জোরে এল। এই বেলা এগারোটার সময় আকাশটা একেবারে সন্ধ্যার মত হয়ে গেছে, একেবারে কালো করে এসেছে। মহা বিরক্তিকর। ব্যাজার মুখ করে দাঁড়িয়ে মনে মনে এবার নিজেকেই কাঁচা খিস্তি দিচ্ছিল। ঠিক তখনই একটা দৃশ্য দেখে খুব অবাক হয়ে গেল দিনো। এই দুর্যোগের মধ্যে একটা বড় কালো ছাতা ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে দোকানের দিকে! 
  আরে দিনো যে? তাকে দেখেই উজ্জ্বল হয়ে উঠলো বাসবের মুখ। দিনো হাসতে চেয়েও হাসতে পারে না। এ কি বিপদ! গতবছর এক কলিগের মেয়ের অন্নপ্রাশনে দেবার জন্য বাসবের কাছ থেকে একটা আংটি করিয়েছিল, কিন্তু তাতে সোনার পরিমাণ এতটাই কম ছিল যে খানিকটা সস্তার ইমিটেশন এর মতই লাগছিল। মেয়ের ঠাকুমা আংটিটা হাতে নিয়ে এমন একটা তির্যক হাসি দিয়েছিলেন দিনোর সেই অন্নপ্রাশনে খাওয়ার ইচ্ছাটাই বেমালুম ভ্যানিশ হয়ে গেছিল। কোন মতে নাকে মুখে গুঁজে বেরিয়ে এসেছিল সেখান থেকে। 
বাসবকে আংটির দরুণ বাকি যে টাকাটা দিতে হত, সেটার পুরোটা দেয়নি দিনো। এখনও কিছু টাকা পায় বাসব। অনেকবার চেয়ে হতোদ্যম হয়ে গেছে বাসব, ইদানিং আর চায় না। 
'একটা মোমবাতি দাও তো রমেশ'- বাসব দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে রমেশের উদ্দেশ্যে বলে। দিনো একটা চোরা টেনশনে ওর দিকে পিছন করে দাঁড়িয়ে সামনের  জমা জলে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ার আওয়াজ শুনতে থাকে। 
--বাতিটা ভালো হবে তো রে? জ্বলবে তো, না কি ফটফট করে আওয়াজ দিয়ে নিভে যাবে? 
একটা খ্যাক খ্যাকে হাসি দিয়ে চুপ করে গেল বাসব। 
বাসবে কথা শেষ না হতেই রমেশ শুরু করলো, 
-- না, উ সব জিনিস এ দুকানে পাবেন না, ইত্ত বছর ... 
ওকে বলতে না দিয়ে বাসব এবার বিরক্ত হয়ে বললো, 
--আচ্ছা থাক থাক! ওই এক গান আর বাজাসনি! ক পয়সা দিতে হবে বল? 
-- পান্ চ্ টাকা দিবেন। 
পিছন ফিরে থাকলেও বাসব বুঝতে পারলো, বাসব পকেট হাতড়াচ্ছে। বেশ কয়েক মিনিট পর হতাশার সুরে বললো, 
-- নাহ্, পয়সা আনতেই ভুলে গেছি একেবারে! 
দিনো পিছন ফিরেই একটু মুচকি হাসলো। হাঃ! লাখোপতি লোক! পাঁচটা টাকা বের করতে ফেটে যায় একেবারে! বাবা! ব্যবসাদার বলে কথা! 
-- ও দিনো ভাই -- তোমার কাছে পাঁচটা টাকা হবে? দেখোনা তাড়াহুড়োতে টাকাটাই আনতে ভুলে গেছি। 
বাসবের ডাকে দিনোর বুকটা ধক্ করে উঠলো। কালমেঘ গেলার মত মুখ করে পকেট হাতড়ে পাঁচ টাকার একটা কয়েন বের করে বাসবের দিল। টাকাটা হাতে দিয়ে বাসবের মুখের দিকে চোখ পড়তেই দিনো অবাক হয়ে দেখলো, একটা অদ্ভুত তেরছা হাসি লেগে আছে বাসবের মুখে। 
কালো ছাতাটা মিলিয়ে যেতে, রমেশ হা হা করে হেসে ওঠে। তারপর একটু মজা করে বলে, 
-- কি দিনো বাবু! পাঁনচ টাকা লুঠ করে নিয়ে গেল তো আপনার জাতভাই? 
হতভম্ব দিনো রমেশের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো, হঠাৎ মনে হল, রমেশের মুখটা যেন ঠিক বাড়ির পোষা বেড়ালটার মত হয়ে যাচ্ছে। 

=============================== 
 
 
ঠিকানা*
======
অনিন্দ্য পাল 
প্রজত্নে -- বিশ্বনাথ পাল 
গ্রাম -- জাফরপুর 
পোঃ-- চম্পাহাটিি 
পিন - ৭৪৩৩৩০
থানা -- সোনারপুর 
জেলা -- দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা 
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত 


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.